বাংলাদেশের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সীমান্তের প্রায় ৮০ শতাংশ অংশে কাঁটাতারের বেড়া বসিয়েছে ভারত। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) ভারতীয় সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় এ তথ্য জানান দেশটির স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই।
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্তের মোট দৈর্ঘ্য ৪ হাজার ৯৬ দশমিক ৭০ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৩ হাজার ২৩৯ দশমিক ৯২ কিলোমিটারে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়েছে, যা মোট সীমান্তের ৭৯ দশমিক ৮ শতাংশ। এখনো ৮৫৬ দশমিক ৭৭৮ কিলোমিটার বা ২০ দশমিক ৯২ শতাংশ সীমান্তে বেড়া বসানো হয়নি।
অন্যদিকে, লোকসভায় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাইয়ের লিখিত উত্তরে জানানো হয়, মোট ২ হাজার ২৮৯ দশমিক ৬৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ভারত-পাকিস্তান আন্তর্জাতিক সীমান্তের মধ্যে ২ হাজার ১৩৫ দশমিক ১৩৬ কিলোমিটারে বেড়া বসানো শেষ হয়েছে, যা মোট সীমান্তের ৯৩ দশমিক ২৫ শতাংশ। বাকি ১৫৪ দশমিক ৫২৪ কিলোমিটার বা ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ সীমান্ত এখনো বেড়ার বাইরে।
এছাড়া ভারত-মিয়ানমার সীমান্তেও কিছু অগ্রগতি হয়েছে বলে জানানো হয়। প্রায় ১ হাজার ৬৪৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সীমান্তের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৯ দশমিক ২১৪ কিলোমিটারে বেড়া নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে।
ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ অনুপ্রবেশ নিয়ন্ত্রণ ও জাতীয় নিরাপত্তা জোরদারের কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই তৃণমূল কংগ্রেসের দুই সংসদ সদস্য জগদীশ চন্দ্র বার্মা বসুনিয়া ও শর্মিলা সরকারের প্রশ্নের জবাবে এই তথ্য দেন। তারা সীমান্তের কোন অংশে এখনো বেড়া নির্মাণ করা হয়নি, তার দৈর্ঘ্য ও শতকরা হিসাব জানতে চেয়েছিলেন।
মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ভারতের মোট স্থলসীমান্তের দৈর্ঘ্য ১৫ হাজার ১০৬ দশমিক ৭ কিলোমিটার ও দ্বীপাঞ্চলসহ উপকূলরেখার দৈর্ঘ্য ৭ হাজার ৫১৬ দশমিক ৬ কিলোমিটার।
ভারত স্থলপথে সাতটি প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সীমান্ত ভাগ করে নিয়েছে। পশ্চিমে জম্মু ও কাশ্মীর, পাঞ্জাব, রাজস্থান ও গুজরাট হয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে, যার মধ্যে জম্মু ও কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখাও (লাইন অব কন্ট্রোল) অন্তর্ভুক্ত।
উত্তর ও উত্তর-পূর্বে লাদাখ, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, সিকিম ও অরুণাচল প্রদেশ জুড়ে চীনের সঙ্গে ভারতের সংবেদনশীল সীমান্ত রয়েছে, যা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি) দ্বারা চিহ্নিত। এছাড়া উত্তরাখণ্ড, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও সিকিম হয়ে নেপালের সঙ্গে ভারতের একটি উন্মুক্ত ও বন্ধুত্বপূর্ণ সীমান্ত রয়েছে, যেখানে মানুষের অবাধ চলাচল অনুমোদিত।
পূর্বদিকে ভারত ভুটান, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সঙ্গে সীমান্ত ভাগ করে নিয়েছে। ভুটানের সঙ্গে সিকিম, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও অরুণাচল প্রদেশ দিয়ে ভারতের একটি শান্তিপূর্ণ ও কৌশলগত সীমান্ত রয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সবচেয়ে দীর্ঘ স্থলসীমান্ত, যা পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম রাজ্যকে স্পর্শ করেছে। আরও পূর্বে মিয়ানমারের সঙ্গে অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ড, মণিপুর ও মিজোরামের সীমান্ত রয়েছে। এছাড়া ওয়াখান করিডোর অঞ্চল দিয়ে উত্তর-পশ্চিমে আফগানিস্তানের সঙ্গে ভারতের একটি ছোট সীমান্তও রয়েছে।
স্থল সীমান্তের পাশাপাশি ভারতের সামুদ্রিক সীমান্ত শ্রীলঙ্কার সঙ্গে পক প্রণালি দ্বারা ও আরব সাগরের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত মালদ্বীপের সঙ্গেও রয়েছে।
সূত্র: এনডিটিভি
এসএএইচ