দেশজুড়ে

দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের মান দেয়া যায় না

কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদিসকে কোনো প্রকার সংস্কার ও নিয়ন্ত্রণ ব্যতিরেকে এবং বিনা শর্তে মাস্টার্সের মান দেয়ার প্রতিবাদে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিয়েছে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত সমন্বয়ক কমিটি।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সংগঠনের জেলা শাখার সমন্বয়ক মনজুর আহমদ ও সদস্য সচিব সালাহ উদ্দিন মুহাম্মদ তারেকের নেতৃত্বে বিভিন্ন দাবি তুলে এ স্মারকলিপি দেয়া হয়।

স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, এ দেশের সূফি ঘরানার সুন্নি জনতার প্রতিনিধিত্বকারী অরাজনৈতিক-আধ্যাত্মিক সংগঠন ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত সমন্বয় কমিটি’ সবসময় চলমান সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী পদক্ষেপের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতা দিয়ে আসছে।

কিন্তু হঠাৎ করে গত ১১ এপ্রিল রাতে জঙ্গিবাদের প্রকাশ্য সংগঠন ও এর প্রধান সংগঠক হেফাজত নেতা আহমদ শফী সাহেবের দলবলকে ডেকে নিয়ে, তাদের দাবিকে শর্তহীনভাবে মেনে নিয়ে কওমী মাদরাসার দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সকে (আরবি ও ইসলামিক স্টাডিজ) সমমান ঘোষণা এবং অতীব দ্রুততার সঙ্গে প্রজ্ঞাপনও জারি করেছে। এতে দেশের সুন্নি জনতাকে শুধু নয় বরং সকল বিবেকবান সচেতন শিক্ষিত মানুষকে, এমনকি সবাইকে হতবাক করে দিয়েছে।

স্মারকলিপিতে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে দেয়া পয়েন্টে বলা হয়েছে, দেশে অপরাপর মাস্টার্স সনদ দেয় এফিলিয়েটিং বিশ্ববিদ্যালয় বা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি কুষ্টিয়া, আরবি বিশ্ববিদ্যালয় নামক সরকার নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান।

অথচ, এখানে একই সনদ দেবেন হেফাজত নেতাদের একটি কমিটি-যাদের নিজেদেরও কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ নেই। এটা উগ্রগোষ্ঠীকে অভাবনীয় পুরস্কৃত করতে গিয়ে দেশের অপরাপর সকল মাস্টার্স সনদধারীদের অপমান করা নয় কি?

সাধারণ ও আলিয়া মাদরাসা শিক্ষায় একজন শিক্ষার্থীকে প্রাথমিক সমাপনী, জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি, স্নাতক/স্নাতক সম্মান বা সমমান পরীক্ষায় অংশগ্রহণের পর মাস্টার্স পরীক্ষা দিতে হয়।

যার জন্য ব্যয় হয় ১৭-২০ বছর। অথচ তারা এতগুলো পরীক্ষা না দিয়ে মাত্র কয়েক বছরে মাস্টার্স সনদ লাভ করবে। যা সমপূর্ণ বৈষম্যমূলক।

এতগুলো সরকার নির্ধারিত পাবলিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সনদ অর্জনের পরও আনুগত্যশীল মাস্টার্সধারীরা চাইলেই কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করতে পারেন না।

তাদের এ জন্য আরও বড় প্রতিযোগিতামূলক পাবলিক পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়ে উত্তীর্ণ হওয়া লাগে। সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তো আছেই। এমনকি বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদরাসায় শিক্ষকতার জন্যও তাদের নতুন করে নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া প্রয়োজন হয়।

এরপরও দিতে হয় নিয়োগ পরীক্ষা-যেখানে থাকে সরকারি প্রতিনিধি। অথচ এমন কোনো ঘাট পাড়ি দিতে হবে না কওমিদের। তাহলে শিক্ষকদের মান যাচাইও হবে না এখানে? এতোবড় বৈষম্যমূলক আচরণ কেন সরকারিদের ওপর?

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেনের হাতে স্মারক লিপিটি দেয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন, সিরাজুল ইসলাম ছিদ্দিকী, মুহাম্মদ সুলতান, আবু সৈয়দ, মুহামম্দ মুসা, মুহামম্দ গিয়াস উদ্দিন, মহিউদ্দিন, বেলাল উদ্দিন, ইমরানুল হক, অধ্যাপক আজিজুল ইসলাম প্রমুখ।

সায়ীদ আলমগীর/এএম/জেআইএম