জাতীয়

পুরান ঢাকায় যেভাবে হলো মুক্তিযুদ্ধের ‘দুর্বার প্রতিরোধ’

পুরান ঢাকার জিন্দাবাহার এলাকায় প্রধান সড়কের পাশেই অধ্যাপক কামালউদ্দীন আহমদের বাড়ি। সময়টা ১৯৭১ সাল। তখন তিনি নবম শ্রেণির ছাত্র, বয়স মাত্র ১৩। মার্চজুড়ে সারাদেশে চলছে অসহযোগ আন্দোলন, স্কুলও বন্ধ। প্রতিদিন পরিবারের সঙ্গে রেডিওতে দেশের খবর শুনতেন তিনি।

২ মার্চ রেডিওর খবরে জানতে পারেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনে উড়েছে বাংলাদেশের প্রথম পতাকা। পরদিনই আশপাশে তাকিয়ে দেখেন, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত লাল-সবুজের পতাকা উড়ছে।

সে দৃশ্য তাকে ভীষণভাবে নাড়া দেয়। কাউকে কিছু না জানিয়ে বাড়িতে থাকা কাঁচি, পাকিস্তানের একটি পতাকা, লাল কাপড় আর সুঁই-সুতা নিয়ে ওঠে ছাদে। পাকিস্তানের পতাকা থেকে চাঁদ-তারা অংশটি গোল করে কেটে ফেলেন। এরপর নিজ হাতে লাল কাপড়ের একটি বৃত্ত সেলাই করে সবুজ কাপড়ে বসান। মানচিত্রের অংশটি না থাকলেও তৈরি হয়ে যায় লাল-সবুজের একটি পতাকা।

পতাকাটি ছাদে টানিয়ে নিচে নেমে আসেন তিনি।

বাড়িটি প্রধান সড়কের পাশেই হওয়ায় আশপাশের দোকান ও পথচারীদের দৃষ্টি পড়ে পতাকাটির দিকে। শুরু হয় আলোচনা। খবর পেয়ে তার বাবা বাড়ির নিচের ছাপাখানার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে বেরিয়ে এসে ছাদে উড়তে থাকা পতাকাটি দেখে ছেলের কাছে জানতে চান, এভাবে পতাকা লাগানো বিপদের কারণ হতে পারে কি না। পরিস্থিতির কথা ভেবে সেদিন পতাকাটি নামিয়ে ফেলতে হয়।

তবে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগের কয়েক দিন আবার পুরান ঢাকার বিভিন্ন বাড়িতে উড়তে শুরু করে বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা। তখন আবার নিজের হাতে বানানো সেই পতাকাটি ছাদে উড়িয়েছিলেন কামালউদ্দীন।

২৬ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী হত্যাযজ্ঞ শুরু করলে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। প্রাণের ভয়ে তখন সবাই আবার নামিয়ে ফেলে বাংলাদেশের পতাকা। কামালউদ্দীনের বাড়িতেও সেই রাতে এসেছিলেন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।

আরও পড়ুনবীর মুক্তিযোদ্ধাদের চূড়ান্ত তালিকা এ আমলেও অনিশ্চিতসহযোগীদের ওপরে তোলা হয়েছে, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা নিচে পড়ে গেছেন‘ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা’ শনাক্তে ডিসি-ইউএনও অফিসে টাঙানো হচ্ছে তালিকা

জাগো নিউজের এই প্রতিবেদককে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর সেই স্মৃতিময় গল্প এভাবেই বলছিলেন অধ্যাপক কামালউদ্দীন আহমদ। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন।

অধ্যাপক কামালউদ্দীন আহমদ বলেন, ২৫ মার্চ গভীর রাতে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা যখন ‘অপারেশন সার্চলাইট’ শুরু করে, পুরান ঢাকার জনবহুল এলাকাগুলোও সেই নির্মম হামলার শিকার হয়। যদিও মূল আক্রমণ শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে, কিন্তু পুরান ঢাকার সূত্রাপুর, ওয়ারী, লালবাগ এবং শাঁখারীবাজার এলাকায়ও দ্রুত সামরিক বাহিনী প্রবেশ করে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি স্মরণে ভাস্কর্য। ছবি: আশিকুজ্জামান 

