আন্তর্জাতিক

ভেনেজুয়েলার পাশে থাকার ঘোষণা চীন-রাশিয়ার

সম্প্রতি ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে পূর্বের তুলনায় আরও কঠোর অবস্থান নিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। ভেনেজুয়েলার উপকূলে নৌযানে বিমান হামলা, ব্যাপক পরিসরে সেনা মোরতায়েন, তেলবাহী ট্যাংকার জব্দ এমনকি যুদ্ধেরও হুমকি দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের এমন পদক্ষেপ অবৈধ বলে কড়া সমালোচনা করে ভেনেজুয়েলার পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে দুই পরাশক্তি রাশিয়া ও চীন।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞাভুক্ত ভেনেজুয়েলার তেলবাহী জাহাজে বারবার হামলা ও তেল জব্দের ঘটনায় দেশটির বন্দরগুলোতে তেল রপ্তানি কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। গত সপ্তাহে ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ বা প্রস্থান করা নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকার আটকানোর ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই ঘোষণার পর থেকেই ভেনেজুয়েলার প্রধান বন্দরগুলোতে ট্যাংকারে তেল তোলা ও পাঠানোর কাজ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। অনেক ট্যাংকার এখন শুধু দেশের অভ্যন্তরীণ বন্দরগুলোর মধ্যেই তেল পরিবহন করছে।

রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক দিনে বেশ কয়েকটি ট্যাংকার তেল বোঝাই করলেও দেশ ছাড়তে পারেনি। ফলে কোটি কোটি ব্যারেল ভেনেজুয়েলার তেল ট্যাংকারেই আটকে রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রার কারণে আন্তর্জাতিক ক্রেতারা বড় ছাড়, চুক্তির শর্ত পরিবর্তন এবং অতিরিক্ত নিশ্চয়তা দাবি করছে।

এদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আবারও প্রকাশ্যে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা ছাড়ার আহ্বান জানিয়েছেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, তার জন্য সরে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে। পাশাপাশি তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, মাদুরো যদি শক্ত অবস্থান নেন তবে এটাই হবে তার শেষবার শক্ত হওয়ার সুযোগ। ট্রাম্প আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি যে তেল জব্দ করেছে, তা তারা ব্যবহার করবে অথবা বিক্রি করবে।

এই পরিস্থিতিতে চীন সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করেছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্পষ্ট করে জানিয়েছে, ভেনেজুয়েলার অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার পূর্ণ অধিকার রয়েছে এবং বেইজিং সব ধরনের একতরফা ও অবৈধ নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান বলেন, অন্য দেশের জাহাজ জব্দ করা আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন। ভেনেজুয়েলার উপকূলে যুক্তরাষ্ট্র চীনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করা তেল ট্যাংকার আটকানোর পর এই মন্তব্য করে বেইজিং।

একই দিন রাশিয়াও যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ ও ভেনেজুয়েলার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভান গিলের মধ্যে ফোনালাপে ওয়াশিংটনের কর্মকাণ্ড নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ক্যারিবীয় সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান সামরিক ও নৌ তৎপরতা পুরো অঞ্চলের জন্য গুরুতর পরিণতি ডেকে আনতে পারে এবং আন্তর্জাতিক নৌপরিবহণ হুমকির মুখে ফেলতে পারে। যে কোনো পরিস্থিতিতে ভেনেজুয়েলার নেতৃত্ব ও জনগণের প্রতি রাশিয়ার পূর্ণ সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করা হয়।

যে ট্যাংকারটি আটকানো হয়েছে সেটির নাম সেঞ্চুরিজ। হোয়াইট হাউসের দাবি, এটি ভেনেজুয়েলার ‘শ্যাডো ফ্লিট’-এর অংশ এবং নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল বহন করছিল। তবে ট্যাংকারটি যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় ছিল না। পানামার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, পানামার পতাকাবাহী ওই ট্যাংকারটি দেশের সামুদ্রিক নিয়ম লঙ্ঘন করেছে, নাম পরিবর্তন করেছে এবং ভেনেজুয়েলা থেকে তেল বহনের সময় নিজের ট্রান্সপন্ডার বন্ধ রেখেছিল।

ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, মাদুরোর সরকার তেলের অর্থ ব্যবহার করে মাদক সন্ত্রাস, মানবপাচার, হত্যা ও অপহরণ কার্যক্রমে অর্থ জোগাচ্ছে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে গত সেপ্টেম্বর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ক্যারিবীয় ও পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে। এমন ২৬ টির বেশি অভিযানে শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন।

সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান

কে এম