আন্তর্জাতিক

বিশ্ব গণমাধ্যমে প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলার খবর

‘সন্ত্রাসী’র গুলিতে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যু কেন্দ্র করে ঢাকায় সহিংস বিক্ষোভের জেরে দেশের শীর্ষ দুটি সংবাদমাধ্যম প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে উঠে এসেছে। আল-জাজিরা, রয়টার্স, বিবিসি, সিএনএন, দ্য গার্ডিয়ান ও এএফপি- সবকটি প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমই এই হামলাকে বাংলাদেশের গণমাধ্যম স্বাধীনতার জন্য গুরুতর হুমকি হিসেবে তুলে ধরেছে।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা জানিয়েছে, ঢাকায় সহিংস বিক্ষোভের লক্ষ্যবস্তু হয় কয়েকটি শীর্ষ সংবাদপত্র, যেগুলোকে সমালোচকেরা ভারতঘেঁষা বলে অভিযুক্ত করে। ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ভেতরে আটকা পড়েন বহু সাংবাদিক ও কর্মী। ধোঁয়ায় শ্বাস নিতে না পেরে এক প্রতিবেদক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রাণ বাঁচানোর আকুতি জানান। পরে ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে এনে অন্তত ২৭ জনকে উদ্ধার করে।

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, ছাত্রনেতা শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যু কেন্দ্র করে সৃষ্ট অস্থিরতার মধ্যে ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে ভাঙচুরের দৃশ্য দেখা যায়। ডেইলি স্টারের কার্যালয়ের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনা ও দমকল বাহিনী মোতায়েন করা হয় ও ভেতরে আটকে পড়া সাংবাদিকদের উদ্ধার করা হয়।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি তাদের প্রতিবেদনে জানায়, ৩৫ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম ডেইলি স্টার ছাপা সংস্করণ প্রকাশ করতে পারেনি। পত্রিকাটির কনসালটিং এডিটর কামাল আহমেদ বলেন, ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা এমন যে, পত্রিকাটি কিছুদিন কার্যত অচল থাকতে পারে। বিবিসি উল্লেখ করে, ডেইলি স্টার ও প্রথম আলো বহু বছর ধরে বিভিন্ন সরকারের চাপ ও হুমকি মোকাবিলা করলেও এমন নজিরবিহীন হামলার মুখে এই প্রথম পড়লো।

আরেক ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান লিখেছে, প্রো-ডেমোক্রেসি আন্দোলনের এক নেতার মৃত্যুর পর ঢাকায় ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। হাজারো বিক্ষোভকারী রাস্তায় নেমে আসেন এবং অন্তত তিনটি স্থানে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে, যার মধ্যে ডেইলি স্টার ও প্রথম আলো ভবনও রয়েছে। ডেইলি স্টারের এক সাংবাদিক ধোঁয়ায় আটকে পড়ার অভিজ্ঞতার কথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেন।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন তাদের প্রতিবেদনে লেখে, ছাত্র ও যুবনেতা শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর পর বাংলাদেশজুড়ে সহিংস বিক্ষোভ শুরু হয়। ঢাকায় বিক্ষোভকারীরা প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে হামলা চালায় বলে ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে।

ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, সহিংস বিক্ষোভের সময় ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হলে দমকল বাহিনী সাংবাদিকদের জ্বলন্ত ভবন থেকে উদ্ধার করে। এএফপিকে ডেইলি স্টারের কনসালটিং এডিটর কামাল আহমেদ জানান, পত্রিকার ইতিহাসে এই প্রথম প্রকাশনা বন্ধ রাখতে হয়েছে। প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরীফ বলেন, এই হামলা কেবল দুটি পত্রিকার ওপর নয়, বরং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা, মতপ্রকাশ ও ভিন্নমতের ওপর সরাসরি আঘাত।

এএফপি আরও জানায়, আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে) এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষকে সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে।

এসএএইচ