গণহত্যার সবচেয়ে নির্মম উদাহরণ দেখা যায় শাঁখারীবাজারে। হিন্দু অধ্যুষিত এই এলাকায় ২৬ মার্চ সকালে কারফিউ জারি করে বহু নিরীহ মানুষকে গুলি করে এবং ঘরবাড়িতে আগুন লাগিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এই অঞ্চলের বহু মানুষ প্রাণের ভয়ে বুড়িগঙ্গায় ঝাঁপ দেন। এই ভয়াবহ গণহত্যার বিস্তারিত বিবরণ এবং প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ানসমূহ নির্ভরযোগ্যভাবে সংরক্ষিত আছে ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্রের অষ্টম খণ্ডে।’ যেখানে পুরান ঢাকার বিভিন্ন স্থানের হত্যাযজ্ঞের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

রক্তক্ষয়ী মুক্তি-সংগ্রামে পুরান ঢাকা কেবল ইতিহাসের সাক্ষী ছিল না, এটি ছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার এক প্রদীপ্ত মশাল। রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের কেন্দ্র এই জনবহুল এলাকাটি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে এক দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তোলে।

প্রথম হামলার পরপরই রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের কাছাকাছি পুরান ঢাকার যুবকরা লাঠি ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বিক্ষিপ্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। পুরান ঢাকার জনজীবন মুহূর্তেই স্থবির হয়ে পড়ে।

প্রখ্যাত গবেষক ড. মুনতাসীর মামুনের ‘ঢাকা: স্মৃতি বিস্মৃতির নগরী’ গ্রন্থে ২৫ মার্চের পর পুরান ঢাকার সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং সামরিক বাহিনীর অত্যাচারের ফলে সৃষ্ট ভীতিকর পরিবেশের বিশদ বিবরণ রয়েছে। তিনি উল্লেখ করেছেন যে কীভাবে লক্ষ্মীবাজার, সদরঘাট এবং ইসলামপুরের বহু বাড়িঘর পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্পে পরিণত হয় এবং সাধারণ মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রিত হতে শুরু করে।

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ঢাকা শহরের অভ্যন্তরে পরিচালিত দুঃসাহসিক গেরিলা যুদ্ধ পুরান ঢাকার অকুতোভয় তরুণদের অংশগ্রহণ ছাড়া সম্ভব ছিল না। এই গেরিলা দলটি ‘ক্র্যাক প্লাটুন’ নামে পরিচিত ছিল।

আরও পড়ুনস্মৃতিস্তম্ভের মতোই অনাদরে বটতলীর মুক্তিযোদ্ধা-মুক্তিযুদ্ধের গল্প‘মুক্তিযুদ্ধে নিজেকে যেভাবে উৎসর্গ করেছিলাম, সেভাবে সম্মান পাইনি’বিজয় দিবসে মোদীর পোস্ট, নেই বাংলাদেশের নাম

পুরান ঢাকার ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চল। বিশেষত সূত্রাপুর ও ওয়ারীর পুরোনো বাড়িগুলো, গেরিলা যোদ্ধাদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল ও গোপন বৈঠকের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এখানকার স্থানীয় ছাত্র ও যুবকরাই ক্র্যাক প্লাটুনের একটি বড় অংশ ছিল। শহীদ জুয়েল, শহীদ বদীউজ্জামান (বদী) এবং শহীদ বাকীর মতো অনেক গেরিলা যোদ্ধা পুরান ঢাকার বাসিন্দা ছিলেন, যারা চরম ঝুঁকি নিয়ে অপারেশনগুলোতে অংশ নেন।

পুরান ঢাকার গেরিলারা যেসব সফল অপারেশনের মাধ্যমে পাকিস্তানি বাহিনীর মনোবল ভেঙে দিয়েছিল, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল বিস্ফোরণ। ১৯৭১ সালের ৯ জুন, এই অভিজাত হোটেলে টাইমবোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়, যেখানে তখন আন্তর্জাতিক সাংবাদিকরা অবস্থান করছিলেন। এই অপারেশনটি প্রমাণ করে যে, ঢাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয়। এ ঘটনা এবং ক্র্যাক প্লাটুনের অন্য অপারেশনগুলোর বিস্তারিত বর্ণনা আহমদ রফিক রচিত ‘একাত্তরের ঢাকা’ গ্রন্থে পাওয়া যায়।

