ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) শেখ পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা পাঁচটি স্থাপনার নাম পরিবর্তনের দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)। এছাড়া, জুলাই অভ্যুত্থানের বিরোধিতাকারী শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও জানান বিক্ষোভকারীরা।
রোববার (২১ ডিসেম্বর) বিকেল পৌনে ৩টার দিকে উপাচার্যের কার্যালয়ের প্রধান ফটক অবরোধ করে এই কর্মসূচি পালন করা হয়। এসময় ডাকসুর নেতাকর্মীরা জানান, শেখ পরিবারের নামে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি হল, একটি হোস্টেল ও দুটি টাওয়ার রয়েছে। এসব স্থাপনা হলো—শেখ মুজিবুর রহমান হল, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, শেখ রাসেল টাওয়ার, বঙ্গবন্ধু টাওয়ার এবং সুলতানা কামাল হোস্টেল।
বিক্ষোভকারীদের দাবি, শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম পরিবর্তন করে ‘শহীদ ওসমান হাদি হল’ এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের নাম পরিবর্তন করে ‘বীর প্রতীক সেতারা বেগম হল’ করা হোক। শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ বিষয়ে ঐকমত্য রয়েছে বলে দাবি করেন তারা।
তবে এর আগে, ডাকসুর পক্ষ থেকে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের নাম ‘ফেলানী খাতুন হল’ করার প্রস্তাব দেওয়া হলে সংশ্লিষ্ট হলের শিক্ষার্থীরা তাতে আপত্তি জানান।
বিক্ষোভ চলাকালে ডাকসু নেতারা ‘ফ্যাসিবাদের আইকন, ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’, ‘ফ্যাসিবাদের ঠিকানা এই মাটিতে হবে না’, ‘আছে যত ফ্যাসিবাদ, করতে হবে উৎখাত’, ‘বাকশালের জনক কে, শেখ মুজিব’-সহ নানা স্লোগান দেন।
বিক্ষোভে বক্তব্য রাখতে গিয়ে শেখ ফজিলাতুন্নেছা হল সংসদের সাধারণ সম্পাদক মিফতাহুল জান্নাত রিফাত বলেন, তাদের হলের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর আকাঙ্ক্ষা হলো নারী মুক্তিযোদ্ধার নামে একটি মেয়েদের হলের স্বীকৃতি নিশ্চিত করা। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস বরাবরই পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা হয়, সেই বাস্তবতা থেকে বেরিয়ে এসে বীর প্রতীক ক্যাপ্টেন সেতারা বেগমের নামে হলটির নামকরণ চান শিক্ষার্থীরা।
ডাকসুর ভিপি আবু সাদিক কায়েম বলেন, তারা দুটি প্রধান দাবি নিয়ে আজকের কর্মসূচি পালন করেছেন। প্রথমত, ফ্যাসিবাদের আইকনদের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব স্থাপনা রয়েছে, সেগুলোর নাম অবিলম্বে পরিবর্তন করতে হবে। তিনি জানান, শিক্ষার্থীদের মতামত গ্রহণের পর শেখ মুজিবুর রহমান হলের জন্য ‘শহীদ ওসমান হাদি হল’ এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের জন্য ‘বীর প্রতীক সেতারা বেগম হল’ নাম প্রস্তাব করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শেখ রাসেল টাওয়ার, বঙ্গবন্ধু টাওয়ার ও সুলতানা কামাল হোস্টেলের নামও পরিবর্তনের দাবি জানানো হয়েছে।
আবু সাদিক কায়েম অভিযোগ করে বলেন, ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনো রেজিস্ট্রার ভবনে বসে ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে। শহীদ ওসমান হাদির হত্যার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এসব কার্যক্রম আর মেনে নেওয়া হবে না এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।
বিক্ষোভ শেষে ডাকসুর পক্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সাইমা হক বিদিশার কাছে একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
এফএআর/এমএমকে/এমএস