তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ইন্তেকালে শোকস্তব্ধ পটুয়াখালী। তার মৃত্যুর খবরে জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা কর্মীদের স্মৃতিতে ফিরে এসেছে ২০০১ সালে পটুয়াখালীতে তার ঐতিহাসিক ও আবেগঘন আগমনের দিনগুলো।
২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্বাচনি প্রচারণার অংশ হিসেবে বেগম খালেদা জিয়া সর্বশেষ পটুয়াখালী সফর করেন। নির্ধারিত সময়ের প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর তিনি পটুয়াখালীতে পৌঁছালেও তাকে এক নজর দেখার আশায় জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী পুরো সময় রাস্তায় ও জনসভা স্থলের মাঠে অপেক্ষায় ছিলেন। যে স্মৃতি আজও অনেককে আবেগাপ্লুত করে তোলে।
সফরের শুরুতে তিনি ঢাকা থেকে লঞ্চযোগে বাউফল উপজেলার ধুলিয়া লঞ্চঘাটে পৌঁছান। সেখানে থেকে গাড়িবহরে তিনি পটুয়াখালীর বিভিন্ন সংসদীয় আসন ঘুরে দেখেন এবং চারটি আসনের মনোনীত প্রার্থীদের নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ নেন।
পটুয়াখালীর পিডিএস মাঠে অনুষ্ঠিত জনসভাকে কেন্দ্র করে জেলাজুড়ে সৃষ্টি হয়েছিল অভূতপূর্ব উচ্ছ্বাস ও জনসমাগম। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দুঃখ-দুর্দশা, কষ্ট ও বঞ্চনার কথা তিনি সরাসরি শোনেন এবং তা তার বক্তব্যেও গুরুত্ব পেয়েছিল।
পটুয়াখালী জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আলামীন হাওলাদার বলেন, ‘খালেদা জিয়া যখন পটুয়াখালীতে আসেন তখন আমি স্কুলে পড়ি। তাকে এক নজর দেখার জন্য আমরা তিন বন্ধু সারারাত রিকশায় ঘুমিয়েছিলাম। সকালে তাকে দেখতে গাছে উঠতে গিয়ে ডাল ভেঙে পড়ে যাই। সেদিন তার বক্তব্য এবং পটুয়াখালীর মানুষ নিয়ে যে চিন্তা ভাবনা দেখেছি, তা আজও মনে ভাসে।’
পটুয়াখালী জেলা ছাত্রদলের সভাপতি শামীম চৌধুরী বলেন, ‘তার আগমনকে কেন্দ্র করে মিছিল সহকারে পিডিএস মাঠে জনসভা হয়। একটি গাছে উঠে দাঁড়িয়ে তাকে এক নজর দেখার সুযোগ হয়েছিল, সেই স্মৃতি আজও চোখ ভিজিয়ে দেয়।’
পটুয়াখালী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান টোটন বলেন, ‘ঢাকায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাক্ষাতের সময় তিনি আমার পরিবারের খোঁজখবর নিয়েছিলেন। আর পটুয়াখালী সফরের দিন টানা বৃষ্টির মধ্যেও আমিসহ লাখ লাখ মানুষ প্রায় ২৪ ঘণ্টা রাস্তায় ও মাঠে দাঁড়িয়েছিলাম তাকে এক নজর দেখার জন্য।’
পটুয়াখালী জেলা বিএনপির সভাপতি সেনাংশু সরকার কুট্টি বলেন, ‘২০০১ সালের নির্বাচনে পটুয়াখালীর এক আসনের মনোনীত প্রার্থী আলতাফ হোসেন চৌধুরীর প্রচারণায় তিনি (খালেদা জিয়া) এখানে আসেন। তখন আমি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতিতে তিনি দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দুঃখ-কষ্ট মনোযোগ দিয়ে শুনেছিলেন। তাকে দেখার আশায় মানুষ দুই থেকে তিন দিন আগেই মাঠে এসে অবস্থান নিয়েছিল।’
দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর ৩০ ডিসেম্বর ভোর ৬টায় ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে বেগম খালেদা জিয়া শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তার ইন্তেকালে পটুয়াখালী জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের পক্ষ থেকে শোকসভা, দোয়া মাহফিল ও কালো ব্যাজ ধারণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
মাহমুদ হাসান রায়হান/এফএ/জেআইএম