সোনাতলা-জুমারবাড়ী-সাঘাটা যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৯৯ সালের ৪ জুন বাঙালি নদীর ওপর মেলান্দহ সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। দীর্ঘ ১৬ বছর পর ২০১৫ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি সেতুটি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। সাত স্প্যান বিশিষ্ট ২৬০ দশমিক ৭৬ মিটার দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয় ২৪ কোটি টাকা বরাদ্দ। সেতুটির সৌন্দর্যের জন্য দু’পাশে ১ কিলোমিটার করে অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ করা হয়। সেতুটি নির্মাণ করার পর সাঘাটা-সোনাতলা উপজেলার অর্থনৈতিক কাঠামো আরও সচল হয়।
তবে সেতুটি উদ্বোধনের পর থেকেই তা দর্শনার্থীদের মন জয় করেছে। এখানে প্রতিদিন গড়ে প্রায় এক-দেড়শ দর্শনার্থী আসেন। ঈদ বা উৎসব-পার্বণে এখানে তিল ধারনের ঠাঁই থাকে না। প্রতিবছর ঈদের দিনগুলোয় ৬-৭ হাজার দর্শনার্থী ঘুরতে আসেন বলে জানান স্থানীয়রা।
করোনা মহামারির সময়ও এ ঈদে এবার প্রায় ৫ হাজার লোক এসেছে সেতুটি দেখতে। দর্শনার্থীদের জন্য সেতুর একপাশ দিয়ে গড়ে উঠেছে দোকানপাট। দর্শনার্থীরা এখানে ভ্রমণের পাশাপাশি খেতে পারেন ফুচকা, চটপটি, মুড়ি মাখানো, আইসক্রিম ও শরবতসহ নানা ধরনের খাবার।
অস্থায়ীভাবে বসা এক ফুচকা ব্যবসায়ী জানান, তিন ঈদ থেকে মানুষ কিছুটা কম। আগে অনেক মানুষ আসতো। তখন দিনে প্রায় ১৫ হাজার টাকার ফুচকা বিক্রি করতেন। এ ঈদেও মানুষ কিছুটা কম এসেছে। একদিনে প্রায় ৮ হাজার টাকার ফুচকা বিক্রি করেছেন তিনি।
সেতু থেকে নদীর সৌন্দর্য ও সজীব বাতাস উপভোগ করতে অনেকেই আসেন এখানে। সেতুর দু’পাশে ফসলের মাঠ যেন সব সময় সবুজ হয়ে থাকে। দু’পাশে সবুজের বুক চিড়ে বয়ে গেছে শান্ত শীতল বাঙালি নদী। সেতুর নিচেই ইঞ্জিনবিহীন ও ইঞ্জিনচালিত ছোট-বড় নৌকা। ভ্রমণপিপাসুরা চাইলেই নৌকায় চড়ে উপভোগ করতে পারেন নদী ভ্রমণের স্বাদ। কেউ আবার নদীর পাড়ে বড়শি দিয়ে ধরতে পারেন মাছ।
পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘ঈদের দিনে কাজ সেরে বিকালে ঘুরতে ভালো লাগে। তবে করোনা মহামারির কারণে এবার দূরে কোথাও যাইনি। এলাকার পাশেই সেতুতে ঘুরতে এসেছি। পরিবারের সবাই মিলে বিকালটা অনেক উপভোগ করলাম। নদীতে নৌকা দিয়ে ভ্রমণ, ফুচকার দোকান থেকে ফুচকা খাওয়াসহ প্রাকৃতিক পরিবেশ দেখে মনটা ভরে গেল।’
সাঘাটা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. বেলাল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রতিবছর বিশেষ করে ঈদের সময় এখানে ব্যাপক লোকজন ঘুরতে আসে। তাদের নিরাপত্তার জন্য আমরা সার্বক্ষণিক সচেষ্ট থাকি। আমাদের টহল টিম ওই এলাকায় সব সময় থাকে। আমরা নিরাপত্তা জোরদারের চেষ্টা করছি, যেন কোনো দর্শনার্থীর অসুবিধা না হয়। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেন ঠিক থাকে। এর জন্য আমরা সব সময় পাশে আছি।’
ভ্রমণপিপাসু বা প্রকৃতিপ্রেমীরা চাইলেই ঘুরতে পারেন জায়গাটিতে। বগুড়া থেকে ট্রেন বা সিএনজিতে এসে সোনাতলা নামতে হবে। এরপর জনপ্রতি দশ টাকা অটো ভাড়া দিয়ে সরাসরি যাওয়া যায় সেতুতে। গাইবান্ধা থেকে সাঘাটা এসে সিএনজি যোগে জনপ্রতি প্রায় ৫০ টাকা দিয়ে সরাসরি যাওয়া যায় মেলান্দহ সেতুতে।
এসইউ/জিকেএস