সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদ বিলুপ্ত করার সুপারিশ করেছে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে গঠিত কনসালটেশন (পরামর্শক) কমিটি।
Advertisement
সুপারিশ অনুযায়ী- প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শুধু ‘শিক্ষক’ পদবি নিয়ে কর্মজীবন শুরু করে পরবর্তীতে ‘সিনিয়র শিক্ষক’ হিসেবে পদোন্নতি দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়।
সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে প্রধান উপদেষ্টাকে এ সুপারিশ সংবলিত প্রতিবেদন জমা দেয় পরামর্শক কমিটি। পরে বিকেল ৫টায় এ নিয়ে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার।
এসময় পরামর্শক কমিটির সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। ৯ সদস্যের এ পরামর্শক কমিটি দেশে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে মোট ১৪টি সুপারিশ করেছে।
Advertisement
আরও পড়ুন
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মঘণ্টা বাড়ানোর সুপারিশ করবে কমিশন২৮৫ প্রতিবন্ধীকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগে হাইকোর্টের রায় প্রকাশশিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের শিক্ষাকর্মীদের পেশাগত মর্যাদা, পদোন্নতি ও পেশাগত অগ্রগতির ব্যাপারে নির্দিষ্ট আশু পদক্ষেপের সুপারিশ করা হয়েছে।
দীর্ঘমেয়াদে প্রাথমিক শিক্ষকসহ বিদ্যালয় শিক্ষকদের স্বতন্ত্র মর্যাদা ও উচ্চতর বেতন কাঠামো বিবেচনা করার সুপারিশ করে কমিটি। এ উদ্দেশ্যে আশু উদ্যোগ নেওয়ারও সুপারিশ করা হয়।
পরামর্শক কমিটির সুপারিশে শিক্ষকদের বেতন বিষয়ে বলা হয়েছে, বর্তমানে শিক্ষকরা ১৩তম গ্রেডে আছেন। প্রধান শিক্ষকদের জন্য সরকার ১১তম গ্রেড দিয়েছে। প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেডে পদায়নের দাবি উচ্চ আদালতে সমর্থন পেয়েছে। কিন্তু সরকার এ ব্যাপারে রিভিউ আবেদন করেছে।
Advertisement
সমগ্র পরিস্থিতি বিবেচনায় শিক্ষকদের স্বতন্ত্র মর্যাদা ও উচ্চতর বেতন কাঠামো প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত কমিটির অন্তর্বর্তী সুপারিশ হলো- শিক্ষক পদে প্রবেশ ১২তম গ্রেডে, দুই বছর পর স্থায়ীকরণ, আরও দুই বছর পর ১১তম গ্রেডে সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি।
প্রধান শিক্ষকের ক্ষেত্রে যে সুপারিশসরকারের রিভিউ আবেদন প্রত্যাহার ও প্রধান শিক্ষকের জন্য ১০ম গ্রেড নির্ধারণ ও সকল প্রধান শিক্ষক পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগ। শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষক নিয়মানুসারে উচ্চতর স্কেল পাওয়ার যোগ্য হবেন। সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ বৃদ্ধি করা যেতে পারে ও সিনিয়র শিক্ষকদের মধ্য থেকে দায়িত্বভাতাসহ পদায়ন করা যেতে পারে।
মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষেত্রে পদোন্নতিযোগ্য পদসমূহ ও শূন্যপদ আশু পূরণ, সমন্বিত গ্রেডেশন, পারস্পরিক বদলি, আঞ্চলিক অফিস স্থাপন এবং প্রাথমিক শিক্ষা ক্যাডার সার্ভিস বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে।
সুপারিশ প্রতিবেদনের শেষাংশে বলা হয়, শিক্ষা সংস্কারের জন্য কোনো সহজ জাদুকরী সমাধান নেই। প্রস্তাবিত সুপারিশের বিষয়ে সরকারকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে সমন্বিত বাস্তবায়ন কর্মপরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। পঞ্চম প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কার্যক্রম ও সরকারের বার্ষিক বাজেট হবে সুপারিশ বাস্তবায়নের প্রধান বাহন।
গত অক্টোবরে প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা সংস্কারে পরামর্শক কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমেদকে। কমিটিতে একজন সদস্যসচিব ও ৭ জন সদস্য ছিলেন।
কমিটির সদস্যরা হলেন- প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ও সাবেক সচিব খোন্দকার মো. আসাদুজ্জামান, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর সাবেক মহাপরিচালক মো. রফিকুজ্জামান, সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পিইডিপি-২ এর সাবেক যুগ্ম প্রোগ্রাম পরিচালক চৌধুরী মুফাদ আহমেদ, গণসাহায্য সংস্থার পরিচালক (শিক্ষা) বেগম সামসি হাসান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক শিক্ষা উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইরাম মারিয়াম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মাহবুব মোরশেদ এবং শিবরাম আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মো. নূরুল আলম।
এছাড়া প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (বিদ্যালয়) ছিলেন কমিটির সদস্যসচিব হিসেবে।
এএএইচ/এএমএ/এমএস