রোগী দেখার সময় এক চিকিৎসকের মোবাইলে গেম খেলার ঘটনায় কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এসময় তার দেরিতে কর্মস্থলে আসাসহ জালিয়াতির প্রমাণ মিলেছে।
রোববার (১৪ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে দুদক কুষ্টিয়া সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক বিজন কুমার রায়ের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি টিম এই অভিযান চালায়।
প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী এই অভিযানে নথিপত্র পর্যালোচনা করে সামরিন সুলতানা নামের ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে সহকারী পরিচালকের সই জাল করে ছুটি নিয়ে কর্মস্থলে অনুপস্থিত, যোগদানের পর থেকে ছুটি ছাড়াই ১৭ দিন অনুপস্থিত ও বিলম্বিত সময়ে উপস্থিত থাকার প্রমাণ পেয়েছে দুদক। এছাড়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক ও সেবিকাদের নির্ধারিত সময়ের পরে কর্মস্থলে উপস্থিত হওয়ার বিষয়টিও নজরে এসেছে।
এর আগে মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগের ১১৯ নম্বর কক্ষে মেডিকেল অফিসার শামরিন সুলতানা রোগী দেখার সময় প্রেসক্রিপশন ও একইসঙ্গে মোবাইলে গেম খেলার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
১ মিনিট ৪ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, চিকিৎসা নিতে আসা একজন জিজ্ঞেস করছেন, আপনি গেম খেলছেন? উত্তরে ওই চিকিৎসক বলেন, ‘সমস্যা কী? আমি গেমও খেলছি আপনার রোগীও দেখছি।’
এ ঘটনায় জেলাজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। তবে ওই চিকিৎসক দাবি করেন, কোনো রোগী না থাকায় মোবাইলফোন হাতে নিয়েছিলেন তিনি।
দুদক কুষ্টিয়া সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক বিজন কুমার রায় বলেন, সম্প্রতি সামরিন সুলতানা নামের এক চিকিৎসকের রোগী দেখার সময় গেম খেলার সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার হয়। দুদক প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশনায় আজ এ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।
বিজন কুমার বলেন, ‘সব বিষয়ে খতিয়ে দেখে সামরিন সুলতানার বিরুদ্ধে সহকারী পরিচালকের সই জাল করে ছুটি নিয়ে অনুপস্থিত, যোগদানের পর থেকে ছুটি ব্যতীত ১৭ দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকা, সকাল সাড়ে ৮টা থেকে কর্মস্থলে আসার নির্ধারিত সময় থাকলেও গড়ে পৌনে ১০টায় কর্মস্থলে আসার প্রমাণ মিলেছে। এছাড়া মোবাইল গেম খেলার ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দেওয়া দুই কার্যদিবসের মধ্যে শোকজের জবাব দিতে বলা হলেও তিনি জবাব দেননি। বিষয়গুলো পরিচালককে জানানো হয়েছে। আজকের রিপোর্ট যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।’
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. সোনিয়া বলেন, ‘আমি আজ বিষয়টি অবগত হয়েছি যে, শামরিন সুলতানার ছুটির আবেদনপত্রে আমার সই রয়েছে। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. আনোয়ারুল কবির বলেন, ‘ওই চিকিৎসককে শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। দুই কার্যদিবসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হলেও দেননি। এছাড়া প্রত্যেককে সতর্ক করেছি যথাসময়ে কর্মস্থলে উপস্থিত থাকার জন্য।’
এ বিষয়ে জানতে ডা. শামরিন সুলতানার চেম্বারে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া গেছে।
আল-মামুন সাগর/এসআর/এএসএম