বিখ্যাত ভারতীয় আলোকচিত্রী কিশোর পারেখ। যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকা ও এর আশপাশে যুদ্ধক্ষেত্রের বহু ঐতিহাসিক ছবি তোলেন। যুদ্ধের সময় তোলা তার ছবিগুলো ‘Bangladesh: A Brutal Birth’ (বাংলাদেশ: এক নিষ্ঠুর জন্ম) নামে একটি বই আকারে প্রকাশিত হয়েছিল, যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের নির্মম বাস্তবতা বিশ্বের কাছে তুলে ধরে। সেখানে তিনি পুরান ঢাকায় গেরিলা বাহিনীর তোলক একটি ছবিতে লিখেছেন, ‘শহরের পুরোনো অংশের এক ভয়ঙ্কর রাস্তায়, আমি মুক্তি বাহিনীর গেরিলা যোদ্ধাদের লুকিয়ে থাকা স্নাইপারদের খুঁজে বের করতে দেখেছিলাম। ঘরগুলোর ভেতরে ঢুকে, যোদ্ধারা অন্ধকার কক্ষগুলোতে নীরবে লড়েছিলেন।’

পুরান ঢাকার তরুণদের নেতৃত্বে সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়। ফলে ঢাকা শহরের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হয়। এই কৌশলগত আক্রমণ সামরিক বাহিনীর প্রশাসনিক কার্যক্রম অচল করে দেয় এবং জনমনে সাহসের সঞ্চার করে।

এই অপারেশনগুলোর পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে পুরান ঢাকার যুবকদের বীরত্বগাথা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের গেরিলা ইতিহাসের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।

সশস্ত্র প্রতিরোধের পাশাপাশি পুরান ঢাকার রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল নীরব কিন্তু কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল।

বাংলাবাজার, ফরাশগঞ্জ ও পাটুয়াটুলীর ছাপাখানাগুলো কঠোর সামরিক নজরদারি এড়িয়ে অত্যন্ত গোপনে স্বাধীনতাকামী লিফলেট, হ্যান্ডবিল ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠানসূচি ছাপানোর মাধ্যমে জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই কাজের সঙ্গে যুক্ত কর্মচারী ও প্রকাশকদের অনেকেই জীবন বাজি রেখে এই কাজ চালিয়ে যান।

পুরান ঢাকার নারী সমাজও এই যুদ্ধে নিজেদের উৎসর্গ করেন। তারা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য গোপন আস্তানা, খাবার, প্রাথমিক চিকিৎসা এবং অস্ত্র সংরক্ষণের কাজে নিয়োজিত ছিলেন। অনেক সময় তারা স্থানীয় রাজাকার ও আলবদরদের গতিবিধি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে গেরিলাদের কাছে পৌঁছে দিতেন। ‘মুক্তিযুদ্ধে নারীর ভূমিকা’ সংক্রান্ত বিভিন্ন সংকলন ও গবেষণা নিবন্ধে পুরান ঢাকার সাধারণ পরিবারের নারীদের এই চরম ঝুঁকিপূর্ণ সহযোগিতার কথা সশ্রদ্ধচিত্তে উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের এই আত্মত্যাগ ছিল মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম চালিকাশক্তি।

মুক্তিযুদ্ধে পুরান ঢাকার কিছু মানুষ যেমন চরম ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তেমনি কিছু মানুষ পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী হয়ে রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনী গঠন করেছিল। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস নিয়ে লেখা বিভিন্ন সংকলন এবং ‘মুক্তিযুদ্ধের শেষ নয় দিন’ জাতীয় গ্রন্থে রাজাকার ও আলবদরদের স্থানীয়ভাবে চিহ্নিত করে তাদের শাস্তি দেওয়ার ঘটনার বিবরণ পাওয়া যায়।

