শিক্ষা

জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষায় ‌‘সহজ’ প্রশ্ন, ভালো লিখে খুশি শিক্ষার্থীরা

দেড় দশকেরও বেশি সময় পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা। দীর্ঘ বিরতির পর অনুষ্ঠিত এ পরীক্ষায় অংশ নিতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছে অনেক শিক্ষার্থী। পাশাপাশি এ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তুলনামূলক সহজ হওয়ায় খুশি তারা।

রোববার (২৮ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বাংলা বিষয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সারাদেশের ৬১১টি কেন্দ্রে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এতে অংশ নিচ্ছে ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৫৯১ জন শিক্ষার্থী।

সকালে রাজধানীর দুটি কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, তীব্র শীত উপেক্ষা করে সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে পরীক্ষার কেন্দ্রে প্রবেশ করে শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে কেন্দ্রগুলোতে অভিভাবকদেরও উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়। বাংলা বিষয়ের ১০০ নম্বরের ৩ ঘণ্টার পরীক্ষা শেষে দুপুর ১টার দিকে শিক্ষার্থীরা বের হয়।

পরীক্ষা শেষে শিক্ষার্থীরা জানায়, বাংলা বিষয়ের প্রশ্নপত্র ‌‘মোটামুটি সহজ’ হয়েছে। পরীক্ষাও ভালো হয়েছে বলে জানায় তারা। তবে বৃত্তি পরীক্ষায় বাছাইকৃত শিক্ষার্থীরা অংশ নেওয়ায় তীব্র প্রতিযোগিতা হবে এবং শতভাগ নম্বর অর্জন করার বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে তাদের মধ্যে। অনেকে আবার বৃত্তি না পেলেও এ পরীক্ষায় অংশ নিতে পেরেও খুশি।

অভিভাবকরা বলছেন, প্রতিযোগিতামূলক এ বৃত্তি পরীক্ষা ফেরায় তাদের সন্তানরা পড়ার টেবিলমুখী হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে আগ্রহ বেড়েছে। এটি উৎসাহমূলক হিসেবে ইতিবাচকভাবে দেখছেন তারা।

রাজধানীর কাকরাইলে উইলস লিটল ফ্লাওয়ারস স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছে ১৮টি বিদ্যালয়ের এক হাজার ১৬৭ জন শিক্ষার্থী। এ কেন্দ্রে পরীক্ষা দেওয়া ইস্পাহানি গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী শিউলি আক্তার জানায়, প্রশ্নপত্র সহজ হয়েছে। সে লিখেছেও ভালো। তার প্রত্যাশা ৯০ থেকে ৯৫ পাবে। তবে তাতেও বৃত্তি পাওয়া সম্ভব কি না, তা জানে না শিউলি।

একই কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা। আনুভা শিকদার নামে এক পরীক্ষার্থী বলে, ‘পরীক্ষা ভালো দিয়েছি। ৯০ নম্বরের ওপরে পাবো। বহুনির্বাচনি অংশে ২০টায় সঠিক উত্তর দিয়েছি। সৃজনশীলও ভালো লিখেছি। বর্ণনামূলক প্রশ্ন, সারাংশ, ভাব-সম্প্রসারণ ও রচনাও কমন ছিল। লিখে এসেছি খুব ভালো করে। এখন খাতা মূল্যায়ন যে স্যারেরা করবেন, তাদের ওপরই সব নির্ভর করছে।’

অষ্টম শ্রেণির বাছাইকৃত ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী এবার জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। ফলে পরীক্ষা ভালো দিলেও বৃত্তি পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই বলে মনে করেন অভিভাবকরা। তবে দীর্ঘদিন পর এ প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাটা হওয়ায় খুশি তারা।

ইস্কাটন গার্ডেন হাই স্কুল থেকে এবার জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা দিচ্ছে সোহানুর রহমান। পরীক্ষা শুরুর পর তার মা আসমা খাতুন বাইরে অপেক্ষা করছিলেন। জানতে চাইলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘সিক্স-সেভেনে ছেলেটা পড়তেই বসেনি। ওর কিন্তু মাথা ভালো। কিন্তু বৃত্তি পরীক্ষা হবে এটা জানার পর থেকে এবার গত ৪-৫ মাস খুব পড়েছে। দিনে ৪-৫ ঘণ্টা করে পড়ালেখা করেছে। আমার ধারণা বৃত্তি পরীক্ষা না থাকলে ও এতটা পড়তো না। সেজন্য আমি মনে করি, এ ধরনের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাটা থাকা দরকার। এটা যদি রাখা হয়, তাহলে শিক্ষার্থীরা পড়ালেখায় মনোযোগী হবে।’

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার জাগো নিউজকে বলেন, প্রথম দিনের পরীক্ষায় তেমন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। এ পরীক্ষার সব প্রশ্ন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) প্রণীত অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের আলোকে প্রস্তুত করা হয়েছে। যারা ভালো প্রস্তুতি নিয়েছে, তাদের পরীক্ষা ভালো করার কথা।

প্রকাশিত সময়সূচি অনুযায়ী, সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) ইংরেজি, মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) গণিত এবং আগামী ৩১ ডিসেম্বর (বুধবার) বিজ্ঞান এবং বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত পরীক্ষা নেওয়া হবে।

এর আগে, সবশেষ ২০০৯ সালে অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর অষ্টম শ্রেণিতে চালু করা হয় জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা। সমালোচনার মুখে ২০২৩ সালে জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা না নিয়ে একই সিলেবাসের আদলে অষ্টম শ্রেণিতে বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া হয়।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর গত বছরও জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা হয়নি। নেওয়া হয়নি জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষাও। এ বছর থেকে দীর্ঘসময় পর অষ্টম শ্রেণিতে ফের চালু হলো জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা।

এএএইচ/এমএমকে/এমএস