ধর্ম

শহীদ হওয়ার আগে আব্দুল্লাহ ইবনে আমরের (রা.) স্বপ্ন

ওহুদ যুদ্ধে প্রায় সত্তর জন সাহাবি শহীদ হয়েছিলেন। আনসারি সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে হারাম (রা.) তাদের অন্যতম। তিনি আরেকজন প্রখ্যাত সাহাবি জাবের ইবনে আব্দুল্লাহর (রা.) বাবা। মদিনার প্রভাবশালী গোত্র বনু খাজরাজের শাখা গোত্র বনু সালামার নেতা ছিলেন তিনি। নবীজির (সা.) হিজরতের আগে মদিনার যেসব নেতা মক্কায় গিয়ে নবীজির (সা.) হাতে বায়াত হয়েছিলেন এবং নবীজিকে (সা.) মদিনায় পূর্ণ নিরাপত্তা দেওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন, তাদের একজন আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে হারাম (রা.)।

ওহুদ যুদ্ধের আগে এক রাতে তিনি স্বপ্নে দেখেন, বদর যুদ্ধে শহীদ হওয়া সাহাবি মুবাশশির ইবনে মুনযির (রা.) তাকে বলছেন, শিগগির আপনি আমাদের সঙ্গে মিলিত হবেন। তিনি বললেন, কোথায়? মুবাশশির (রা.) বললেন, জান্নাতে। আমরা জান্নাতের যেখানে ইচ্ছা ঘুরে বেড়াব। আব্দুল্লাহ (রা.) মুবাশশিরকে বললেন, আপনি কি বদরের যুদ্ধে শহীদ হয়ে যাননি? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তবে আমি আবার জীবিত হয়েছি!

আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) তার এই স্বপ্ন আল্লাহর রাসুলকে (সা.) বললে তিনি বললেন, আপনি শিগগির আল্লাহর পথে শহীদ হবেন!

এর কিছু দিন পর ওহুদ যুদ্ধের দামামা বেজে ওঠে। আব্দুল্লাহ (রা.) বুঝতে পারেন, হয়ত এই যুদ্ধেই তিনি শহীদ হবেন। যুদ্ধের আগের রাতে তিনি নিজের ছেলে জাবেরকে (রা.) ডেকে বলেন, আমার মন বলছে, যুদ্ধে সর্বপ্রথম আমিই শহীদ হব। আমার কাছে রাসুলুল্লাহর (সা.) পর তুমিই সবচেয়ে প্রিয়। তোমাকে আমি বাড়িতে রেখে যাচ্ছি। তোমার বোনদের সাথে ভালো ব্যবহার করো আর আমার ওপর কিছু ঋণ আছে তা পরিশোধ করে দিও। (সহিহ বুখারি)

ওহুদের যুদ্ধের দিন সত্যিই মুসলমানদের মধ্যে সর্বপ্রথম তিনি শাহাদত লাভ করেন। মুশরিকরা তার লাশের নাক কান কেটে চেহারা বিকৃত করে ফেলে। যুদ্ধ শেষে তার লাশ কাপড়ে ঢেকে রাসুলুল্লাহর (সা.) সামনে আনা হয়। জাবের (রা.) বলেন, আমি আমার বাবার জন্য কাঁদছিলাম এবং তার চেহারা থেকে কাপড় সরিয়ে চুমু খাচ্ছিলাম। অনেকে আমাকে এমন করতে নিষেধ করছিলেন। কিন্তু রাসুলুল্লাহর (সা.) আমাকে নিষেধ করেছিলেন না।

এক পর্যায়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) তার চেহারা থেকে কাপড় সরিয়ে দিলেন। তার চেহারার বিকৃত অবস্থা দেখে আবাদুল্লাহর (রা.) বোন ফাতেমা বিনতে আমর (রা.) জোরে চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠলেন। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, যতক্ষণ তার লাশ ময়দানে পড়ে ছিল, ফেরেশতাগণ তাদের পাখা বিস্তার করে তাকে ছায়া দিয়ে রেখেছিলেন। (তাবাকাতে ইবনে সা'দ)

ওহুদ যুদ্ধের কিছু দিন পর রাসুলুল্লাহ (সা.) জাবেরকে দেখে বললেন, কী ব্যাপারে তোমাকে এমন চিন্তিত ও বিষণ্ন দেখাচ্ছে? তিনি বললেন, আমার বাবা চলে গেছেন কিন্তু রেখে গেছেন বিশাল অংকের ঋণ ও বহু সন্তান-সন্ততি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, আমি কি তোমাকে একটি সুসংবাদ দেব? আল্লাহ তাআলা সবার সঙ্গে পর্দার অন্তরালে থেকে কথা বলেন, কিন্তু তোমার বাবার সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছেন। তিনি তোমার বাবাকে বলেছেন, হে আমার বান্দা! আমার কাছে কিছু চাও, তোমাকে আমি তা দেব। তোমার বাবা বললেন, আমার আকাঙ্ক্ষা হলো, আমাকে দুনিয়ায় ফিরিয়ে দিন, আমি আবার আপনার রাস্তায় যুদ্ধ করে শহীদ হয়ে আসি। আল্লাহ তাআলা বললেন, এ ব্যাপারে ফয়সালা হয়ে গেছে যে, দুনিয়া থেকে যে একবার আসবে, সে আর কখনো সেখানে ফিরে যেতে পারবে না। আবদুল্লাহ (রা.) বললেন, হে আমার রব! তাহলে আমার কথা দুনিয়াবাসীকে জানিয়ে দিন। তখন আল্লাহ তাআলা এ আয়াত নাজিল করেছেন:

“যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদের কখনো মৃত মনে করো না, বরং তারা জীবিত এবং তারা তাদের প্রতিপালকের কাছ থেকে রিজিকপ্রাপ্ত। আল্লাহ তাদের নিজের অনুগ্রহে যা দিয়েছেন, তাতে তারা খুশি ও তৃপ্ত। আর তাদের ভাইয়েরা যারা এখনো তাদের সঙ্গে সম্মিলিত হয়নি তাদের এই অবস্থার প্রতিও তারা সন্তুষ্ট হয় যে, তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুঃখিত হবে না।” (সুরা আলে ইমরান: ১৬৯-১৭০) (সুনানে তিরমিজি)

ওএফএফ