অর্থনীতি

ঊর্ধ্বমুখী শেয়ারবাজার

একদিনের ব্যবধানেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের শেয়ারবাজার। সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস সোমবার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মূল্যসূচক ও লেনদেন উভয় বেড়েছে। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) মূল্যসূচকের উত্থান ঘটেছে। তবে কিছুটা কমেছে লেনদেন। এদিন ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ২১ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৬০৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। রোববার এই সূচকটি ৭ পয়েন্ট কমে ছিল। ডিএরইর অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ বেড়েছে ৫ পয়েন্ট এবং ডিএসই শরিয়া সূচক বেড়েছে ৪ পয়েন্ট।সোমবার ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ২৯৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। যা আগের দিনের তুলনায় ৬৫ কোটি ৩ লাখ টাকা বেশি। বাজারটিতে লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ১১৫টির শেয়ার ও ইউনিটের দাম আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে। অপরদিকে দাম কমেছে ১৬৪টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৫১টির দাম।বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ মির্জ্জা এবি আজিজুল ইসলাম বলেন, জানুয়ারি মাসে শেয়ারবাজার একটানা উর্ধ্বমুখী ছিল। ওই সময় ভালো কোম্পানির পাশাপাশি জেড গ্রুপের বেশিকিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদাম বাড়ে। টানা উত্থানের কারণে চলতি মাসের প্রথমদিকে টানা দরপতন দেখা দেয়। তবে এখন বাজার আবার স্বাভাবিক। বাজার এখন যে অাচরণ করছে তাতে বিনিয়োগকারীদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তবে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের অবশ্যই ভালোভাবে তথ্য যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। দুর্বল মৌলভিত্তির কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা ঠিক না।বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সাবেক আর এক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, বাজারে উত্থান-পতন থাকবে এটাই স্বাভাবিক। এখন বাজারের আচরণ বেশ স্বাভাবিক। ভালোভাবে তথ্য বিশ্লেষণ করে বিনিয়োগ করলে এ বাজার থেকে মুনাফা অর্জন করা কঠিন হবে না। তবে বিনিয়োগকারীদের সব সময় মনে রাখতে হবে হুজগে বা গুজবে বিনিয়োগ করা ঠিক না।ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. বখতিয়ার হাসান বলেন, বর্তমানের দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিত বেশ ভালো। অনেকদিন ধরেই কোনো রাজনৈতিক অস্থিরতা নেই। অর্থনীতির সূচকগুলোও ভালো অবস্থানে আছে। যে কারণে শেয়ারবাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ছে। তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, দেশীয় বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগকারীরা পর্যন্ত বিনিয়োগ করছে। এ পরিস্থিতিতে কোম্পানির আর্থিক অবস্থা পর্যালোচনা করে বিনিয়োগ করলে শেয়ারবাজার থেকে ভালো মুনাফা পাওয়া সম্ভব।  তবে বাজারকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দিতে হবে। বাজার অকারণে হস্তক্ষেপ করা বা দায়িত্বশীলদের বাজার নিয়ে অতিকথন ঠিক না।ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, বর্তমানে আমানতের ও সঞ্চয়পত্রের সুদ হার বেশ কম। কোনো ব্যাংকেই আমানত রেখে ৫ থেকে ৭ শতাংশের বেশি মুনাফা পাওয়া যাচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজারে ভালো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করলে বছর শেষে ১০ শতাংশের ওপর মুনাফা পাওয়া সম্ভব। এ দিক থেকে বিশ্লেষণ করলে ব্যাংকে আমানত রাখার থেকে শেয়ারবাজারের ভালো কোম্পানিতে বিনিয়োগ কলে বেশি মুনাফা পাওয়া সম্ভব।বাজার পর্যালোচনায় দেখা য়ায়, সোমবার ডিএসইতে মূল্য সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় লেনদেন শুরু হয়। লেনদেনের প্রথম ২ মিনিটেই ডিএসইএক্স সূচক ১০ পয়েন্ট বেড়ে যায়। বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত সূচক ঊর্ধ্বমুখী থাকে। তবে এর পরেই নিম্নমুখী হয়ে পড়ে। দুপুর ১২টায় ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৮ পয়েন্ট কমে যায়। অবশ্য আধাঘণ্টার ব্যবধানে আবার ঊর্ধ্বমুখী হয় সূচক। যা লেনদেনের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।এদিন টাকার অঙ্কে ডিএসইতে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে সেন্ট্রাল ফার্মার শেয়ার। প্রতিষ্ঠানটির ২৯ কোটি ৫০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। লেনদেনে দ্বিতীয় স্থানে থাকা এ্যাপোল ইস্পাতের ২৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ২৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইস্টার্ন হাউজিং। লেনদেনে এরপর রয়েছে- আমান ফিড, এএফসি এগ্রো, সিএমসি কামাল, একটিভ ফাইন, ডেস্কো, ডরিন পাওয়ার এবং জিবিবি পাওয়ার।সোমাবর অপর স্টক সিএসসিএক্স সূচক ৪২ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৫৩৯ পয়েন্টে। এদিন সিএসইতে ৬৩ কোটি ১৭ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। যা আগের দিনের তুলনায় ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা কম। সিএসইতে লেনদেন হওয়া ২৬২টি ইস্যুর মধ্যে দাম বেড়েছে ১০৩টির, কমেছে ১৩১টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৮টির।এমএএস/জেএইচ/জেআইএম