রোববার সন্ধ্যায় পোশাককর্মী হারুন মিয়া ও তার স্ত্রী দুই সন্তানকে নিয়ে গাজীপুর থেকে রাজধানীর সদরঘাটে আসেন। লঞ্চ টার্মিনালের এক কোণে বসে ছিলেন তারা। জিজ্ঞেস করতেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বললেন, গাজীপুর থেকে রওয়ানা হয়ে জ্যাম ঠেলে ঘাটে পৌঁছাতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। লঞ্চ ছাড়বে না। সঙ্গে ছোট বাচ্চা আর পরিবার নিয়ে এই শীতের রাতে কোথায় যাবো?
ঘনকুয়াশার কারণে নৌ-দুর্ঘটনা এড়াতে রাজধানী সদরঘাট থেকে দক্ষিণাঞ্চলের সব রুটে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। রোববার (২৮ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে এই নির্দেশনা কার্যকর করা হয়। কোনো আগাম ঘোষণা ছাড়া হঠাৎ লঞ্চ চলাচল বন্ধ হওয়ায় সদরঘাটে আসা হারুন মিয়ার মতো হাজার হাজার যাত্রী চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। অনেক যাত্রী টার্মিনালেই রাত কাটান।
এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ঘনকুয়াশার কারণে নৌপথের দৃশ্যমানতা কমে আসায় যাত্রীনিরাপত্তার স্বার্থে চাঁদপুর ও দক্ষিণাঞ্চলে লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকবে। এছাড়া যে সব লঞ্চ এরইমধ্যে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে মাঝপথে রয়েছে, তাদের অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল অধ্যাদেশ, ১৯৭৬ অনুযায়ী নিরাপদ স্থানে নোঙর করে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
সদরঘাটে গিয়ে দেখা যায়, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালীসহ বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীরা ঘাটে অপেক্ষা করছিলেন। হঠাৎ লঞ্চ বন্ধের খবর আসে। ঘাটের মাইকেও ঘোষণা প্রচার করা হয়। এসময় ক্ষুব্ধ হন যাত্রীরা।
যাত্রীদের অভিযোগ, আগে থেকে আবহাওয়া বার্তা বা লঞ্চ বন্ধের তথ্য না পাওয়ায় তারা মালামাল ও পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। অনেকে লঞ্চ ছেড়ে আবার পরিচিতজনদের বাসা বাড়িতে ফিরছিলেন।
সদরঘাটে পটুয়াখালীগামী লঞ্চের জন্য অপেক্ষারত বৃদ্ধ আব্দুল মালেক বলেন, ঢাকার এক হাসপাতালে ১০ দিন চিকিৎসার পর বাড়ি ফেরার কথা ছিল। তিনি বলেন, মিরপুর থেকে কষ্ট করে ঘাটে এলাম, এখন শুনি লঞ্চ চলবে না। এই অসুস্থ শরীর নিয়ে এখন কোথায় যাবো? থাকার জায়গাও নেই, টাকাও শেষ।
ভোগান্তির কথা জানান গাজীপুর থেকে আসা পোশাক শ্রমিক মরিয়ম বেগম। তিনি বলেন, গাজীপুর থেকে অনেক কষ্টে জ্যাম ঠেলে সদরঘাট এসেছি বরিশাল যাওয়ার জন্য। এসে দেখি লঞ্চ বন্ধ। আগে থেকে জানলে আসতাম না। বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে কনকনে শীতে সারারাত ঘাটে বসে থাকা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
ঢাকা নদী বন্দরের (সদরঘাট) যুগ্ম পরিচালক (নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক) মুহম্মদ মোবারক হোসেন বলেন, সন্ধ্যার পর থেকেই বুড়িগঙ্গায় ঘনকুয়াশা। সামনের কিছুই দেখা যাচ্ছে না। বড় নদীগুলোতে কুয়াশা আরও ভয়াবহ। এ অবস্থায় লঞ্চ চালানো আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে। কুয়াশা না কাটা পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে।
বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সাধারণত দক্ষিণাঞ্চলের লঞ্চগুলো সন্ধ্যার পরই ঘাট ছাড়ে। তবে ঘনকুয়াশা পড়বে সেই তথ্য আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে আগেভাগে তাদের দেওয়া হয়নি।
সম্প্রতি চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে ঘনকুয়াশার কারণে দুই লঞ্চের সংঘর্ষে চারজন নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। সেই দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়াতে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ কোনো ঝুঁকি নিতে চাচ্ছে না। কুয়াশা পুরোপুরি না কাটা পর্যন্ত কোনো নৌযানকে চলাচলের অনুমতি দেওয়া হবে না বলেও জানায় কর্তৃপক্ষ।
এমডিএএ/এসএনআর/জেআইএম