রাজনীতি

অধিকার প্রতিষ্ঠার নির্বাচনের মিছিলে আমিও আপনাদের সঙ্গে থাকবো

আসন্ন নির্বাচনের প্রচারে অংশ নেওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার এই নির্বাচনের মিছিলে আমিও আপনাদের সঙ্গে থাকবো ইনশাআল্লাহ।’

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। সভার শুরুতে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আশু আরোগ্য কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

তারেক রহমান বলেন, ‘আমি বিজয় দিবসের এই গৌরবজনক সময়ে দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, যারা স্বাধীনতাপ্রিয়, গণতন্ত্রকামী জনগণকে ভয় দেখাতে চায় তারা অবশ্যই ব্যর্থ হবে। ভয়ের কোনো কারণ নেই। মানুষের জয়-পরাজয়, জীবন-মৃত্যু সবকিছু আল্লাহর হাতে নির্ধারিত। সুতরাং আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে আমরা সবাই যদি ঐক্যবদ্ধভাবে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার মিছিল এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকি, ষড়যন্ত্রকারী অবশ্যই পিছু হটতে বাধ্য হবে।’

‘১৯৭১, ২০২৪, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর, ১৯৯০ সালের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন- প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে প্রমাণিত হয়েছে, জনগণ ঐক্যবদ্ধ থাকলে বিজয় কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারে না। আমি দৃঢ় কণ্ঠে বলতে চাই, নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন ইনশাআল্লাহ অনুষ্ঠিত হবে,’ যোগ করেন তিনি।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘আসন্ন জাতীয় নির্বাচন কেবল পরীক্ষা বা অভিজ্ঞতা অর্জনের নির্বাচন নয়। এটি অতীতের যেকোনো নির্বাচনের চেয়ে জটিল এবং গুরুত্বপূর্ণ। এর সঙ্গে জড়িত আছে বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বাদ, আশা, আকাঙ্ক্ষা, স্বার্থ ও সম্ভাবনা। সর্বোপরি জড়িত আছে বাংলাদেশের স্বার্থ এবং সার্বভৌমত্বকে সুসংহত রাখার প্রশ্ন।’

রূপান্তরের দশকতারেক রহমান বলেন, ‘আগামী দশকটি হবে রূপান্তরের দশক। এই চিন্তা নিয়ে আমরা দেশ গড়ার কর্মসূচি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা তৈরি করেছি। দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী, চার কোটি বা তারও বেশি তরুণ, কোটি কোটি কৃষক-শ্রমিক কর্মক্ষম। এই জনসংখ্যাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের বিজয়কে সুসম্মত করাই হচ্ছে বিএনপির একমাত্র লক্ষ্য। একটি স্বনির্ভর, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার মাধ্যমেই আমরা আমাদের আগামী প্রতিটি বিজয় দিবসকে আরও গৌরবান্বিত এবং অর্থবহ করে গড়ে তুলতে চাই।’

শুধু স্লোগান নয়বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিজয়ের বার্তাকে আমরা শুধু স্লোগানের ভেতরে সীমাবদ্ধ রাখবো না। বিজয়ের সুফল প্রত্যেক নাগরিকের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি ও ধানের শীষ জনগণের সহযোগিতা ও সমর্থন প্রত্যাশা করছে।’

জিয়াউর রহমানের প্রবন্ধতারেক রহমান বলেন, ‘স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর ঘটনাবলি নিয়ে স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ জিয়াউর রহমানের নিজের লেখা একটি প্রবন্ধ রয়েছে এবং সেটির নাম হচ্ছে, ‘একটি জাতির জন্ম’। এই প্রবন্ধ আমাদের স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের একটি অনন্য দলিল। পতিত, পলায়নপর একটি চক্র শুধু নিজেদের হীন দলীয় স্বার্থে বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের বিকৃতি ঘটিয়েছিল। স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে অনেক ক্ষেত্রে দলীয় ইতিহাসে তারা পরিণত করেছিল।’

পরাজিত শক্তির অপচেষ্টা‘পতিত চক্রের অপরিণামদর্শী অপচেষ্টার কারণে পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে এখন আবার মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত একটি চক্র বিজয়ের নতুন ইতিহাস রচনার অপচেষ্টা করছে। পরাজিত চক্রকে মোকাবিলায় প্রতিশোধ-প্রতিহিংসার পরিবর্তে বিজয়ের সুফল প্রত্যেক মানুষের ঘরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য স্বনির্ভর, সমৃদ্ধ, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাই হোক এবারের বিজয় দিবসে আমাদের অঙ্গীকার। যতদিন পর্যন্ত এই রাষ্ট্রের জনগণের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা না যাবে, ততদিন পর্যন্ত স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রকে টেকশই ভিত্তির ওপর দাঁড় করানো যাবে না,’ যোগ করেন তারেক রহমান।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে আজ পর্যন্ত যতবার দেশের গণতন্ত্র হুমকির সম্মুখীন হয়েছে, ততবারই দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর কিংবা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, ইতিহাসের প্রতিটি বাঁকে এর সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে।’

তারেক রহমান জানান, কখনোই জনগণকে ক্ষমতাহীন করে রাষ্ট্রযন্ত্র ক্ষমতাশালী হয়ে উঠতে পারে না। জনগণকে ক্ষমতাবান করার পূর্ব শর্তই হচ্ছে সরাসরি ভোটে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ, জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা। এ কারণে বিএনপি সবসময় জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে যেকোনো মূল্যে দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে।

নির্বাচনে প্রতিবন্ধকতাবিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অভিযোগ করেন, বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী একটি চক্র কারণে-অকারণে, শর্তের পর শর্ত জুড়ে দিয়ে কিংবা নানা অজুহাতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথে বিঘ্ন সৃষ্টির অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এখনো তা চলছে ক্ষেত্রে বিশেষে। কিন্তু সব উপেক্ষা করে দেড় দশকের বেশি সময় পর নির্বাচন কমিশন জনগণের আকাঙ্ক্ষিত জাতীয় নির্বাচনের তারিখটি ঘোষণা করেছে। সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। ষড়যন্ত্র কিন্তু এখনো থেমে নেই। গণতন্ত্রের পক্ষের সাহসী সন্তান ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনাটি সেই ষড়যন্ত্রের অংশ।

‘বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে যদি ব্যর্থ করা যায়, কারা তাহলে খুশি হবে? নির্বাচন ছাড়াই বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বহাল রাখা গেলে কারা লাভবান হবে? দেশে জনগণের ভোটে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত না হলে কাদের লাভ? আমি বিশ্বাস করি এসব প্রশ্নের জবাবের মধ্যেই হাদির ঘাতকরা লুকিয়ে রয়েছে। স্বাধীনতাপ্রিয়, গণতন্ত্রকামী জনগণের শত্রুরা ঘাপটি মেরে রয়েছে এসব প্রশ্নের ভেতরে,’ যোগ করেন তারেক রহমান।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি দলের প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু সঞ্চালনা করেন। আরও বক্তব্য দেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমদ, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী প্রমুখ।

কেএইচ/একিউএফ/এমএস