তিন সন্তান নিয়ে মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে বুদ্ধিজীবি কবরস্থানে এসেছেন আনিসুর রহমান। তিনি বলেন, সন্তানদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতেই এখানে এসেছি। যারা দেশের জন্য জীবন দিয়েছে সবাইকে তারা যেন জানতে পারে। আমার মনে হয় কারোর মধ্যে দেশপ্রেমের ঘাটতি নেই। এখন যারা এসেছেন তারা কিছু পাওয়ায় আসায় আসেননি। ৫ আগস্টের আগে অনেক ব্যানার দেখেছি এবার তা দেখছি না।
আনিসুর রহমানের মতো জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, বিভিন্ন সংগঠন, স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ।
রোববার (১৪ ডিসেম্বর) প্রথম প্রহরেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে বিভিন্ন দল ও সংগঠনের ব্যানারে শ্রদ্ধা নিবেদন শুরু হয়। সকাল থেকেই বাড়তে থাকে মানুষের ঢল। তবে সরেজমিনে সকালে রায়েরবাজারে রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীদের চেয়ে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের উপস্থিতি বেশি দেখা গেছে। তবে সেভাবে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের শোডাউন নেই।
এর আগে, রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের শোডাউনে বিভিন্ন দলের ব্যানারে মিছিল সহকারে নেতাকর্মীরা আসতেন। কিন্তু সেই চিত্র এবার নেই। এবার সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বেশি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে হল, ঢাকা কমার্স কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রায়েরবাজারে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসা মোহাম্মদপুর সরকারি শারীরিক শিক্ষা কলেজের শিক্ষার্থী রাব্বি হোসেন বলেন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীরা রাজাকার ও আল-বদর বাহিনীর সহযোগিতায় আমাদের সূর্যসন্তানদের হত্যা করেছে। আমরা তাদের স্মরণে এখানে ফুল দিতে এসেছি।
ঢাকা কমার্স কলেজের শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান বলেন, এ জাতি কখনোই রাজাকার, আল-বদর, আল শামসদের ক্ষমা করবে না। তাদের কারণে বহু শিক্ষক, সাংবাদিক, কথাসাহিত্যিক হত্যা করেছিল পাকিস্তানিরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবির হোসেন বলেন, ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে এসে পাকিস্তানি বাহিনী বুঝতে পারে তাদের পক্ষে যুদ্ধে জেতা সম্ভব না। তখন তারা সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও শিক্ষাগত দিক থেকে দেশকে অঙ্কুরেই দুর্বল করে দিতে এক হত্যাযজ্ঞের পরিকল্পনা করে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৪ ডিসেম্বর রাতে পাকিস্তানি বাহিনী তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার, আল-বদর বাহিনীর সহায়তায় দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের তাদের বাসা থেকে তুলে এনে নির্মম নির্যাতনের পর হত্যা করে।
এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, বাংলাদেশ যতদিন থাকবে, এ জাতি তাদের সূর্যসন্তানের ততদিন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। আমি মনে করি, বাংলাদেশের প্রত্যেকটা মানুষের মনে প্রাণে একাত্তর ধারণ করা উচিত।
এদিকে রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী বধ্যভূমি-স্মৃতিসৌধে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশসহ র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) রয়েছে নিরাপত্তার দায়িত্বে। গেটে আর্চওয়ের মাধ্যমে প্রবেশ করতে হচ্ছে সবাইকে। এছাড়া রায়েরবাজার স্মৃতিসৌধের পুরো এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে।
সরকারি লালমাটিয়া হাউজিং সোসাইটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রায়েরবাজারে এসেছে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে।
শিক্ষক হাফিজুর রহমান, আমরা প্রতিবছর এখানে আসি। জাতির সূর্য সন্তানদের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের অবগত করি। তবে এবার রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের পদাচরণ কম দেখছি। চারিদিকে শিক্ষার্থীই বেশি।
মিরপুর-৬০ ফিট থেকে স্বপরিবারে রায়েরবাজারে এসেছেন আরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমি প্রতিবছর এখানে আসি। তাদের জন্য দেশ পেয়েছি। সবার উচিত বীরদের স্মরণ করা। কিন্তু এবার খেয়াল করলাম সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থী বেশি। তার মানে, আগে যারা ব্যানার নিয়ে আসতো তারা বুদ্ধিজীবিদের ভালোবেসে এখানে আসেনি। তারা এসেছিল নিজের আখের গোছাতে।
এমওএস/এএমএ/জেআইএম