বর্তমান সময়ে যেসব দেশ সম্পর্কে খুব কম মানুষই জানেন তার মধ্য এশিয়ার দেশ উজবেকিস্তান এবং এর রাজধানী তাশখন্দ অন্যতম।
উজবেকিস্তান একসময় সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল। প্রায় ৩০ বছর আগে দেশটি স্বাধীন হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও বহুমুখী অর্থনৈতিক উন্নয়নের কারণে দেশটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। এই উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু হলো রাজধানী তাশখন্দ, যেখানে প্রায় ২৫ লাখ মানুষ বসবাস করে।
উজবেকিস্তানে ভ্রমণকারীরা সাধারণত তাশখন্দে বেশি সময় না কাটিয়ে সমরকন্দ ও বুখারার মতো প্রাচীন শহরে যান। এসব শহর একসময় বিখ্যাত সিল্ক রোডের অংশ ছিল। তবে রাজধানী তাশখন্দ যেভাবে দ্রুত আধুনিক হচ্ছে, তাতে ভবিষ্যতে এটি নিজেই একটি জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য হয়ে উঠতে পারে।
তাশখন্দের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি শহরের মাঝামাঝি অবস্থিত, যা অনেকের কাছেই বিস্ময়কর। বিমানবন্দর থেকে বের হয়েই চোখে পড়ে শহরের পরিচ্ছন্ন রাস্তা ও ফুটপাত। সর্বত্র দেখা যায় উজ্জ্বল পোশাক পরা পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের। আরেকটি বিষয় চোখে পড়ার মতো—গাড়িগুলোর বেশিরভাগই একই রকম। সম্প্রতি পর্যন্ত উজবেকিস্তানে বিক্রি হওয়া ৯০ শতাংশের বেশি গাড়ি ছিল শেভরোলেট।
কোনো শহরের সংস্কৃতি বোঝার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো তার খাবার। তাশখন্দে এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে জনপ্রিয় জায়গা হলো প্লভ সেন্টার (বা পিলাফ সেন্টার)। দেখতে এটি একটি বড় খেলার হলের মতো।
এখানে পাওয়া যায় উজবেকদের প্রিয় খাবার পিলাফ, যা তারা সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত খেয়ে থাকেন। দুপুরের পর এই খাবার সাধারণত পাওয়া যায় না। বিশাল কড়াইয়ে চাল, গাজর, খাসির মাংস ও নানা মসলা দিয়ে এটি রান্না করা হয়। চাইলে সেদ্ধ ডিম ও ঘোড়ার মাংসের সসেজও নেওয়া যায়। খাবারের সঙ্গে প্রায়ই মিষ্টি চা পরিবেশন করা হয়।
তাশখন্দের আরেকটি বিখ্যাত খাবারের জায়গা হলো চোরসু স্ট্রিট ফুড মার্কেট। এই ঢেকে রাখা বাজারে সারি সারি দোকানে মাংস, নরম পনিরসহ নানা খাবার বিক্রি হয়।
এখানে প্রচুর কোরিয়ান খাবারের দোকানও দেখা যায়, বিশেষ করে কিমচি। বিষয়টি অদ্ভুত মনে হলেও উজবেকিস্তান ও কোরিয়ানদের সম্পর্ক বহু পুরনো। ১৯ শতকের মাঝামাঝি থেকে কোরিয়ানরা রাশিয়ায় বসবাস শুরু করে। ১৯৩৭ সালে সোভিয়েত নেতা স্তালিন তাদের অনেককে উজবেকিস্তানে পাঠিয়ে দেন। এরপর থেকে তারা এখানে স্থায়ী হয়ে গেছেন এবং সফলভাবে বসবাস করছেন।
রাস্তার খাবার তাশখন্দে খুবই জনপ্রিয়। সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় খোলা আগুনে সেঁকা মাংসের শিক। মজার বিষয় হলো, এই ঐতিহ্যবাহী খাবার তৈরির পদ্ধতিই এখন লন্ডন থেকে লস অ্যাঞ্জেলেস পর্যন্ত আধুনিক ফুড মার্কেটে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
যারা রাস্তার খাবার পছন্দ করেন না, তাদের জন্য রয়েছে ইতালিয়ান, জর্জিয়ান ও কোরিয়ানসহ নানা আন্তর্জাতিক রেস্তোরাঁ।
সূত্র: সিএনএন
এমএসএম