আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-৭ (চান্দিনা) আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছে চান্দিনা উপজেলা বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) বিকেলে চান্দিনা সরকারি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা। এসময় কাফনের কাপড় পরে নেতাকর্মীদের বিক্ষোভ করতে দেখা যায়। খবর পেয়ে যৌথবাহিনীর সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেন। এতে মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি হয়।
সম্প্রতি এ আসনে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব পদ থেকে অব্যাহতি নিয়ে বিএনপিতে যোগদান করে মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. রেদোয়ান আহমেদ। ফলে অপর মনোনয়নপ্রত্যাশী চান্দিনা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আতিকুল শাওন মনোনয়ন বঞ্চিত হন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা।
এর আগে গত ২৪ ডিসেম্বর সকাল ১১টায় বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে বিএনপিতে যোগদান করেন ড. রেদোয়ান আহমেদ। ওই দিন দুপুর ২টার দিকে তাকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়। এমনকি ওই দিন বিকেলেই সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় থেকে মনোনয়ন সংগ্রহ করেন আতিকুল আলম শাওন সমর্থিত নেতাকর্মীরা। এরপর চান্দিনার রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
২০০৬ সালে বিএনপি ছাড়েন রেদোয়ান আহমেদ। ২০০৭ সালে কর্নেল (অব.) অলি আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত এলডিপির মহাসচিব হিসেবে যোগদান করেন তিনি। ২০০৬ সালের পর থেকে শাওনের বাবা খোরশেদ আলম চান্দিনা উপজেলা বিএনপির হাল ধরেন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন খোরশেদ আলম। ২০১৮ সাল পর্যন্ত আমৃত্যু তিনি চান্দিনা উপজেলা ও কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
তার মৃত্যুর পর আতিকুল আলম শাওন বিএনপির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন পান। ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে শাওন বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে এই আসনের সর্বত্র প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন।
বিক্ষোভে পৌর বিএনপি সভাপতি এ বি এম সিরাজুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র শাহ্ মো. আলমগীর খান, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আরশাদ, কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক মো. শহীদুল ইসলাম, উপজেলা যুবদল সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক শাহজাহান মুন্সী, পৌর যুবদল আহ্বায়ক হাজী মো. নূরুল ইসলাম মুন্সী, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দল আহ্বায়ক ডা. সাইফুল্লাহ বাপ্পী, উপজেলা ছাত্রদল আহ্বায়ক শরীফ খাঁন, সদস্যসচিব কাইউম খাঁন, পৌর ছাত্রদল আহ্বায়ক মাহাবুবুল আলম দোলন ও সদস্যসচিব হানিফ মুন্সী সহ বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের শতশত নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
চান্দিনা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আরশাদ বলেন, গত ১৭ বছরে ড. রেদোয়ান আহমেদ চান্দিনা বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ২৯টি মামলা করেছে। দেড়শতাধিক নেতাকর্মী জেল খেটেছে। ৫ আগস্টের পরেও রাজধানীর বিভিন্ন হত্যা মামলায় আমাদের নেতাকর্মীদের নাম যুক্ত করে আসামি করেছেন। এসব বিষয় আমরা দলীয় হাইকমান্ডকে জানিয়েছি। তিনি নিজের সুবিধার জন্য একেকবার একক দলে যুক্ত হন। সুতরাং তিনি কোনোভাবেই চান্দিনা বিএনপির কাণ্ডারি হতে পারেন না। তাকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করার পর থেকে উপজেলার প্রত্যেকটা ইউনিটের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
তিনি আরও বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে আমাদের দাবি, ফ্যাসিস্ট হাসিনার ১৭ বছরে বারবার নির্যাতিত উপজেলা বিএনপির সভাপতি আতিকুল শাওনকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা হোক।
জাহিদ পাটোয়ারী/এমএন/এএসএম