আফ্রিকার দেশ সুদানের সন্ত্রাসীদের ড্রোন হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ছয়জন শান্তিরক্ষী শহীদ হয়েছেন। শহীদের এই তালিকায় রয়েছেন কুড়িগ্রামের দুই তরুণ সেনাসদস্য- মো. মমিনুল ইসলাম(৩৮) ও সৈনিক শান্ত মণ্ডল (২৬)।
নিহত শান্ত মণ্ডল কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার ছাট মাধাই গ্রামের মণ্ডলপাড়ার বাসিন্দা। তিনি সাবেক সেনাসদস্য নুর ইসলাম মণ্ডল ও সাহেরা বেগমের ছোট ছেলে। তার বড় ভাই সোহাগ মণ্ডলও বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত রয়েছেন। অপরদিকে, নিহত আরেক সেনাসদস্য মমিনুল ইসলামের বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার উত্তর পান্ডুল গ্রামে। বিশ্ব শান্তির জন্য গর্বের সঙ্গে জীবন দেওয়া এই দুই সৈনিকের এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
এর আগে গতকাল শনিবার সুদানের স্থানীয় সময় দুপুর ৩টা ৪০ মিনিটে সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের কাদুগলি লজিস্টিক বেসে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠীর ড্রোন হামলায় ছয়জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত হন।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, হামলায় নিহতদের মধ্যে কুড়িগ্রামের দুই সেনাসদস্য ছাড়াও রয়েছেন নাটোর, রাজবাড়ী, কিশোরগঞ্জ ও গাইবান্ধার বাসিন্দা।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, শান্ত মণ্ডল ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে যোগদান করেন। অন্যদিকে সৈনিক মো. মমিনুল ইসলাম ১৮ বছর আগে সৈনিক পদে সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। এ বছর নভেম্বর মাসের ৫ তারিখে তারা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সুদানে যান। সেখানে দায়িত্ব পালনকালে বিদ্রোহীদের বোমা হামলায় নিহত হন।
সরেজমিনে রোববার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজারহাট উপজেলার ছাট মাধাই গ্রামের মণ্ডলপাড়া ও উলিপুর উপজেলার উত্তর পান্ডুল গ্রামে গিয়ে দেখা শোকের মাতম চলছে। নিহত শান্ত মণ্ডলের স্ত্রী দিলরুবা খন্দকার বৃষ্টি ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। স্বামীর অকাল মৃত্যুতে তিনি বারবার জ্ঞান হারাচ্ছিলেন।
দিলরুবা খন্দকার বৃষ্টি বলেন, সে (শান্ত) আমাকে ছেড়ে যেতে পারে না। সে আমাকে কথা দিয়েছিল দ্রুত ফিরে আসবে। শান্ত আমার কথা ফেলতে পারে না। আমার শান্তকে এনে দাও বলে সে মূর্ছা যায়।
শাস্তর বড় ভাই সোহাগ মণ্ডল বলেন, গতকাল (শনিবার) বিকেলেও তার (শান্ত) সঙ্গে ভিডিও কলে কথা হয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। রাত সাড়ে দশটার দিকে প্রতিবেশীর মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারি। একই এলাকার আরো দুজন সুদানে মিশনে আছে। পরে তাদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত হই আমার ভাই মারা গেছে।
মমিনুল ইসলামের মা মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘ছয় মাস থাকি ছাওয়া মোর বিদেশ যাওয়ার জন্য টেইনিক (প্রশিক্ষণ) করিল। পরে অক্টোবর মাসে ২০ দিনের ছুটিতে আসি সগার কাছত দোয়া নিল। নভেম্বর মাসে যাওয়ার সময় আমায় জড়ায় ধরে বলে মা কান্না করো না। আমি খুব তাড়াতাড়ি ফিরে আসমো’।
তিনি আরও বলেন, ‘শনিবার সকালে বাপ মোর ভিডিও কল দিয়ে এলাকার সগারে (সবার) সঙ্গে কথা কইছে। সকালে মোর বাপ নাস্তা খায়া গেছে, কিন্তু মোর বাপটাক বোম ফেলে দিয়ে মারি ফেলাইছে। মোর বাপটা কারো ক্ষতি করে নাই, তাও কেন ওরা মোর বাপক মারি ফেলাইলো?
রোকনুজ্জামান মানু/কেএইচকে/এএসএম