নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণ সংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট প্রকাশ না করায় আবারও ক্ষোভ প্রকাশ করে আপিল বিভাগ বলছেন, এতে খুব লজ্জাবোধ করছেন আদালত।
সোমবার গেজেট প্রকাশের শুনানিতে গেজেট প্রকাশের জন্য সরকাররে আবারও দুই সপ্তাহ সময় দেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
আজ সকালে শুনানির শুরুতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম চার সপ্তাহ সময়ের আবেদন করেন। আবেদন দেখে আদালত বলেন, দুই সপ্তাহের আবেদন এবার চার সপ্তাহ হয়ে গেল। প্রথমে এক সপ্তাহ, পরে দুই সপ্তাহ, এবার চার সপ্তাহ। ভবিষ্যতে আট সপ্তাহ চাইবেন। সময় আবেদনের বিষয়টি সবাই জানি।
আদালত আরও বলেন, প্রধান বিচারপতি অবসরে যাবেন জানুয়ারিতে, বিচারপতি নাজমুল আরা সুলতানা যাবেন তার আগে। পরে যাবেন বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা। তখন আপনারা গেজেট প্রকাশ করে আনবেন। যেসব বিচারপতিরা তখন থাকবেন তারা দেখবেন। আই ফিল ভেরি অ্যাশেমড (আমার খুব লজ্জা লাগছে)।
সর্বশেষ গত ৮ মে গেজেট প্রকাশে এক সপ্তাহের সময় দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ।
গত বছরের ৮ ডিসেম্বর নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট প্রকাশ না করায় আইন মন্ত্রণালয়ের দুই সচিবকে আদালতে হাজির করতে অ্যাটর্নি জেনারেলকে নির্দেশ দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ।
এর মধ্যে ১২ ডিসেম্বর নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট প্রকাশের প্রয়োজন নেই বলে সিদ্ধান্ত দেন রাষ্ট্রপতি। পরে অবশ্য দুই সচিব আদালতে হাজির হওয়ার পর গেজেট প্রকাশে সময় দেন আদালত।
১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর মাসদার হোসেন মামলায় (বিচার বিভাগ পৃথককরণ) ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেয়া হয়। ওই রায়ের ভিত্তিতে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা ছিল।
আপিল বিভাগের নির্দেশনার পর গত বছরের ৭ মে আইন মন্ত্রণালয় একটি খসড়া শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধি প্রস্তুত করে সুপ্রিম কোর্টে পাঠায়।
গত বছরের ২৮ আগস্ট শুনানিতে আপিল বিভাগ খসড়ার বিষয়ে বলেন, শৃঙ্খলা বিধিমালা সংক্রান্ত সরকারের খসড়াটি ছিল ১৯৮৫ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার হুবহু অনুরূপ। যা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থী।
এরপরই সুপ্রিম কোর্ট একটি খসড়া বিধিমালা করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠান। একইসঙ্গে ৬ নভেম্বরের মধ্যে তা প্রণয়ন করে প্রতিবেদন আকারে আদালতকে অবহিত করতে আইন মন্ত্রণালয়কে বলা হয়।
গত বছরের ৬ নভেম্বর সে অনুসারে মামলাটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসে। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি জানাতে পারেননি।
পরে আপিল বিভাগ বিধিমালা চূড়ান্তের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেয়া করা হয়েছে তা লিখিতভাবে জানাতে অ্যাটর্নি জেনারেলকে নির্দেশ দিয়ে ৭ নভেম্বর আদেশের দিন ধার্য করেন।
ওই দিন অ্যাটর্নি জেনারেল আট সপ্তাহের সময়ের আবেদন জমা দেন; যাতে বিধিমালাটি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর কথা উল্লেখ করেন তিনি। সর্বোচ্চ আদালত ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত সময় দেন।
গত বছরের ২৪ নভেম্বর অ্যাটর্নি জেনারেল গেজেট প্রকাশে আরও এক সপ্তাহ সময় চাইলে আপিল বিভাগ তা মঞ্জুর করেন। পরবর্তীতে আরও কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে নেয় রাষ্ট্রপক্ষ।
এফএইচ/এনএফ/পিআর