একসময় প্রতিটি রন্ধনশালায় শিল-পাটার কদর থাকলেও কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে ঐতিহ্যবাহী এই বস্তুটি। আধুনিকতার ছোঁয়ায় শিল-পাটার জায়গা দখল করে নিয়েছে ব্লেন্ডারসহ নিত্যনতুন যন্ত্রপাতি। তবে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ধরে রাখতে এখনো কাজ করে যাচ্ছেন কুড়িগ্রামের সুশীল চন্দ্র মোহন্ত। ৭৫ বয়সী শুশীল চন্দ্রের বাড়ি ফুলবাড়ী উপজেলার পানিমাছকুটি গ্রামে।
শিল-পাটার ইতিহাস বহু পুরোনো। পাটা মূলত পাথরের প্লেট। যার ওপর একটি পাথরের বল (শিল) দিয়ে মসলা বা বিভিন্ন ধরনের শস্য পিষে গুঁড়া বা পেস্ট করা হয়। আগে গ্রামীণ পরিবারের প্রতিটি বাড়িতে শিল-পাটা ছিল। রান্নার অন্যতম উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হতো এটি।
সম্প্রতি ফুলবাড়ী উপজেলার কুরুষাফেরুষা গ্রামে দেখা মেলে সুশীল চন্দ্রের। এসময় তাকে শিল-পাটা ধার দিতে দেখা যায়। প্রতিটা শিল-পাটার ধার কাটার বিনিময়ে তাকে দিতে হয় এককেজি করে চাল। গ্রামে গ্রামে ঘুরে হাতুড়ি, বাটাল আর ছেনি দিয়ে ঠুকেঠুকে শিল-পাটার ধার কাটেন তিনি।
সুশীল চন্দ্র মোহন্ত জানান, প্রায় ৪৫ বছর ধরে এ পেশার সঙ্গে যুক্ত তিনি। আগে ব্যবসা ভালো হলেও এখন অনেকটাই কমে গেছে। ফুলবাড়ী উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী নাগেশ্বরী-ভূরুঙ্গামারী ও আশপাশের এলাকায় গিয়ে শিল-পাটা ধার দেওয়ার কাজ করা হয়।
তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রতিটি শিল-পাটা ধার দিতে এককেজি করে চাল নিই। এভাবে প্রতিদিন ৮-১০ কেজি চাল ও ১০০-১৫০ টাকার মতো আয় হয়। তা দিয়েই কোনোরকম দিন কেটে যাচ্ছে।’
উপজেলার কুরুষাফেরুষা এলাকার গৃহিণী সূুচিত্রা রানী ও শাপলা রানী বলেন, ‘এখনো আমরা প্রতিদিন বাড়িতে রান্নার কাজের জন্য শিল-পাটা ব্যবহার করে আসছি। তবে বড় অনুষ্ঠান হলে মেশিনেই হলুদ, ধনিয়া, মসলা গুঁড়া করি।’
একই গ্রামের বৃদ্ধা মনি বালা (৭২) জাগো নিউজকে বলেন, ‘আগে প্রতিটি আন্দন ঘরে (রান্নাঘর) শিল-পাটা আছিল (ছিল)। এখনকার বউ-ঝিরা আর পরিশ্রম করতে চায় না। সবাই তৈয়র (রেডিমেড) জিনিস চায়। শিল-পাটায় মসলা বাটতে খুব কষ্ট হয়। এজন্য ধীরে ধীরে এর কদর কমে গেছে।’
এসআর/জিকেএস