প্রথমবার দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেগম খালেদা জিয়া দায়িত্ব নিয়েছিলেন ১৯৯১ সালে। তার মাত্র ২ বছর পরই ঢাকায় বসেছিল দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় ক্রীড়াযজ্ঞ সাফ গেমস (বর্তমান নাম এসএ গেমস)। ১৯৯৩ সালের ওই সাফ গেমস ছিল ঢাকায় ৮ বছর পর। বাংলাদেশ প্রথমবার দক্ষিণ এশিয়ার এই গেমস আয়োজন করেছিল ১৯৮৫ সালে।
দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার ইতিহাস গড়ে বেগম খালেদা জিয়ার সামনে দুই বছরের মাথায় ছিল এই গেমস আয়োজনের চ্যালেঞ্জ। সফলতার সাথে গেমস আয়োজনের পেছনে ছিল বেগম জিয়ার আন্তরিকতা ও নির্দেশনা। গেমস আয়োজনের দায়িত্ব বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ)। ওই সময় বিওএর সভাপতি ছিলেন গিয়াস কামাল চৌধুরী ও মহাসচিব ছিলেন বশির আহমেদ।
গেমস আয়োজনের সেই স্মৃতি রোমান্থন করতে গিয়ে তৎকালীন মহাসচিব বশির আহমেদ বলছিলেন, ‘গেমস আয়োজনের জন্য তো আগে থেকেই চিন্তাভাবনা থাকে। আমাদের তখন বড় দরকার ছিল বেগম খালেদা জিয়ার উপস্থিতি। তৎকালীন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী সাদেক হোসেন খোকা, ওই সময়ের বিওএ সভাপতি গিয়াস কামাল চৌধুরী এবং আরো কয়েকজন মিলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে দেখা করেছিলাম বেগম খালেদা জিয়ার সাথে। গেমস আয়োজনে তার অনুমতি, গাইডলাইন এবং তাকে গেমসে আমন্ত্রণ করতেই গিয়েছিলাম। সরকার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার দুই বছরের মাথায় বেগম খালেদা জিয়া গেমস আয়োজনের জন্য আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস ও সাহস দিয়েছিলেন।’
বশির আহমেদ বলেন, ‘ওই বছর ২০ থেকে ২৭ ডিসেম্বর হওয়া সাফ গেমসের জমকালো উদ্বোধন হয়েছিল ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাস প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে গেমস উদ্বোধন করেছিলেন। গেমস আয়োজনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তিনি মাঠে উপস্থিত থেকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপভোগ করেছিলেন।’
ঢাকায় হওয়া দ্বিতীয় সাফ গেমস সফলতার সাথেই শেষ হয়েছিল। ১১ টি ডিসিপ্লিনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ৭ দেশ ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ ও বাংলাদেশ নিয়ে আয়োজিত এই গেমস।
বেগম খালেদা জিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার দ্বিতীয় মেয়াদে বাংলাদেশ পেয়েছিল আন্তর্জাতিক ফুটবলে সবচেয়ে বড় সাফল্যটি। ২০০৩ সালে ঢাকায় বসেছিল সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের আসর। বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো দক্ষিণ এশিয়ার সেরা হয়েছিল সাফ জিতে। সেমিফাইনালে ভারতকে ও ফাইনালে মালদ্বীপকে হারিয়ে বাংলাদেশ ঘরে তুলেছিল ঐতিহাসিক সেই ট্রফি।
ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে ফুটবলের সেই ঐতিহাসিক ট্রফি জয়ের পর বেগম খালেদা জিয়া পুরো দলকে তার কার্যালয়ে নিয়ে সংবর্ধনা দিয়েছিলেন। দলের প্রত্যেক সদস্যকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া স্বর্ণপদক ও অর্থ উপহার দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে দলের প্রত্যেক সদস্যকে রাজউক-এর পূর্বাচলের আবাসিক প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ দিয়েছিলেন। ফুটবলারদের প্রতি বেগম খালেদা জিয়ার এই উপহার ক্রীড়াবিদদের দারুণভাবে অনুপ্রেরণা দিয়েছিল।
বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন তার পুত্র আরাফাত রহমান কোকো ক্রিকেটের উন্নয়নে বিশাল ভূমিকা রেখেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর পুত্র কোকো ক্রিকেট বোর্ডের ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে ক্রিকেট উন্নয়নে নানামুখী পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। তবে নিজের পুত্রকে বেগম জিয়া ক্রীড়াঙ্গনের শীর্ষ কোনো পদে বসাননি। তিনি ক্রীড়াঙ্গনকে রাজনীতি ও পারিবারিককরণের বাইরে রাখার চেষ্টা করেছিলেন।
বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে দেশের খেলাধুলার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। বিশেষ করে নারীদের ক্রীড়ায় ছিল তার বিশেষ আগ্রহ। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সাফল্য পেলে ক্রীড়াবিদদের উৎসাহ, অনুপ্রেরণার জন্য পুরস্কার প্রদানের রেওয়াজ শুরু হয়েছিল তার সময়েই, যখন সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়া ফুটবল দলকে স্বর্ণপদক, অর্থ এবং পরে সরকারী প্লট বরাদ্দ দিয়েছিলেন।
দেশের গনতন্ত্রের অগ্রযাত্রার আপোষহীন নেত্রী হিসেবে পরিচিত পাওয়া বেগম খালেদা জিয়াকে এই দেশের মানুষ মনে রাখবেন। সেই সাথে ক্রীড়াঙ্গনের মানুষও কখনো ভুলবেন না সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে।
বেগম জিয়ার মৃত্যুতে তাই তো শোকের ছায়া নেমে এসেছে ক্রীড়াঙ্গনে। ফুটবল ফেডারেশন, ক্রিকেট বোর্ডসহ বিভিন্ন সংস্থা, ফেডারেশন, ক্লাব, ক্রীড়াবিদ, ক্রীড়া সংগঠকরা সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেছেন।
আরআই/আইএইচএস/