জাতীয়

সস্তায় উষ্ণতার খোঁজ গুলিস্তানে, খুশি ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই

পৌষের হাড়কাঁপানো শীতে কাঁপছে রাজধানী। কুয়াশাচ্ছন্ন সকাল, হিমেল বিকেল, সন্ধ্যা আর রাতে এখন সবারই প্রথম প্রয়োজন একটু উষ্ণতা। আর এই উষ্ণতার খোঁজে মতিঝিল, সদরঘাট কিংবা জিপিওতে নানা কাজে আসা মানুষ একবারের জন্য হলেও ঢুঁ মারছেন গুলিস্তানের সড়কগুলোর অস্থায়ী শীতের কাপড়ের দোকানগুলোতে।

শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) রাত ৯টায় সরেজমিনে দেখা যায়, গুলিস্তানের মোড়ে পা রাখলেই কানে ভেসে আসছে হকারদের যান্ত্রিক কণ্ঠের আওয়াজ। তাদের হাঁকডাক আর মাইকের শব্দ। কেউ মাইক লাগিয়ে রেকর্ড করা আওয়াজ বাজাচ্ছেন, ‘বেছে নেন ৫০, দেখে নেন ১০০, ১৫০ আর ২০০ টাকা!’ রঙ-বেরঙের সোয়েটার, হুডি, জ্যাকেট আর মাফলারের পসরা সাজিয়ে বসেছেন শত শত হকার। ক্রেতাদের আকর্ষণে জুড়ি নেই তাদের ছন্দময় ও অভিনব হাঁকডাকের।

সাধ্য ও সাধের সমন্বয়

অন্য সময় ফুটপাতের হকারদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ থাকলেও, এখন চিত্রটা ভিন্ন। তীব্র শীতের এই মৌসুমে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের মুখেই যেন শান্তির ছাপ। কেরানীগঞ্জ থেকে আসা দিনমজুর রহমত আলী জাগো নিউজকে বললেন, বড় মার্কেটে যাওয়ার ক্ষমতা নাই ভাই। এখানে ১৫০ টাকায় যে জ্যাকেট পাইলাম, বাইরে কিনতে গেলে হাজার টাকা লাগতো। গরীবের জন্য এই গুলিস্তানই ভরসা।

শুধু নিম্নবিত্ত নয়, মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেককেও দেখা গেল আগ্রহ নিয়ে কাপড় যাচাই করতে। বেসরকারি চাকরিজীবী আরিফুল হক নিজের ছোট ছেলের জন্য একটি হুডি বেছে নিলেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, এখানে ভিড় বেশি ঠিকই, কিন্তু খুঁজলে বেশ ভালো মানের কাপড় পাওয়া যায়। দামও একদম সাধ্যের মধ্যে।

স্বস্তিতে কেনাকাটা

অন্যান্য সময়ের তুলনায় এখন হকার ও ক্রেতাদের মধ্যে তিক্ততা কম। বরং ক্রেতাদের প্রবল আগ্রহ আর বিক্রেতাদের হাসিমুখে পণ্য দেখানোর দৃশ্যই বেশি চোখে পড়ে। কেউ পরিবারের জন্য একবারে ৫-৬টি কাপড় কিনছেন, কেউ আবার ভিড় ঠেলে নিজের পছন্দের রঙটি খুঁজছেন।

বিক্রেতা মোবারক হোসেনের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, শীত বাড়ায় বিক্রি খুব ভালো। আমরা চাই অল্প লাভে বেশি বিক্রি করতে। মানুষ খুশি হয়ে কাপড় নিয়ে যাচ্ছে, এটাই বড় পাওয়া।

ব্যক্তিগত কাজে মিরপুর থেকে ফিরে গুলিস্তানে নেমেছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মিল্লাত মাহমুদ। মাইকের আওয়াজ শুনে পছন্দ করে ১৫০ টাকায় কিনেছেন একটি সোয়েটার। ১০০ টাকায় মাথার শীত টুপি আর ২০ টাকা দরে দুই জোড়া পায়ের মোজা।

জাগো নিউজকে এই শিক্ষার্থী বলেন, রাজধানীর যান্ত্রিক জীবনে গুলিস্তানের সড়ক এখন আর কেবল যানজটের এলাকা নয়। হাজারো মানুষের শীত নিবারণের ভরসাস্থল। ফুটপাতের এই ধুলোবালির মধ্যেই মিশে আছে শত শত পরিবারের উষ্ণ থাকার স্বপ্ন। সাধ্যের মধ্যে সাধ পূরণ করতে গুলিস্তান এখনো ঢাকায় শপিংয়ের অনন্য এক জায়গা।

এমডিএএ/এএমএ/এএসএম