রাজনীতি

২৪ না হলে আমাদের মুখ দিয়ে নির্বাচন নামক শব্দ বের হতো না

২৪ না হলে আমরা যারা নির্বাচনের কথা বলছি, নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি, আমাদের মুখ দিয়ে নির্বাচন নামক কোনো শব্দ বের হতো না বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।

সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াত আয়োজিত ‘মহান বিজয় দিবস’র আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ফ্যাসিবাদের সঙ্গে বিভিন্ন ব্যাপারে অনেকেই আপস করেছেন। কিন্তু জামায়াতে ইসলামীর আপসের ইতিহাস নেই। জামায়াতকে আপস করার জন্য দফায় দফায় চাপ দেওয়া হয়েছে, অনুরোধ করা হয়েছে, আহ্বান জানানো হয়েছে, ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। আমাদের নেতারা হাসতে হাসতে জীবন দিয়েছেন। কিন্তু আপসের প্রস্তাবনাকে তারা ঘৃণা বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

তিনি বলেন, আমরাও কোনো অন্যায়ের সঙ্গে আপস করবো না। তবে যেখানেই আমরা কল্যাণের সন্ধান পাবো, যার কাছেই পাবো, তাকে আমরা জড়িয়ে ধরবো।

একাত্তরের ন্যায় চব্বিশকেও সম্মান-শ্রদ্ধা জানানোর আহ্বান জানিয়ে জামায়াত আমির বলেন, যদি ২৪ না হতো আমরা যারা নির্বাচনের কথা বলছি, নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি, আমাদের মুখ দিয়ে নির্বাচন নামক কোনো শব্দ বের হতো না। যদি ২৪ না হতো আজকে ইলেকশন কমিশনের দায়িত্বপূর্ণ জায়গা থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার যে বক্তব্য দিয়েছেন, তিনিও এই জায়গায় থাকতেন না। যদি ২৪ না হতো বর্তমানে যে ইন্টেরিম গভর্নমেন্ট আছে, তাদের অনেকেও জেলে থাকতেন। তাদের কেউ কেউ এর আগে জেল খেটেছেন ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে, কারও স্বামী কিডন্যাপ হয়েছেন। যদি এই ২৪ না হতো বর্তমানে ফ্যাসিবাদী আমলে যেসব মানুষকে নির্যাতন করা হয়েছে, অপমান করা হয়েছে, তাদের বিচার চাওয়ারও কোনো পরিবেশ এই দেশে থাকতো না।

‘সুতরাং আমি সবার প্রতি বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ করবো, আমরা অবশ্যই সম্মান করবো ৭১ কে; তেমনিভাবে চব্বিশকেও। চব্বিশ আমাদের ইতিহাসের শুধু অংশ নয়, চব্বিশ এখন আমাদের কলিজার অংশ। এই চব্বিশকে সম্মান করলেই বাংলাদেশ এবং জাতিকে সম্মান করা হবে।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, অতীত নিয়ে পড়ে থাকা কখনো গতিশীল জাতির পরিচয় বহন করে না। আমরা অতীত নিয়ে পড়ে থাকতে চাই না। জাতিকে বিভক্ত নয়, আমরা একটা ঐক্যবদ্ধ জাতি দেখতে চাই। আমরা এটাও চাই না যে আমাদের জাতির ওপর বাইর থেকে কেউ এসে খবরদারি করুক, দাদাগিরি করুক, এটা আমরা বরদাস্ত করবো না।

তিনি বলেন, ৫৪ বছর আমাদের ভাগ্য চোরাবালিতে হারিয়ে গিয়েছিল। আমরা সামনের দিকে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যেতে চাই। আমরা এরই মধ্যে ঘোষণা করেছি বিভক্তি নয়, ঐক্য হিংসা নয়, ভালোবাসা; দুর্নীতি নয়, স্বচ্ছতা এবং দায়বদ্ধতা; অবিচার নয়, সবার জন্য সুবিচার; বেকারত্ব নয়, হাতে হাতে কাজ। এই নিয়ে আমরা প্রিয় জাতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে চাই। পোড়খাওয়া জাতি গত ৫৪ বছর নানা শাসন দেখেছে। তারা এখন নতুন একটি বাংলাদেশ দেখতে চায়। অতীতের যত ময়লা-আবর্জনা শাসন ব্যবস্থায় ছিল, পুরোনো সেই কাসুন্দি এই জাতি আর দেখতে চায় না। এগুলো পায়ের তলায় ফেলে দুপায়ে মাড়িয়ে সামনের দিকে নতুন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হবে।