যেখানে বলা হয়েছে, বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে, যখন পাকিস্তানি সেনারা পিছু হটছিল, তখন পুরান ঢাকার বিক্ষুব্ধ জনতা স্থানীয় রাজাকার ও আলবদরদের ধরে এনে শাস্তি দিতে শুরু করে।

১৪ ডিসেম্বরের বুদ্ধিজীবী হত্যাযজ্ঞে কিছু স্থানীয় আলবদর সদস্য পুরান ঢাকার অঞ্চল থেকে বুদ্ধিজীবীদের ধরে আনতে এবং বধ্যভূমিতে নিয়ে যেতে সহায়তা করেছিল।

শাঁখারীবাজার মোড়ে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মৃতিতে নির্মিত শহীদ মিনার। ছবি: আশিকুজ্জামান

পুরান ঢাকার কয়েকটি মহল্লায় এই দেশদ্রোহীদের বিরুদ্ধে গণআক্রোশ তীব্র রূপ নেয়।

নয় মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম ও চূড়ান্ত যুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর যখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করে, পুরান ঢাকা তখন বিজয়ের উল্লাসে ফেটে পড়ে।

বিজয় নিশ্চিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরান ঢাকার মানুষজন স্বতঃস্ফূর্তভাবে জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে রাস্তায় নেমে আসে। বিশেষ করে বাহাদুর শাহ পার্ক (ভিক্টোরিয়া পার্ক) এবং সদরঘাট সংলগ্ন এলাকায় হাজার হাজার জনতা জড়ো হয়। পাকবাহিনীর পতনের পর এই অঞ্চলের মানুষই দ্রুত শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সহযোগিতা করে।

পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ কলেজ (বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয়) এলাকার ছাত্ররা শুরু থেকেই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয় এবং বিজয়ের পর তারাই প্রথম স্বাধীন বাংলার পতাকা আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তোলন করেন।

নিজের মতো সেই বিজয় মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন অধ্যাপক কামালউদ্দীন আহমদ। তিনি বলেন, পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণের কথা জেনে আমরা আনন্দে লুঙ্গি পরেই দৌড়ে রাস্তায় নেমে আসি। আর স্লোগান তুলেছিলাম সবাই। ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের আনন্দে অনেকে সারারাত আকাশে গুলির আওয়াজ ছুড়ছিল।

অধ্যাপক কামালউদ্দীন আহমেদ আরও বলেন, পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর বিজয়ের আনন্দ নিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন আমার বোনজামাই মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ সুবিদ আলী ভূঁইয়া। তাকে দেখে আনন্দে প্রায় তার কোলে উঠে গিয়েছিলাম।

তিনি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের একেবারে সূচনালগ্নের একজন সম্মুখযোদ্ধা। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ রাতেই অর্থাৎ যুদ্ধ শুরুর মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তার নেতৃত্বে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এবং অন্যান্য বাঙালি সামরিক বাহিনীর সদস্যরা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ৫৩ ব্রিগেডের ওপর অ্যামবুশ পরিচালনা করেন। চট্টগ্রামের কুমিরা এলাকায় সংঘটিত সেই যুদ্ধে একজন কর্নেলসহ অন্তত ১৫২ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়।

অধ্যাপক কামালউদ্দীন বলেন, ‘বাড়িতে ফিরে তিনি যখন ঘুমাচ্ছিলেন, তাকে দেখে মনে হচ্ছিল-কী অসীম ক্লান্তি, ত্যাগ আর রক্তের বিনিময়ে আমরা এই স্বাধীনতা, এই বিজয় অর্জন করেছি।’

পুরান ঢাকার প্রতিটি অলিগলি, প্রতিটি প্রতিষ্ঠান, আর এখানকার মানুষের আত্মত্যাগই এই বিজয়ের ভিত্তি। এই অঞ্চলের রাজনৈতিক সচেতনতা, গেরিলা যুদ্ধ এবং সাধারণ মানুষের আপসহীন সহযোগিতা। সবকিছুই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় অধ্যায় হিসেবে চিরকাল স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

এমডিএএ/এসএইচএস/এএসএম