দেশজুড়ে

বিল ভরাটে পথে বসেছে অষ্টগ্রামের জেলেরা, ইজারা বাতিলের দাবি

প্রাকৃতিক ভরাটে সর্বস্ব হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলার রোদ্দা-মামদা-পাতিদিয়া-ডুইয়া বিল জলমহালের জেলে পরিবারগুলো। মাছ নেই, আয় নেই, সংসার চালানোই এখন তাদের জন্য যুদ্ধ। এমন পরিস্থিতিতে জলমহালের ইজারা বাতিল করে সরকারি দখলে নেওয়ার আবেদন জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট জেলে সমিতি।

জেলে সমিতি সূত্রে জানা গেছে, ভূমি মন্ত্রণালয়ের ২০২০ সালের ২৫ মার্চের এক স্মারকের মাধ্যমে ১৪২৭-১৪৩২ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত মেয়াদে উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় চাঁদের হাসি মৎস্যবীজী সমবায় সমিতিকে জলমহালটির ইজারা দেওয়া হয়। প্রথম চার বছর বার্ষিক ১৪ লাখ ৫ হাজার ৯২০ টাকা এবং পরবর্তী দুই বছর ২৫ শতাংশ বর্ধিত হারে ইজারামূল্য নির্ধারণ করা হয়। ১৪২৭-১৪৩১ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত নিয়মিত ইজারা পরিশোধ করা হলেও প্রকৃতির বিরূপ প্রভাবে বর্তমানে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বদলে গেছে।

সমিতির দাবি, প্রাকৃতিক কারণে জলমহালটির প্রায় ৬০ একর এলাকা বালুতে ভরাট হয়ে চর জেগে উঠেছে। এতে মাছ উৎপাদন প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। আয় না থাকায় জেলে পরিবারগুলো চরম আর্থিক সংকটে পড়েছে। অনেক পরিবার দিনমজুরি ও ঋণের ওপর নির্ভর করে কোনোভাবে টিকে আছে। ইজারা বহাল থাকলে অনাহার ছাড়া আর কোনো পথ থাকবে না বলে আশঙ্কা করছেন তারা।

জেলে মো. মঈন উদ্দিন মিয়া বলেন, আগে বিলে গভীর পানি ছিল। লিজ নেওয়ার পর ভ্যাট-ট্যাক্স ও প্রাকৃতিক ক্ষতির কারণে কয়েক বছরে প্রায় ২৬ লাখ টাকা লোকসান হয়। হ্যান্ডওভার দিতে চাইলেও মামলা-ভয়ের কারণে শেষ বছর কিস্তিতে চালাতে বাধ্য হই।

জেলে মোহাম্মদ সাখাওয়াত বলেন, ডিসি অফিসে একাধিকবার হ্যান্ডওভার দিতে গিয়েও তা গ্রহণ করা হয়নি। বালু ও নদীর স্রোতে বিল নষ্ট হয়ে প্রায় ৫০ লাখ টাকা খরচ হলেও কোনো আয় হয়নি। ঋণের চাপে জীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে।

এলাকাবাসী বাচ্চু মিয়া বলেন, আগে এখানে ২০ থেকে ৩০ হাত পানি ছিল, এখন এক ফোঁটাও নেই। পুরো বিল বালুতে ভরে গেছে। খাজনা দেওয়ার কোনো সামর্থ্য নেই, আমরা নিরুপায়।

কৃষক প্রেমানন্দ বৈষ্ণব বলেন, কয়েক বছরের মধ্যেই বিলে বালু জমে মাছ ধরার জায়গা নষ্ট হয়ে গেছে। জেলেদের আয়ের কোনো সুযোগ নেই। সরকার যেন তাদের দিকে নজর দেয়।

স্থানীয় কৃষক অজিত চন্দ্র দাস জানান, আগে এখানে প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। এখন পানি নেই, মাছও নেই। জেলেরা চরম কষ্টে আছে। সরকার সহায়তা করলে তারা বাঁচতে পারবে।

জেলের ছেলে শামীম বলেন, শৈশবে যেখানে গভীর পানি ছিল, এখন সেখানে মরুভূমির মতো অবস্থা। কাজ না থাকলে পরিবার নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে। ডিসি সাহেবের দয়া ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নেই।

মোহাম্মদ সাদত আলী নামে একজন বলেন, ছয় বছরে বালু ও পানির ক্ষতিতে আমাদের ৫০-৭০ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। খাজনা বেড়েছে, কিন্তু মাছ ধরার কোনো সক্ষমতা নেই। হ্যান্ডওভারও গ্রহণ করা হয়নি। পুনরায় তদন্ত করে এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি চাই।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান বলেন, সরকারি জলমহাল নীতিমালা, ২০০৯ অনুযায়ী চুক্তি সম্পাদনের পর ভরাট বা অন্য কোনো সমস্যার অজুহাত গ্রহণযোগ্য নয়। চুক্তি অনুযায়ী সরকারি পাওনা পরিশোধের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কোনো বকেয়া থাকলে বিধিমোতাবেক পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, প্রয়োজনে সার্টিফিকেট মামলাসহ সরকারের প্রচলিত সব আইনগত প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হবে। যারা জলমহাল নিয়েছে, তাদের সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করতে হবে। অন্যথায় জামানত বাজেয়াপ্ত করে পরবর্তী প্রক্রিয়ায় যাওয়া হবে।

এসকে রাসেল/এমএন/এএসএম