মতামত

ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ান

উৎকণ্ঠা অপেক্ষার পর অবশেষে স্বস্তি ফিরে এসেছে জনমনে। সাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মোরার কারণে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারি করা হয়েছিল উপকূলীয় অঞ্চলে। এ অবস্থায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অভ্যন্তরীণ রুটের সব নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়। ঘূর্ণিঝড়ের খবর প্রচারণাসহ প্রশাসন নানা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়। উপকূলের অধিকাংশ লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হয়। ত্রাণ তৎপরতার জন্যও প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়া হয়। সবশেষ খবর অনুয়ায়ী ঘূর্ণিঝড়টি দুর্বল হয়ে গেছে। তুলে নেয়া হয়েছে বিপদ সংকেতও। তবে উপকূলীয় কোনো অঞ্চলে এটি আঘাত হানে। প্রাণহানিসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিও হয়। এখন করণীয় হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানো। ত্রাণসহ অন্যান্য সহায়তা প্রদান।

ঘূর্ণিঝড় মোরার আঘাতে কক্সবাজারের চকরিয়ায় গাছচাপায় দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন- সায়রা খাতুন (৬৫) ও রহমত উল্লাহ (৫০)। এছাড়া কক্সবাজার শহরের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া মরিয়ম বেগম (৫৫) নামে এক বৃদ্ধা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মোরার আঘাতে কুতুবদিয়ায় ৬ হাজার বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। এছাড়া অনেক স্থানে গাছপালা ভেঙে পড়েছে। বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বিদ্যুৎ সংযোগ। ঘূর্ণিঝড় মোরার আঘাতে কক্সবাজারের মহেশখালী লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। বিভিন্ন সড়কে গাছ পড়ে ও চলমান গাড়ি বিকল হয়ে সড়ক বন্ধ হয়ে আছে। ধলঘাটা, মাতারবাড়ি, সোনাদিয়া ও তাজিয়াকাটা এলাকা জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে গেছে ।

এখন জরুরি হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় দ্রুত ত্রাণ সহায়তা। এছাড়া বন্ধ হওয়া রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করতে হবে। হতাহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে হবে। এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র আঘাতে এ পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি ও দুই জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এরই ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ১ কোটি ৮৭ লাখ টাকার ত্রাণ দেয়া হয়েছে। সচিবালয়ে গতকাল মঙ্গলবার সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান। ওবায়দুল কাদের বলেন, এই মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী দেশের বাইরে রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় সংশ্লিষ্ট সব বিভাগকে তৎপর থাকার নির্দেশনা দিয়ছেন। এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রশাসনকে কাজ করতে হবে।

আমাদের দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ নতুন কোনো বিষয় নয়। দুর্যোগ মোকাবেলায় ইতোমধ্যেই সাফল্যের ইতিহাস রয়েছে বাংলাদেশের। কিন্তু একটা দুর্যোগ নানা ক্ষতর সৃষ্টি করে যায়। এখনো আইলার আঘাতের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারেনি উপকূলীয় মানুষজন। এরপর একটার পর একটা আঘাত আসতে থাকলে সেটি আরো দুর্ভাগ্যের কারণ হবে। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় এখনো অনেকটাই অধরা। তবে দুর্যোগ পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সচেতনতা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা থেকে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক কমিয়ে আনা যায়। সে লক্ষ্যে প্রশাসনকে কাজ করতে হবে।

এইচআর/পিআর