রাজনীতি

সিইসির সঙ্গে বিএনপির বৈঠক, মনোনয়নপত্রের তথ্য স্পষ্ট করার আহ্বান

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমার সময় শেষ হচ্ছে সোমবার (২৯ ডিসেম্বর)। এই পর্যায়ে এসে এতে দেওয়া তথ্যের বিষয়ে স্পষ্টভাবে জানতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল বৈঠক করেছে।

রোববার (২৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে এ বৈঠক হয়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিষয়টি ছোট, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ। মনোনয়নপত্র জমার সময় সন্তানেরও আয়করের তথ্য দিতে হবে- এমন বিষয় রয়েছে। এটা নিয়ে অনেকে সমস্যায় পড়ছেন। অনেক প্রার্থীর সন্তান এখনো উপার্জনক্ষম নয়, অনেকে দেশের বাইরে থাকেন কিংবা আলাদাভাবে নিজেরা ট্যাক্স জমা দেন।’

এ নিয়ে জটিলতা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) চিঠি দিয়েছি, যেন দ্রুত স্পষ্ট করা হয়। তা না হলে সঙ্গত কারণে সমস্যার সৃষ্টি হবে। কমিশন একমত, তারা এটা বোঝাতে চাননি। কমিশন নির্ভরশীল সন্তানের তথ্য দিতে বলেছে। ব্যাপারটা বিভ্রান্তিকর। এ নিয়ে কমিশন ব্যাখ্যা দেবে, সমস্যা দূর হয়ে যাবে।’

এমন স্পষ্টীকরণে সব দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর উপকার হবে বলে উল্লেখ করেন নজরুল ইসলাম।

এআই ও ফ্যাক্টচেকসামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) অপব্যবহার রোধের বিষয়ে ইসির উদ্যোগ সম্পর্কে বৈঠকে অবহিত হয়েছে বিএনপি প্রতিনিধিদল।

নজরুল ইসলাম বলেন, এআই দিয়ে মানহানিকর কিছু করলে ইসি যেন শক্ত ভূমিকা নেয় সে বিষয়ে অনুরোধ করা হয়েছে। ইসি ও সরকারের প্রতিনিধিরা এ বিষয়ে সক্রিয় রয়েছে।

এছাড়া, ফ্যাক্টচেক করে কোনো কিছু ভুয়া হলে দ্রুত চিহ্নিত করার উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে ইসিকে। পাশাপাশি আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

সময় বাড়ানোবিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য জানান, মনোনয়নপত্র জমার সময় বাড়ানোর বিষয়ে ইসির সঙ্গে তাদের কোনো আলোচনা হয়নি।

তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমাদের দলের কোনো সিদ্ধান্ত নেই। এটি আমাদের আলোচনার কোনো এখতিয়ারে ছিল না আজকে। তাই আমরা করিনি।’

জামায়াতের সমাবেশনির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর জামায়াতে ইসলামী ৩ জানুয়ারি সমাবেশের ডাক দিয়েছে। এতে আচরণবিধি লঙ্ঘনের কোনো বিষয় রয়েছে কি না এবং এ নিয়ে ইসির দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে কি না- জানতে চান সাংবাদিকরা।

জবাবে বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘এ নিয়ে কোনো আলোচনা করিনি। আমার জানা মতে, নির্বাচনি প্রচারণা বন্ধ, কিন্তু সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ নেই। ওনারা যা করবেন সেটা আচরণবিধি ভঙ্গ হয় কি না এটা ইসি বুঝবে আর তারা বুঝবে।’

শরিকদের সঙ্গে বিএনপির সমঝোতা ও প্রার্থী বদল সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘শরিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে অনেক কিছু হয়েছে। তারপরে এখনো সময় আছে।’

এনসিপি-জামায়াত জোটএ বিষয়ে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল হিসেবে সব রাজনৈতিক দলের স্বাধীন সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার স্বীকার করে। যদি কোনো দল তার ঘোষিত আদর্শ অনুযায়ী অন্য কোনো দলের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে চায় সে অধিকার তাদের আছে। অবশ্য, আমরা এটাও দেখলাম- ভাবনার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে তাদের অনেক নেতা দল ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন।’

নতুন দল এনসিপির মতাদর্শের সঙ্গে জামায়াতের আদর্শ যাচ্ছে না বলে মনে করেন বিএনপির এ নেতা। তিনি বলেন, ‘অর্থাৎ মনে হয় যেন তাদের ঘোষিত আদর্শ বা ভাবনার সঙ্গে নতুন চিন্তা যাচ্ছে না আর কি। এটা তাদের ব্যাপার, এটা আমাদের ব্যাপার না।’

বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগএনসিপির দলছুট নেতারা বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করছেন কি না- জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারবো না। এটি দলের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।’

এনসিপির সঙ্গে যোগ হতে বিএনপির আদর্শিক কোনো সমস্যা দেখছেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, সবাই দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল। আমরা বিশ্বাস করি গণতন্ত্রে, দেশের উন্নয়নে। তবে সব ব্যাপারে একমত হলে তো এক দল করতাম। তাহলে আলাদা দল থাকতাম না।’

সিইসির সঙ্গে এ বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ ও দলটির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য মোহাম্মদ জকরিয়া উপস্থিত ছিলেন।

এমওএস/একিউএফ/এমএস