নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা-সংক্রান্ত বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশ করতে বারবার সময়ের আবেদন করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
মঙ্গলবার সকালে গেজেট প্রকাশ করার জন্য অ্যাটর্নি জেনারেল আরও চার সপ্তাহের সময় আবেদন করলে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম গেজেট প্রকাশে রাষ্ট্রপতির প্রসঙ্গ আনলে আপিল বিভাগ বলেন, ‘এটা তো প্রেসিডেন্সিয়াল গভর্নমেন্ট না। রাষ্ট্রপতির কথা কেন বলছেন, ডিপার্টমেন্ট (মন্ত্রণালয়) যেভাবে দেবেন রাষ্ট্রপতি সেভাবে পদক্ষেপ নেবেন। আর্মি অ্যাক্ট দেখুন, পুলিশ অ্যাক্ট দেখুন না, আইজিপি সব করছে। সব তো রাষ্ট্রপতির নামে হয়। সংসদীয় ব্যবস্থায় আপনি বারবার কেন রাষ্ট্রপতিকে টেনে আনছেন? এটা তো পার্লামেন্টারি ডেমোক্রেসি। আপনারা বিচার বিভাগ নিয়ে এটা কী করছেন?’
পরে আদালত বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা-সংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট প্রকাশে সরকারকে আরও এক সপ্তাহ সময় দেন।
১৪ মার্চ বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাবিধি গেজেট আকারে প্রকাশ করতে ২৮ মার্চ পর্যন্ত সময় দিয়েছিলেন আদালত। এর আগেও গেজেট প্রকাশে ৯ দফা সময় নেয় সরকার। মঙ্গলবার সর্বশেষ দশমবারের মতো সময় নেয় রাষ্ট্রপক্ষ।
নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা-সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়ন না করায় আইন মন্ত্রণালয়ের দুই সচিবকে গত ১২ ডিসেম্বর তলবও করেছিলেন আপিল বিভাগ।
এরও আগে গত বছরের ৭ নভেম্বর বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা-সংক্রান্ত বিধিমালা ২৪ নভেম্বরের মধ্যে গেজেট আকারে প্রণয়ন করতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ।
১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর মাসদার হোসেন মামলায় ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেয়া হয়। ওই রায়ের আলোকে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা-সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা ছিল।
১২ দফার মধ্যে ইতোমধ্যে বেশ কয়েক দফা বাস্তবায়ন করেছে সরকার। এজন্য বারবার আদেশ দিতে হয়েছে আপিল বিভাগকে। এমনকী, ২০০৪ সালে আদালত অবমাননার মামলাও করতে হয়েছে বাদীপক্ষকে। এরপর ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক ঘোষণা করেন।
২০১৫ সালের ১৫ মার্চ আপিল বিভাগ চার সপ্তাহ সময় দেন সরকারকে। এরপর গত বছরের ৭ মে আইন মন্ত্রণালয় থেকে একটি খসড়া শৃঙ্খলাবিধি তৈরি করে সুপ্রিম কোর্টে পাঠায়। কিন্তু তা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের আলোকে না হওয়ায় সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃপক্ষ একটি কমিটি গঠন করে আলাদা একটি শৃঙ্খলাবিধি তৈরি করেন। চলতি বছরের ২ জানুয়ারি সোমবার এ বিষয়ে আপিল বিভাগে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
২০০৭ সালের ১০ জানুয়ারি আপিল বিভাগ বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ সংক্রান্ত চারটি বিধিমালা সাতদিনের মধ্যে গেজেট আকারে প্রকাশের নির্দেশ দেন। তবে এ সংক্রান্ত মামলাটি এখনও আপিল বিভাগে বিচারাধীন।
অন্যদিকে, ১২ দফা নির্দেশনার যেসব দফা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য তাগিদ রয়েছে।
এফএইচ/জেডএ/এসআর/এমএআর/পিআর