সময় তখন ৫টা ১৩ মিনিট। শীতল হওয়ায় চারপাশে কুয়াশাচ্ছন্ন। সমানে গর্জন দিচ্ছে ঢেউ। এরই মাঝে ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে যায় ২০২৫ সালের শেষ সূর্য। প্রাপ্তি, হতাশা, ক্লান্তি ও নানা ঘটন-অঘটনকে চাপিয়ে শেষ হলো আরও একটি বছর।
এবারও থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপনে উন্মুক্ত আয়োজনের অনুমতি ছিল না। প্রতিবছরের মতো তারকা হোটেলগুলো নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় অভ্যন্তরীণ প্রোগ্রামের আয়োজন করলেও প্রয়াত খালেদার আত্মার প্রতি সম্মান জানিয়ে ৩১ ডিসেম্বর সকালে সব আয়োজন স্থগিত করে দেয় সব তারকা হোটেল-মোটেল। এরপরও কক্সবাজারে উল্লেখ করার মতো পর্যটক উপস্থিতি রয়েছে।
অনেকে আগেই রুম বুকিং দিয়ে বছরের শেষ সময় ও নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে দরিয়ানগরে এসে হাজির হন। সেন্টমার্টিনেও অবস্থান করছেন অনেক পর্যটক। বছরের শেষ সূর্যাস্ত দেখতে সৈকতে হাজির হন পর্যটকের পাশাপাশি প্রকৃতি সচেতন স্থানীয় নারী-পুরুষ।
বৃহস্পতিবারের (১ জানুয়ারি) সূর্যোদয়ের মধ্যদিয়ে পথচলা শুরু হবে ২০২৬ সালের। ৩৬৫ দিনের সফলতা-ব্যর্থতার হিসাব পেছনে ফেলে পরিচ্ছন্ন আগামীর প্রত্যাশায় ২০২৬ সালকে স্বাগত জানিয়েছেন সবাই। উন্মুক্ত বা ইনডোর কোনো আয়োজন না থাকলেও তিনদিনের শোকের মাঝেই নিজেদের মতো করে নতুন বছরকে বরণ করবেন সব শ্রেণি-পেশার মানুষ।
তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইস লিমিটেডের পরিচালক আবদুল কাদের মিশু বলেন, ‘পর্যটন বিকাশের ধারাবাহিকতায় থার্টিফার্স্টে এবারও ইনডোর প্রোগ্রামের আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু তিনবারের সফল প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার প্রয়াণে রাষ্ট্রীয় শোক চলছে। মানবিক বিবেচনায় নতুন বছর বরণের সব বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছে। থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপনের সব ধরনের আয়োজন বন্ধ করায় প্যাকেজে হোটেলে আসা অনেক অতিথি অবস্থান বাতিল করেছেন। তাদের সব ধরনের টাকা ফেরত দিতে হয়েছে। এতে হোটেলগুলো চতুর্দিকে ক্ষতির মুুখে পড়েছে।’
শুধু ওশান প্যারাডাইস নয়; তারকা হোটেল সায়মান বিচ রিসোর্ট, হোটেল রামাদা, গ্রিন ন্যাচার, সি প্রিন্সেস, বেস্ট ওয়েস্টার্নসহ প্রায় সব হোটেল তাদের নির্ধারিত আয়োজন বন্ধ ঘোষণা করেছে। এতে অতিথিদের সঙ্গে প্রায় হোটেলের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হয়েছে। যারা চলে যেতে চেয়েছেন, তাদের রুম ভাড়াসহ সব ব্যয় ফেরত দিতে হচ্ছে।
পর্যটন সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রতিবছর থার্টিফার্স্ট উদযাপনের উপলক্ষে পর্যটন নগরী লোকারণ্য হয়ে ওঠে। বিগত দেড় দশক এমন চিত্রই দিয়েছে সৈকত তীর। এবারও থার্টিফার্স্ট এবং বছরের শেষ সূর্যাস্ত দেখতে সৈকত ও আশপাশের পর্যটন এলাকায় অতিথি ও স্থানীয়দের ভিড় রয়েছে। তবে এবারও আয়োজনহীন থার্টিফার্স্ট নাইট বা নতুন বর্ষবরণ ‘প্রাণহীন’।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতা ও হোয়াইট অর্কিড হোটেলে জিএম রিয়াদ ইফতেখার বলেন, নতুন বছরকে বরণ ও বিদায়ের এসময়ে কক্সবাজারকেই প্রাধান্যে রাখেন ভ্রমণপ্রেমীরা। সাগরের মাঝে প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনও অবস্থান করতে চান অনেকে। কিন্তু গত দুবছর ধরে মাত্র দুই হাজার পর্যটকত সেন্টমার্টিন যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। সেখানেও পর্যটক উপস্থিতি রয়েছে। প্রায় হোটেলে কমবেশি পর্যটক অবস্থান করছেন।
বাড়তি পর্যটক মাথায় রেখে সার্বিক নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশসহ অন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার রেখেছে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশের ফোকাল পয়েন্ট ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) অলক বিশ্বাস।
হোটেল সি-নাইটের ব্যবস্থাপক শফিক ফরাজী বলেন, ‘খালেদা জিয়ার মৃত্যু ও দাফনে সারাদেশ শোকে বিহবল হলেও বছরের শেষদিন সারাদেশ থেকে কক্সবাজার সৈকতের বেলাভূমিতে এসেছে পর্যটনপ্রেমীরা। অনুষ্ঠান না থাকলেও পর্যটকদের পাশপাশি স্থানীয়রাও সৈকতে উপস্থিত হয়েছেন।
বুধবার বিকেলে সৈকতের সুগন্ধা-লাবণী ও কলাতলী পয়েন্টে গিয়ে দেখা গেছে, পর্যটকদের পাশাপাশি স্থানীয় বিপুল দর্শনার্থী সৈকতে। তীব্র শীতেও বালুচরে দাঁড়িয়ে সাগরের গর্জন আর সূর্যাস্ত উপভোগ করছেন তারা। বছরের শেষ সূর্যাস্ত ক্যামেরাবন্দি করে রাখছিলেন অনেকে।
সুগন্ধা পয়েন্টের ব্যবসায়ী মাসুদ আলম বলেন, ‘পর্যটক সেবা দিতে গিয়ে পরিবারকে তেমন সময় দিতে পারি না। কিন্তু ২০২৫ সালের শেষ সূর্যাস্তটা পরিবারসহ দেখেছি।’
চাকরির সুবাদে কক্সবাজারে অবস্থান করা সিলেটের মাহবুবুল ইসলাম রুবেল, নোয়াখালীর ইমতিয়াজ নূর সোমেল ও রাউজানের মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘বেলাভূমিতে এসে বিদায়ী সূর্যাস্ত উপভোগ করেছি।’
টুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, কক্সবাজারের পর্যটন এলাকার নিরাপত্তায় টুরিস্ট পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আ. মান্নান বলেন, ‘অনুষ্ঠান না থাকলেও পর্যটন এলাকার সার্বিক নিরাপত্তায় পুলিশসহ একাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সাদা পোশাকেও দায়িত্ব পালন করছেন। যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করছেন জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত।’
সায়ীদ আলমগীর/এসআর/জেআইএম