দেশজুড়ে

ঢামেকে বৈশাখের ঢাক-ঢোলের শব্দ শুনে হয়তো কাঁদবে মাসুরা

রাত পার হলেই পহেলা বৈশাখ। বাঙালির বাঙালিয়ানা দেখানো অন্যতম একটি দিন। এদিন পান্তা ইলিশের স্বাদ নিতে কয়েকগুণ দাম বেড়ে যাওয়া একটা ইলিশ কিনতেও ভাবেন না অনেকেই। এছাড়াও এ দিনকে ঘিরে আলাদা সাজ-সজ্জার কমতি থাকে না কারও। অথচ এমন একটি দিনেও সারাক্ষণ উপুর হয়ে কাটাতে হবে রাজবাড়ী সদর উপজেলার ১৫ বছর বয়সী কিশোরী মাসুরা খাতুনকে।

রিকশাচালক বাবা অনেক কষ্টে মেয়েকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন, কিন্তু টাকার অভাবে থমকে আছে সব কিছু। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তার চিকিৎসার জন্য তিন লাখ টাকা প্রয়োজন। তবে ইতোমধ্যে এক লাখ টাকা জোগার করেছেন তার বাবা। আর প্রয়োজন দুই লাখ টাকা।

২০১৭ সালে গাছ থেকে পড়ে মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে গেছে মাসুরার। ভাঙা হাড় নিয়ে শুয়ে থাকার কারণে ওই স্থানে ঘায়ের সৃষ্টি হয়েছে। তাই এখন তাকে উপুর হয়ে দিন-রাত কাটাতে হয়। তবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক বলছেন, অপারেশনের মাধ্যমে মাসুরা আবারও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে। তবে এজন্য খরচ হবে প্রায় ৩ লাখ টাকা। কিন্তু ঘা শুকানোর পর করা হবে সেই অপারেশন।

মাসুরা বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের তৃতীয় তলার রেড ইউনিটের ফিমেল ওয়ার্ডের ২ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন। সে সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের দুর্গাপুর গ্রামের বাচ্চু সরদারের মেয়ে। দুই মেয়ে এক ছেলের মধ্যে মাসুরা বড়। তাদের বাবা পেশায় রিকশাচালক।

পরিবারের লোকজন জানায়, ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে বাড়ির একটি গাছ থেকে পড়ে মাসুরার মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে যায়। ওই সময় সে সূর্যনগর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে ৭ম শ্রেণিতে পড়তো। স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়ে সে প্রায় এক বছর স্বাভাবিকভাবে স্কুলে আসা যাওয়া করতো। পরে চিকনগুনিয়া হয়ে মেরুদণ্ডের হাড় বেঁকে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ঢাকায় হোমিও চিকিৎসা করান তার বাবা। ওই চিকিৎসকের চিকিৎসায় মাসুরা ভালো হয়ে বাড়িতে ফিরে আসে। বাড়ি ফিরেই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে দুই পা অবশ হয়ে যায় এবং মেরুদণ্ডের সেই ভাঙা স্থানে ঘায়ের সৃষ্টি হয়। এরপর গরিব বাবা আর চিকিৎসা করাতে পারেননি।

সম্প্রতি তার অবস্থা আরও জটিল হওয়া শুরু করলে ২৮ মার্চ তাকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা জানান, মাসুরাকে ঢাকা নিয়ে যেতে হবে। আত্মীয়-স্বজনদের কাছে টাকা ধার নিয়ে মেয়েকে বাঁচাতে ৩ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করেন। সেখানে বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন সে।

সূর্যনগর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালাম বিশ্বাস জাগো নিউজকে বলেন, মাসুরার জন্য আমরা সবাই দোয়া করি, সে যেন সুস্থ হয়ে আবার আমাদের মাঝে ফিরে আসে। দুর্ঘটনায় তার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেছে। তার চিকিৎসার জন্য স্কুলের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে।

মিজানপুর ইউপির ৪নং ওয়ার্ড সদস্য মো. দেলোয়ার সরদার বলেন, মাসুরা গরিব পরিবারের সন্তান। তারা অন্যের জায়গায় থাকে। ওর চিকিৎসার জন্য এলাকাবাসীর কাছে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। সরকারি কোনো বরাদ্দ ওই পরিবার পায় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভিজিডি, ভিজিএফের জন্য যখন লিস্ট করা হয় তখন তারা এলাকায় ছিল না। তবে অসহায় পরিবারটিকে সহযোগিতার জন্য চেষ্টা করছি।

মিজানপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. আতিয়ার রহমান জাগো নিউজকে বলেন, তার নির্বাচনী এলাকায় মেরুদণ্ড ভেঙে দীর্ঘদিন একটি মেয়ে বিছানায় পড়ে রয়েছে এমন খবর তিনি জানেন না বা তাকে কেউ এ বিষয়ে জানায়নি। যেহেতু বিষয়টি জেনেছি। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে না পারলেও ব্যক্তিগতভাবে মাসুরার চিকিৎসা জন্য সহযোগিতা করবো।

মাসুরার বাবা বাচ্চু সরদার বলেন, মাসুরাকে সুস্থ করতে ৩ লাখ টাকা প্রয়োজন। সবার সহযোগিতায় এখন পর্যন্ত প্রায় এক লাখ টাকা পেয়েছি। আরও প্রয়োজন ২ লাখ টাকা। এত টাকা আমি কোথায় পাবো? নিজের জায়গাজমি বা নগদ অর্থ বলতে কিছুই নেই আমার। দিন-রাত রিকশা চালিয়েও ঠিকমতো তিনবেলা খাবার জোটে না। এখন তো রিকশা চালানোর সময়ও পাচ্ছি না। পাশাপাশি মাসুরার মাও দেড় বছর ধরে অসুস্থ। কীভাবে আমি এখন ওদের চিকিৎসা করাবো বুঝতে পারছি না।

রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক দীপক কুমার বিশ্বাস বলেন, মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে প্রায় দুই বছর বিছানায় পড়ে ছিল মেয়েটি। এছাড়া তার হাড়েও ইনফেকশন দেখা দিয়েছে। যে চিকিৎসা রাজবাড়ী বা ফরিদপুরে নেই। যে কারণে মেয়েটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তবে মেয়েটির পরিবার খুবই অসহায়।

মাসুরার চিকিৎসায় কেউ সাহায্য করতে চাইলে যোগাযোগ করতে পারেন তার বাবা বাচ্চু সরদারের ০১৭৭১-৬৯৬৪৮৮ নম্বরে।

রুবেলুর রহমান/এমএএস/এমএস