ইতিহাসে প্রথমবারের মতো যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন এশীয় বংশোদ্ভূত, আরও সুনির্দিষ্ট করে বললে ভারতীয় বংশোদ্ভূত কোনো নাগরিক। সবকিছু ঠিক থাকলে মঙ্গলবারই (২৫ অক্টোবর) ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন তিনি।
রোববার (২৩ অক্টোবর) ঋষির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন নেতৃত্বের লড়াই থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। সোমবার শেষ মুহূর্তে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী পেনি মর্ডান্ট। এর ফলে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত নেতা সুনাক।
তরুণ প্রজন্মের নেতা হিসেবে সাধারণ মানুষের মধ্যে যথেষ্ট গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে সুনাকের। জেনে নেওয়া যাক বর্তমানে বৈশ্বিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা এ মানুষটির জীবনবৃত্তান্ত।
জন্মঋষি সুনাকের জন্ম ১৯৮০ সালে দক্ষিণ-পূর্ব যুক্তরাজ্যের সাউদাম্পটনে। তার বাবা যশবীর সুনাক জন্মগ্রহণ করেন কেনিয়ায়। তার মা ঊষা সুনাক জন্মগ্রহণ করেন তৎকালীন তাঙ্গানিকায়, যা বর্তমানে তানজানিয়ার অংশ।
ঋষির দাদা-দাদি ব্রিটিশ ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন ও ১৯৬০ এর দশকে সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে পূর্ব আফ্রিকা থেকে যুক্তরাজ্যে চলে আসেন।
যশবীর সুনাক যুক্তরাজ্যে একজন জিপি (জেনারেল প্র্যাকটিশনার) হিসেবে ও ঊষা সুনাক ফার্মাসিস্ট হিসেবে কাজ করতেন। তিন ভাইবোনের মধ্যে ঋষি সুনাকই সবার বড়।
শিক্ষাজীবনঋষি যুক্তরাজ্যের রমসি, হ্যাম্পশায়ারের স্ট্রউড স্কুলে শিক্ষাজীবন শুরু করেন। পরে উইনচেস্টার কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়ালেখা করেন। অক্সফোর্ডের লিঙ্কন কলেজে দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করেছেন ঋষি।
২০০১ সালে তিনি প্রথম স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে আমেরিকার স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে ফুলব্রাইট স্কলার হিসেবে এমবিএ করেন।
কর্মজীবনঋষি সুনাক স্নাতকের পর গোল্ডম্যান শ্যাক্সের সঙ্গে কাজ করেন ও পরে হেজ ফান্ড ফার্মের অংশীদার হন। রাজনীতিতে আসার আগে ঋষি একটি বিলিয়ন পাউন্ডের গ্লোবাল ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এ কোম্পানি যুক্তরাজ্যে ছোট ব্যবসায় বিনিয়োগে সহায়তা করতো।
দাম্পত্যজীবনঋষি সুনাক ভারতের বিখ্যাত শিল্পপতি ও ইনফোসিসের প্রতিষ্ঠাতা এন আর নারায়ণ মূর্তির জামাতা। নারায়ণ মূর্তির মেয়ে অক্ষতার সঙ্গে তার পরিচয় স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকেই প্রণয় ও পরে বিয়ে।
রাজনৈতিক জীবন২০১৫ সালে ইয়র্কশায়ারের রিচমন্ড আসন থেকে প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন ঋষি সুনাক। থেরেসা মে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন তিনি স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
২০১৯ সালে বরিস প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর কনজারভেটিভ পার্টির রাজনীতিতে তার গুরুত্ব আরও বাড়ে। বরিসের শাসনামলে ঋষি সুনাক সরাসরি অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পান।
তবে বাজেট বিতর্কের জেরে গত ৫ জুলাই পদত্যাগ করেন ঋষি। তার পদত্যাগে বরিস জনসন সরকারের ওপর চাপ আরও বেড়ে যায়। যার জেরে শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করতে বাধ্য হন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।
এরপর বরিসের উত্তরসূরী হওয়ার প্রতিযোগিতায় নাম লেখান ঋষি। তবে শেষপর্যন্ত লিজ ট্রাসের কাছে হেরে যান তিনি। কিন্তু এবার আর ঋষির পথে কেউ বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেননি। ফলে যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এশীয় বংশোদ্ভূত কেউ প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসতে চলেছেন।
সূত্র: বিবিসি, এনডিটিভি, আনন্দবাজার পত্রিকাএসএএইচ/কেএএ