জামায়াত আমির বলেন, আজ জাতি বৃহত্তর লক্ষ্যের দিকে এগোচ্ছে। গরম ভাতে বিড়াল খুশি হয় না। কারণ বিড়ালের মুখ পোড়ে। জাতি যখন একটা স্বচ্ছ, দুর্নীতিমুক্ত, সমাজ দেখার জন্য মুখিয়ে আছে, তখন ভয়ভীতি, অপপ্রচার, বিভেদ রেখা টেনে একদল উঠেপড়ে লেগেছে। তারা সেই পুরোনা পচা আমলে ফিরিয়ে নিতে চায়। আপনারা চিহ্নিত হয়ে গেছেন। আপনারা এতদিন বর্ণচোরা ছিলেন। এখন আপনাদের রূপ প্রকাশ পেয়েছে।

এই চিহ্নিত বর্ণচোরাদের সংশোধন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নিজেদের সংশোধন করুন, অনুতপ্ত হন, ক্ষমা চান। অপকর্ম থেকে বিরত থাকুন। যদি না থাকেন জাতি আপনাদের ক্ষমা করবে না। এই বাংলাদেশ হবে তারুণ্যনির্ভর বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশ বিশ্বের সভ্য জাতিগুলার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশ হবে প্রত্যেকটি মানুষের জীবন, সম্পদ এবং ইজ্জতের নিরাপত্তার বাংলাদেশ।

তিনি বলেন, আমরা জানি না আগামীদিনে আল্লাহ কার হাতে তুলে দেবেন বাংলাদেশের দায়িত্ব। দায়িত্ব পালনে কেউ যদি ব্যর্থ হয় তারও জেনে রাখা উচিত ঝাপটা মেরে আল্লাহ সেই দায়িত্ব কেড়ে নেন। একটা দল তো ক্ষমতা ২০৪১ সাল পর্যন্ত বুকিং দিয়েছিল। আমরা একটা পরিবর্তন দেখতে চাই। সুতরাং আমার কাছে কোনো ৪১ নাই, আমার কাছে ২৪, ২৫ যাই আসবে আলহামদুলিল্লাহ।

রাজনৈতিক দলসমূহকে জাতির আমানত উল্লেখ করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। দেশকে ভুলে গিয়ে ব্যক্তিকেন্দ্রিক দলকানা কোনো চিন্তা করলে জাতি আমাদের ক্ষমা করবে না। দেশের স্বার্থ, জাতির স্বার্থকেই ওপরে তুলে ধরতে হবে।

সাংবাদিকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের বক্তব্যের খণ্ডিত অংশ দিয়ে জাতিকে বিভ্রান্তিতে ফেলে আমাদের কষ্ট দেন, এ কাজ করবেন না। আপনাদের দুই একজনের কারণে গোটা সাংবাদিক সমাজ কেন লজ্জিত হবে? যাদের বলা হয় জাতির বিবেক, এই বিবেককে আপনারা লজ্জা দেবেন না। যার যার জায়গা থেকে আপনারা নিজ দায়িত্বটা সঠিকভাবে পালন করবেন। আপনারা চতুর্থ স্তম্ভ। এটা ভুলে যাবেন না। অন্য তিনটা স্তম্ভকে ঠিক রাখার দায়িত্ব আপনাদের। এইটাও আপনারা ভুলে যাবেন না।

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম মাসুম ও মাওলানা রফিকুল ইসলাম খানসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা বক্তব্য রাখেন।

আরএএস/ইএ/এমএস