আন্তর্জাতিক

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের চুক্তি যে কোনো সময়ের চেয়ে কাছাকাছি: ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে একটি চুক্তি এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি কাছাকাছি অবস্থানে পৌঁছেছে। স্থানীয় সময় সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) জার্মানির বার্লিনে মার্কিন ও ইউরোপীয় নেতাদের উচ্চপর্যায়ের আলোচনার পর তিনি এমন মন্তব্য করেন। তবে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আঞ্চলিক ইস্যুতে এখনো গুরুত্বপূর্ণ মতপার্থক্য রয়ে গেছে।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ট্রাম্প জানান, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্য ও ন্যাটোর নেতাদের সঙ্গে তার ‘খুব দীর্ঘ ও ভালো আলোচনা’ হয়েছে। তিনি বলেন, ইউরোপীয় নেতাদের কাছ থেকে তিনি শক্ত সমর্থন পাচ্ছেন ও তারাও যুদ্ধের অবসান চান।

ট্রাম্প আরও বলেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গেও আমার একাধিকবার কথা হয়েছে। আমার মনে হয়, আমরা এখন যে কোনো সময়ের চেয়ে কাছাকাছি অবস্থানে আছি। আমরা দেখব কী করা যায়।

এর আগে জেলেনস্কি জানান, মার্কিন ও ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা কঠিন হলেও ফলপ্রসূ ছিল। বার্লিনে দুই দিন ধরে চলা এই আলোচনায় মার্কিন প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ। বৈঠকে ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার, জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় বিভিন্ন দেশের নেতারা অংশ নেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের অন্যতম ভয়াবহ এই সংঘাতের অবসান ঘটাতে কিয়েভের ওপর মস্কোর কাছে কিছু ছাড় দেওয়ার জন্য ওয়াশিংটনের চাপ বাড়ার প্রেক্ষাপটেই এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

আলোচনা শেষে এক যৌথ বিবৃতিতে ইউরোপীয় নেতারা জানান, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একযোগে ইউক্রেনকে ‘শক্তিশালী নিরাপত্তা নিশ্চয়তা’ দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত ইউরোপ-নেতৃত্বাধীন একটি ‘বহুজাতিক বাহিনী’ গঠনের বিষয়ও রয়েছে। এই বাহিনী ইউক্রেনের ভেতরে কাজ করা, ইউক্রেনীয় বাহিনী পুনর্গঠনে সহায়তা, আকাশসীমা সুরক্ষা এবং নিরাপদ সমুদ্রপথ নিশ্চিত করার দায়িত্ব পালন করবে। তারা জানান, ইউক্রেনীয় বাহিনীর শান্তিকালীন সদস্যসংখ্যা ৮ লাখে থাকা উচিত।

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দুই মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রস্তাবিত এসব নিরাপত্তা ব্যবস্থা ন্যাটোর আর্টিকেল ৫-এর পারস্পরিক প্রতিরক্ষা অঙ্গীকারের মতোই শক্তিশালী।

এর আগে ইউক্রেন ইঙ্গিত দিয়েছিল, দৃঢ় পশ্চিমা নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিনিময়ে তারা ন্যাটোতে যোগদানের আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করতে প্রস্তুত। বার্লিনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় জেলেনস্কি বলেন, সম্ভাব্য শান্তি চুক্তির আওতায় আঞ্চলিক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কিয়েভের জন্য প্রস্তাবিত নিরাপত্তা নিশ্চয়তাগুলোর স্পষ্ট ধারণা থাকা জরুরি। তিনি আরও বলেন, যেকোনো নিশ্চয়তার মধ্যেই কার্যকর যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা থাকতে হবে।

ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা সতর্ক করে বলেন, অতীতে ১৯৯১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেওয়া নিরাপত্তা নিশ্চয়তা ২০১৪ ও ২০২২ সালে রাশিয়ার আগ্রাসন ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছিল।

জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস জানান, বার্লিনের আলোচনায় ওয়াশিংটন ‘উল্লেখযোগ্য’ নিরাপত্তা নিশ্চয়তার প্রস্তাব দিয়েছে। জেলেনস্কির সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আইনি ও বাস্তব দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র যে নিশ্চয়তাগুলো টেবিলে রেখেছে, তা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ।

তবে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, আঞ্চলিক প্রশ্ন এখনো শান্তি প্রক্রিয়ার কেন্দ্রীয় ইস্যু। তার ভাষায়, আঞ্চলিক ছাড়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার একমাত্র ইউক্রেনের। এতে কোনো শর্ত বা ব্যতিক্রম নেই।

সূত্র: আল-জাজিরা

এসএএইচ