ফ্রান্সে চেতনানাশক ইনজেকশন ও ইনফিউশন ব্যাগে বিষ প্রয়োগ করে রোগীদের হত্যা করার দায়ে সাবেক এক চিকিৎসককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় শহর বেসঁসোঁর আদালত এই রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ৫৩ বছর বয়সী অ্যানেস্থেটিস্ট ফ্রেদেরিক পেশিয়েকে ‘ডক্টর ডেথ’ আখ্যা দিয়ে বলা হয়, তাকে ন্যূনতম ২২ বছর কারাভোগ করতে হবে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা জানিয়েছে, ফ্রেদেরিক পেশিয়ে মোট ৩০ জন রোগীকে ইচ্ছাকৃতভাবে বিষ প্রয়োগ করেন। এর মধ্যে ১২ জন রোগী প্রাণ হারান।
তদন্তে জানা গেছে, সহকর্মী অ্যানেস্থেটিস্টদের প্রতি ব্যক্তিগত ক্ষোভ ও তাদের হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যেই পেশিয়ে এসব অপরাধে জড়ান। অনেক ক্ষেত্রে তিনি খুব ভোরে ক্লিনিকে গিয়ে রোগীদের ইনফিউশন ব্যাগে আগেই বিষ মিশিয়ে দিতেন। পরে অস্ত্রোপচারের সময় রোগীর অবস্থা হঠাৎ সংকটাপন্ন হলে তিনি সমস্যার কারণ ‘চিহ্নিত’ করে প্রতিষেধক দেওয়ার নির্দেশ দিতেন এবং নিজেকে রোগীর ত্রাণকর্তা হিসেবে উপস্থাপন করতেন। তবে ১২টি ঘটনায় তিনি সময়মতো হস্তক্ষেপ করতে ব্যর্থ হন এবং রোগীদের মৃত্যু ঘটে।
২০০৮ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে বেসঁসোঁ শহরের দুটি বেসরকারি ক্লিনিকে এসব ঘটনা ঘটে। ২০১৭ সালে এক নারী রোগীর ইনফিউশন ব্যাগে অতিরিক্ত পটাশিয়াম ক্লোরাইড পাওয়ার পর বিষয়টি সামনে আসে এবং তদন্ত শুরু হয়। তদন্তে দেখা যায়, সেন্ট-ভিনসেন্ট ক্লিনিকে অ্যানেস্থেশিয়ার সময় মারাত্মক হৃদ্রোগজনিত ঘটনার হার জাতীয় গড়ের তুলনায় ছয় গুণেরও বেশি।
আরও পড়ুন>>কাজের চাপ কমাতে ১০ রোগীকে হত্যা, নার্সের আমৃত্যু কারাদণ্ড
আরও দেখা যায়, পেশিয়ে সাময়িকভাবে অন্য একটি ক্লিনিকে কাজ করতে গেলে সেখানে একই ধরনের জরুরি ঘটনা বেড়ে যায়। পরে তিনি সেন্ট-ভিনসেন্ট ক্লিনিকে ফিরে এলে সেখানেও আবার সংকটজনক পরিস্থিতি শুরু হয়। ২০১৭ সালে তাকে চিকিৎসা পেশা থেকে বহিষ্কার করার পর এসব অস্বাভাবিক ঘটনা বন্ধ হয়ে যায়।
দীর্ঘ ১৫ সপ্তাহ ধরে শুনানি শেষে সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) থেকে রায় নিয়ে বিচারকদের আলোচনা শুরু হয়। প্রতিটি ঘটনার বিষয়ে আলাদাভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হওয়ায় সাজা ঘোষণায় তিন দিন সময় লাগে।
মামলার নথি অনুযায়ী, পেশিয়ে রোগীদের ইনফিউশন ব্যাগে পটাশিয়াম ক্লোরাইড, অ্যাড্রেনালিনসহ বিভিন্ন রাসায়নিক মিশিয়ে দিতেন। এর ফলে রোগীদের হঠাৎ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বা অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ দেখা দিত, যা অপারেশন থিয়েটারে জরুরি হস্তক্ষেপের পরিস্থিতি তৈরি করত।
এই ভয়াবহ ঘটনার শিকার হওয়াদের মধ্যে চার বছর বয়সি এক শিশুও ছিল। ২০১৬ সালে সাধারণ টনসিল অপারেশনের সময় শিশুটি দুবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের শিকার হয়। তবে শেষ পর্যন্ত শিশুটি বেঁচে যায়। অপরদিকে, সবচেয়ে বয়স্ক ভুক্তভোগীর বয়স ছিল ৮৯ বছর।
সূত্র : বিবিসি/ইউরো নিউজ
কেএম