দেশজুড়ে

বেনাপোল বন্দরে বাড়লো মাশুল, ব্যবসায়ীদের ক্ষোভ

দেশের সর্ববৃহৎ বেনাপোল স্থলবন্দরের সেবা মাশুলের হার পাঁচ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। প্রতিটি সেবার বিপরীতে কর, টোল, মাশুলের পরিমাণ আগের চেয়ে এই হারে বেড়েছে।

২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে নতুন এ মাশুল কার্যকর করা হবে। এ নিয়ে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

দেশের অন্য স্থলবন্দরের তুলনায় বেনাপোল স্থলবন্দরে মাশুল কিছুটা বেশি। তাই বেনাপোল বন্দরের জন্য আলাদা প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মাদ মানজারুল মান্নান সই করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বেনাপোল স্থলবন্দরে ২৭ ধরনের সেবার বিপরীতে মাশুল আদায় করা হয়। যেসব যাত্রী বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট ব্যবহার করে যাতায়াত করেন, তাদেরকে বেনাপোল স্থলবন্দরের প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল ব্যবহার করার জন্য প্রবেশ ফি, ওয়েটিং সার্ভিস, টার্মিনাল চার্জ বাবদ তাদের জন্য ২০২৫ সালে মাশুলের পরিমাণ ছিল ৪৯ টাকা ৭৯ পয়সা। ২০২৬ সালের জন্য সেটা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৫২ টাকা ২৭ পয়সা।

বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি করা বাস, ট্রাক ও লরি প্রবেশ করলে এখন ১৮৪ টাকা ৭০ পয়সা দিতে হবে। আগে এর পরিমাণ ছিল ১৭৫ টাকা ৯০ পয়সা। মোটরকার, জিপ, পিকআপ, থ্রি-হুইলারের জন্য মাশুল ১১০ টাকা ৮২ পয়সা। আগে ছিল ১০৫ টাকা ৫৪ পয়সা। মোটরসাইকেল, বাইসাইকেলের জন্য নতুন মাশুল ৩৬ টাকা ৯৫ পয়সা। আগে ছিল ৩৫ টাকা ১৯ পয়সা। বেনাপোল স্থলবন্দরে ওজন মাপার যন্ত্র ব্যবহারের মাশুল ট্রাক, লরিতে দিতে হতো ৮৪ টাকা ৪৩ পয়সা। এখন দিতে হবে ৮৮ টাকা ৬৫ পয়সা। কাগজপত্র প্রক্রিয়াকরণ মাশুল বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৯৫ টাকা ৭ পয়সা, আগে নেওয়া হতো ১৮৫ টাকা ৭৮ পয়সা। কোনো যানবাহন ইয়ার্ডে সারা রাত থাকলে আগে নেওয়া হতো ১০৬ টাকা ১৮ পয়সা। এখন দিতে হবে ১১১ টাকা ৪৯ পয়সা। এছাড়া গুদামে পণ্য রাখলে তার মাশুল বেড়েছে পণ্য রাখার সময় অনুযায়ী। পণ্য হ্যান্ডলিং চার্জও বেড়েছে। প্রতি টন পণ্য লোড আনলোড চার্জ আগে ছিল ৫৩ টাকা ১০ পয়সা। এখন সেটা হবে ৫৫ টাকা ৭৬ পয়সা।

একইভাবে যন্ত্রাংশ (ইকুইপমেন্ট) ব্যবহার করলে আগে নেওয়া হতো ১২৭ টাকা ৩৯ পয়সা। ১ জানুয়ারি থেকে নেওয়া হবে ১৩৩ টাকা ৭৬ পয়সা। এভাবে সব ধরনের মাশুলের পরিমাণই বেড়েছে।

বেনাপোল ছাড়া অন্য স্থলবন্দরগুলোতেও মাশুল বেড়েছে পাঁচ শতাংশ হারে। তবে সেটা বেনাপোলের তুলনায় অনেক কম। যেসব পাসপোর্টযাত্রী বেনাপোল ছাড়া অন্য স্থলবন্দর ব্যবহার করবেন, তাদের জন্য ২০২৫ সালে মাশুলের পরিমাণ ছিল ৪৯ টাকা ৭৯ পয়সা। নতুন বছরের জন্য তা বাড়িয়ে ৫২ টাকা ২৭ পয়সা করা হয়েছে।

বেনাপোল স্থলবন্দর ছাড়া অন্য বন্দর দিয়ে আমদানি করা বাস, ট্রাক ও লরির জন্য এখন ১৫৯ টাকা ২২ পয়সা দিতে হবে। আগে এর পরিমাণ ছিল ১৫১ টাকা ৬৪ পয়সা। মোটরকার, জিপের জন্য মাশুল ৯৫ টাকা ৫২ পয়সা। মোটরসাইকেল, স্কুটার, বেবি ট্যাক্সি, থ্রি-হুইলারের জন্য নতুন মাশুল ৪৭ টাকা ৮৩ পয়সা। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি করলেও পণ্য ভেদে মাশুলের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে।

এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বেনাপোল আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সহ-সভাপতি আমিনুল হক বলেন, ‌‘কথা ছিল বন্দরের উন্নয়ন, পর্যাপ্ত ক্রেন, ফর্কলিফট, গুদাম বাড়িয়ে বন্দরের মাশুল বৃদ্ধি করা হবে। কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষ কোনো উন্নয়ন না করে প্রতি বছরে বন্দরের অভ্যন্তরে আমদানিকৃত পণ্য রাখার ভাড়াসহ অন্যান্য বিলের ওপর চক্রবৃদ্ধি হারে পাঁচ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি করে চলেছে। বর্তমানে ভাড়া ২০০ গুণ বেড়েছে। ব্যবসায়ীসহ কোনো সংগঠন এ ব্যাপারে কিছুই বলছে না। দিন দিন অবস্থা যা হচ্ছে ভাড়া বাড়তে বাড়তে একদিন ভাড়া দিতে না পেরে মালামাল বন্দরে রেখে আসতে হবে।’

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, ‘বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রতিবছর যেভাবে বন্দরের চার্জ বাড়িয়ে চলেছে, সেটা ব্যবসায়ীদের জন্য ক্ষতিকর। এভাবে চক্রবৃদ্ধি হারে মাশুল বাড়াতে থাকলে বন্দরটি ধ্বংস হয়ে যাবে। এই খরচ আমদানিকৃত পণ্যের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কারণে বাজারে পণ্যের দামও বেড়ে যাবে। এ বিষয়ে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসাসিয়েশনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রতিবছরের মতো এবারও মাশুল বাড়ানো হয়েছে। মাশুলই স্থলবন্দরের আয়ের উৎস। আগামী ১ জানুয়ারি থেকে নতুন মাশুল কার্যকর করা হবে। এটা প্রধান কার্যালয়ের সিদ্ধান্ত। আমরা বাস্তবায়ন করবো মাত্র।’

মো. জামাল হোসেন/এসআর/এমএস