অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সমুদ্র সৈকতে ভয়াবহ বন্দুক হামলার ঘটনায় হামলাকারীর পরিচয় ভুলভাবে ছড়ানো হয়েছে। একজন নিরীহ ব্যক্তিকে হামলাকারী হিসেবে চিহ্নিত করায় আতঙ্ক ও মানসিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন ওই সিডনিবাসী। ভুল তথ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার ছবি ও নাম ছড়িয়ে পড়ার পর তিনি নিজেকে ‘ভীতসন্ত্রস্ত’ বলে বর্ণনা করেছেন।
রোববার (১৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে পরিচিত সমুদ্র সৈকত বন্ডাই বিচে ইহুদি সম্প্রদায়ের একটি উৎসবকে লক্ষ্য করে গুলি চালান বাবা ও ছেলে। এতে কমপক্ষে ১৫ জন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে একজন শিশুও রয়েছে। আহত হন আরও অন্তত ৪২ জন।
অস্ট্রেলীয় কর্তৃপক্ষ এটিকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। হামলাকারী দুজনের একজন ঘটনাস্থলেই নিহত হন, অন্যজন বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তবে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে হামলাকারীদের নাম প্রকাশ করা হয়নি।
এমন পরিস্থিতিতে অস্ট্রেলিয়ার রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম এবিসি এক অজ্ঞাত কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানায়, হামলাকারীদের একজন পশ্চিম সিডনির বনি’রিগ এলাকার বাসিন্দা নাভিদ আকরাম। একই সঙ্গে স্থানীয় কয়েকটি গণমাধ্যম পুলিশ ওই ব্যক্তির বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে বলেও প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
এরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সবুজ পাকিস্তান ক্রিকেট দলের জার্সি পরা এক হাস্যোজ্জ্বল ব্যক্তির ছবি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। হাজার হাজারবার শেয়ার হওয়া এসব পোস্টে দেখা যায়, ওই ব্যক্তিকে ঘিরে ব্যাপক কটূক্তি ও ঘৃণামূলক মন্তব্য করা হচ্ছে।
কিন্তু পরে জানা যায়, ছবিটি অন্য একজন নাভিদ আক্রমের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে নেওয়া, যিনি এই ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নন। সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) সিডনিতে পাকিস্তান কনস্যুলেট প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় ওই নাভিদ আক্রম ভুল তথ্য ছড়ানো বন্ধ করার আহ্বান জানান।
ভিডিওতে তিনি বলেন, গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে হামলাকারীদের একজনের নাম নাভিদ আকরাম। আমার নামও নাভিদ আকরাম। কিন্তু আমি হামলাকারী নই। এই ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। একই সঙ্গে তিনি বন্ডাই বিচে সংঘটিত ‘ভয়াবহ’ হামলার নিন্দা জানান।
তিনি বলেন, আমি সবাইকে অনুরোধ করছি, এই প্রোপাগান্ডা বন্ধ করতে আমাকে সাহায্য করুন। ২০১৯ সালে নিজের ফেসবুক পোস্টে দেওয়া ছবি অপব্যবহার করা অ্যাকাউন্টগুলো রিপোর্ট করারও আহ্বান জানান তিনি।
৩০ বছর বয়সী এই নাভিদ আকরাম ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে ফোনে জানান, রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে তিনি প্রথম জানতে পারেন যে ভুলভাবে তাকে হামলাকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, গত রাতে আমি একদম ঘুমাতে পারিনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাওয়া ‘ভয়ংকর’ সব বার্তা মুছে ফেলতে হয়েছে বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, আমি ভীষণ আতঙ্কিত। বাইরে বের হতে পারছি না। এটা জীবন-মৃত্যুর বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি কোনো ঝুঁকি নিতে চাই না। আমার পরিবারও ভীষণ দুশ্চিন্তায় রয়েছে, আমাদের জন্য সময়টা খুব কঠিন।
এই পরিস্থিতিতে তিনি পাকিস্তান কনস্যুলেটের সহায়তা চান, কারণ পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে থাকা তার স্বজনদের কাছেও ফোন আসতে শুরু করে। তিনি বলেন, এটা আমার ভাবমূর্তি ও আমার পরিবারের ভাবমূর্তি ধ্বংস করে দিচ্ছিল। তার ভাষ্য অনুযায়ী, আত্মীয়দের কাছে ফোন আসায় তারা উদ্বিগ্ন হয়ে স্থানীয় পুলিশকেও বিষয়টি জানিয়েছেন।
পাকিস্তানের নাগরিক নাভিদ আকরাম ২০১৮ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য অস্ট্রেলিয়ায় আসেন। তিনি সেন্ট্রাল কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেন ও পরে সিডনির হোমস ইনস্টিটিউট থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি গাড়ি ভাড়া দেওয়ার ব্যবসা পরিচালনা করছেন।
অস্ট্রেলিয়াকে ‘নিখুঁত দেশ’ হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, আমি এই দেশকে ভালোবাসি। এখানে কখনো কোনো নিরাপত্তা সমস্যায় পড়িনি। মানুষ খুব ভালো, সবাই খুব ভদ্র। তবে এই একটি ঘটনা আমাকে চরম মানসিক আঘাত দিয়েছে।
সূত্র: এএফপি
এসএএইচ