পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে এটা একটা খুবই দুঃখজনক বিষয় যে, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য অনেক সময় আমরা যুক্তি-তর্ক দিয়ে না করে হত্যাচেষ্টাকে একটা অস্ত্র হিসেবে গ্রহণ করি। এটা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও কাপুরুষোচিত। এটার মধ্যে তো কোনো বীরত্ব নেই। আপনার যদি শক্তি থাকে, আপনি জনগণের মুখোমুখি হন, জনগণের মুখোমুখি কীভাবে হতে হয়, একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রেতো সবার কাছে স্পষ্ট। সেটা না করে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার এই যে একটা সংস্কৃতি চলে এসেছে, এটা কোনোভাবেই নতুন বাংলাদেশে গ্রহণ করার কোনো সুযোগ দেখতে পাচ্ছি না।
মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা জানানোর পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি।
রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, যখন থেকে আমরা স্বাধীন হলাম, তখন থেকেই আমাদের প্রত্যাশা ছিল একটা গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার। প্রত্যাশা ছিল একটা বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থার। অনেক বছর পর এখন আবার মনে হচ্ছে ওই জিনিসগুলো আমরা অর্জন করতে পারিনি। পারিনি বলেইতো গণঅভ্যুত্থান হলো। পারিনি বলেই বিপ্লব হলো।
তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসে আমাদের নির্বাচন আছে, আমরা খুবই আশা করছি নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের পথে সুদৃঢ় একটা যাত্রা শুরু করবো। এজন্য কেবল মাত্র একটা নির্বাচনই হচ্ছে না, একটা গণভোটও হচ্ছে। যেখানে সংস্কার প্রশ্নে বড় কতগুলো বিষয়ে জনগণ তাদের মতামত জানাতে পারবে। এখন তার ওপর নির্ভর করে গণতন্ত্রের যাত্রাটা এবার পরিবর্তিত আকারে শুরু হতেই পারে।
তিনি আরও বলেন, এটা তো সত্য কথা ৫৪ বছর পরেও যখন একটা গণঅভ্যুত্থান হতে হয়, তার অর্থ হচ্ছে ৭১ এর যে স্বপ্নটা আমাদের ছিল, যে বিশ্বাসটা আমাদের ছিল, যে প্রত্যাশাটা আমাদের ছিল, রাষ্ট্র সেই প্রত্যাশাটা পূরণ করতে পারেনি। আমরা আশা করি, এই নির্বাচনের মাধ্যমে একটা ভিত্তি স্থাপন হবে। যেই ভিত্তিটা গণতন্ত্রকে যেমন সুদৃঢ় করবে, তেমনি জনগণের কাছে সরকারকে জবাবদিহি করতে বাধ্য করবে। একটা বৈষম্যহীন, শোষণমুক্ত সমাজ গড়ার স্বপ্নটা আমাদের এখনো অধরা রয়ে গেছে।
সরকার জুলাই আন্দোলনের সম্মুখসারির ব্যক্তিদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ কি না প্রশ্নে তিনি বলেন, একটা টেন্ডেন্সি দেখি খুব, আপনারা ব্যর্থ কি না আপনারা সফল কি না? একটা এক দেড় বছরের সরকারের ব্যর্থ আর সফলতার গল্পটা একটু অন্যভাবে বিচার করতে হবে। এইজন্য যে, আমরা যখন রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বটা নিয়েছিলাম তখন একটা একেবারে ভেঙে পড়া অবস্থায় আমরা কাজ শুরু করেছি। সেই ভেঙে পড়া অবস্থাকে জোড়া লাগিয়ে রাষ্ট্রটাকে আবার একটা যাত্রার দিকে নিয়ে যাওয়াই ছিল আমাদের কাজ। আমরা সেই কাজটা করেছি। সেখানে আমি এই সরকারকে ব্যর্থ বা সফল কোনোটা বলারই সুযোগ দেখতে পাচ্ছি না। এ সরকার তখনই সফল হবে যখন দেখা যাবে যে উদ্দেশ্য নিয়ে এই সরকারের যাত্রা, একটা সুষ্ঠু নির্বাচন, বিচার করা এবং সংস্কার করা সেগুলো শেষ পর্যন্ত যাওয়া।
নির্বাচনে আইন পরিস্থিতি কেমন হবে প্রশ্নে তিনি বলেন, আমাদের প্রচেষ্টা হচ্ছে সুষ্ঠু একটা নির্বাচন হবে। স্বতঃস্ফূর্তভাবে লোক ভোট দিতে পারবে, শান্তিপূর্ণভাবে লোক ভোট দিতে পারবে। এখন এটাকে ব্যাহত করার জন্য একটা শক্তি সমাজে কাজ করছে। সেই শক্তিকে আমাদের প্রতিহত করতে হচ্ছে, একইসঙ্গে আমাদের একটা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হচ্ছে। একটা কথা জনগণের উদ্দেশ্যে বলা দরকার- আমাদেরকে, জনগণকে ভীত করে ফেলার একটা প্রচেষ্টা চলছে। সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে, জনগণকে আশ্বস্ত করা যাতে করে জনগণের মধ্যে ভয়ের সংক্রমণটা না হয়। আমরা আমাদের জায়গা থেকে সাধ্যমতো সেই চেষ্টা করে যাচ্ছি।
মাহফুজুর রহমান নিপু/এফএ