আন্তর্জাতিক

দ্য ইকোনমিস্টের বিচারে ২০২৫ সালের ‘সেরা দেশ’ কোনটি?

প্রভাবশালী ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট তাদের বাৎসরিক মূল্যায়নে ২০২৫ সালের ‘সেরা দেশ’ ঘোষণা করেছে। প্রতিবছর বড়দিনে প্রকাশিত এই তালিকায় সবচেয়ে সুখী বা সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশ নয়, বরং যে দেশটি এক বছরে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক বা সামগ্রিকভাবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক পরিবর্তন দেখাতে পেরেছে, তাকেই ‘কান্ট্রি অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে বেছে নেওয়া হয়।

দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, ২০২৫ সাল ছিল বিশ্ব রাজনীতিতে অস্থিরতার বছর। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতিতে বৈশ্বিক বাণিজ্যে ধাক্কা লাগে, গাজা ও সুদানের মতো অঞ্চলে ভয়াবহ সংঘাতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। তবে এই অস্থিরতার মধ্যেও কয়েকটি দেশ তুলনামূলকভাবে দক্ষতার সঙ্গে সংকট মোকাবিলা করেছে। কানাডায় জনপ্রিয়তাবাদী নয়, বরং একজন শান্ত টেকনোক্র্যাট প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। মলদোভায় রাশিয়াপন্থি দলকে প্রত্যাখ্যান করেন ভোটাররা। ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে একটি নড়বড়ে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

দক্ষিণ কোরিয়ায় গণতন্ত্রের ওপর বড় ধরনের হুমকি কাটিয়ে ওঠে দেশটি। আগের বছর প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল পার্লামেন্ট বন্ধে সেনা মোতায়েন করে সামরিক আইন জারির চেষ্টা করেছিলেন। তবে আইনপ্রণেতা, বিক্ষোভকারী ও প্রতিষ্ঠানগুলোর দৃঢ় অবস্থানের ফলে সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয় এবং ২০২৫ সালে সাবেক এই প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলার বিচার শুরু হয়।

আরও পড়ুন>>২০২৫ সালের সেরা সিইও কে?২০২৫ সালে কতটা মিললো পূর্বাভাস২০২৫ সালে অস্থিরতার মধ্যেও ভালো করেছে কোন দেশের অর্থনীতি?

ব্রাজিলও সাংবিধানিক শৃঙ্খলা রক্ষার একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। ২০২২ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের পর ক্ষমতা আঁকড়ে ধরতে অভ্যুত্থানের চেষ্টা করা সাবেক প্রেসিডেন্ট জেইর বলসোনারোকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে ২৭ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। একই সঙ্গে, আমাজনে বন উজাড়ের গতি কমাতে সক্ষম হয় দেশটি। যদিও রাশিয়ার প্রতি সহনশীল পররাষ্ট্রনীতি তাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে।

এসব দেশের মধ্যে দ্য ইকোনমিস্টের বিচারে চূড়ান্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল আর্জেন্টিনা ও সিরিয়া। আর্জেন্টিনার অগ্রগতি ছিল মূলত অর্থনৈতিক। প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলেই ২০২৩ সাল থেকে মুক্তবাজারমুখী সংস্কার শুরু করেন। ২০২৫ সালেও তিনি সেই কঠোর সংস্কার অব্যাহত রাখেন। এর ফলে মূল্যস্ফীতি ২০২৩ সালের ২১১ শতাংশ থেকে নেমে প্রায় ৩০ শতাংশে আসে, দারিদ্র্যের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এবং বাজেট নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও দুর্নীতির অভিযোগ আর্জেন্টিনার সামনে এখনো বড় ঝুঁকি হিসেবে রয়ে গেছে।

অন্যদিকে, সিরিয়ার অগ্রগতি ছিল রাজনৈতিক ও মানবিক দিক থেকে ঐতিহাসিক। মাত্র এক বছর আগেও দেশটি ছিল বাশার আল-আসাদের স্বৈরশাসনের অধীনে। দীর্ঘ ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধে সেখানে প্রাণ গেছে পাঁচ লক্ষাধিক মানুষের, দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন ৬০ লাখেরও বেশি। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে বিদ্রোহীদের হাতে ক্ষমতা হারিয়ে দেশ ছাড়েন আসাদ।

আরও পড়ুন>>আসাদ-পরবর্তী সিরিয়ায় এক বছরে কতটা পরিবর্তন হলো?শত্রু থেকে মিত্র/ ট্রাম্পের সঙ্গে আল শারার বৈঠক কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?কেমন যাবে নতুন বছর/ মধ্যপ্রাচ্যে ভালো-মন্দের মাঝে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ

নতুন শাসক আহমেদ আল-শারার নেতৃত্বে সিরিয়ায় অনেকেই চরমপন্থি শাসন বা বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা করেছিলেন। কিন্তু দ্য ইকোনমিস্টের মতে, বাস্তবে তা ঘটেনি। নারীদের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়নি, স্বাভাবিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবন ফিরে এসেছে। পশ্চিমা দেশ ও উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত হয়েছে এবং নিষেধাজ্ঞা শিথিল হওয়ায় অর্থনীতিতেও পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত মিলছে।

যদিও সিরিয়ায় এখনো সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতা, মিলিশিয়াদের তৎপরতা এবং শাসনব্যবস্থার ভঙ্গুরতা বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে। তারপরও ২০২৪ সালের তুলনায় ২০২৫ সালে দেশটি অনেক বেশি শান্ত ও স্থিতিশীল ছিল। ভয় আগের মতো সর্বব্যাপী নয়, স্বাভাবিক জীবনে ফিরছে সাধারণ মানুষ। এরই মধ্যে প্রায় ৩০ লাখ সিরীয় শরণার্থী দেশে ফিরেছেন।

এই সব দিক বিবেচনায় দ্য ইকোনমিস্টের বিচারে ২০২৫ সালের ‘সেরা দেশ’ নির্বাচিত হয়েছে সিরিয়া।

কেএএ/