ভারতের উত্তরাখণ্ডের দেহরাদুনে বর্ণবাদের প্রতিবাদ করায় হামলার শিকার হওয়া অ্যাঞ্জেল চাকমা মারা গেছেন। ২৪ বছর বয়সি এমবিএ পড়ুয়া অ্যাঞ্জেল চাকমা ছুরিকাঘাতে আহত হবার ১৭ দিন দিন পর বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তার বাবা ভারতের সীমান্তরক্ষী বিএসএফের একজন সদস্য।
জানা গেছে, অ্যাঞ্জেল চাকমা ত্রিপুরার উনকোটি জেলার নন্দনগরের বাসিন্দা ছিলেন। তিনি উত্তরাখণ্ডের দেহরাদুনের জিজ্ঞাসা ইউনিভার্সিটির এমবিএ শিক্ষার্থী। গত ৯ ডিসেম্বর দেহরাদুনের সেলাকুই এলাকায় হামলার শিকার হন তিনি। সেদিন অ্যাঞ্জেল চাকমা তার ভাই মাইকেল চাকমার সঙ্গে বাড়ির প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে বাইরে বেরিয়েছিলেন।
পুলিশের তথ্যমতে, অ্যাঞ্জেল চাকমা ও তার ভাই মাইকেল চাকমা একটি মদের দোকানের পাশের খাবারের দোকানে ছিলেন। এ সময় একদল মদ্যপ ব্যক্তি তাদের উদ্দেশে বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্য করে বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।
অভিযোগ অনুযায়ী, ওই সময় একদল যুবক তাদের উদ্দেশে ‘চাইনিজ’, ‘চিঙ্কি’ ও ‘মোমোস’ বলে অবমাননাকর মন্তব্য করে। দুই ভাই এসব জাতিগত ও বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্যের প্রতিবাদ করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং দ্রুত সহিংসতায় রূপ নেয়। অভিযুক্তরা মদ্যপ অবস্থায় ছিল এবং কয়েক মিনিটের মধ্যেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। অ্যাঞ্জেলের মাথা ও পিঠে ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয় এবং তিনি ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন। পরে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়।
দেহরাদুনের এসপি সিটি প্রমোদ কুমার জানিয়েছেন, সংঘর্ষের সময় ছয়জন ব্যক্তি অ্যাঞ্জেলের ওপর হামলা চালায়। ধারালো অস্ত্র ও একটি ‘কড়া’ (লোহার ব্রেসলেট) ব্যবহার করে তাকে মারাত্মকভাবে আহত করা হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, হামলাকারীরা অ্যাঞ্জেল চাকমাকে একাধিকবার ছুরিকাঘাত করে। এতে তার পেট, মাথা ও পিঠে গুরুতর জখম হয় এবং মেরুদণ্ডে মারাত্মক আঘাত লাগে। সংকটজনক অবস্থায় তাকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। টানা দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় চিকিৎসাধীন থাকার পর তিনি মারা যান।
নিহতের ভাই মাইকেল চাকমার অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ একটি এফআইআর দায়ের করেছে এবং গত ১৪ ডিসেম্বর এ মামলায় পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার হওয়া অভিযুক্তরা হলেন— সাহাসপুরের শঙ্করপুর এলাকার অবিনাশ নেগি, প্রেমনগর থানার ধূলকোট এলাকার সৌর্য রাজপুত, প্যাটেল নগরের নয়াগাঁও পেলিয়ার বাসিন্দা সুরজ খাওয়াস (স্থায়ী ঠিকানা মণিপুর), তিলওয়াড়ির সুমিত এবং বায়ানখালার আয়ুষ বদোনি। অভিযুক্তরা সবাই শিক্ষার্থী এবং বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
অ্যাঞ্জেল চাকমার মৃত্যুর পর পুলিশ মামলায় হত্যাসংক্রান্ত ধারাগুলো যুক্ত করেছে এবং তদন্ত চলছে।
সূত্র : ফ্রি প্রেস জার্নাল/ দ্য হিন্দু
কেএম