ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে সাম্প্রতিক ফোনালাপের পর ইউক্রেন ও ইউরোপীয় মিত্রদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। ট্রাম্পের এ ধরনের একতরফা কূটনৈতিক পদক্ষেপকে কিয়েভের কর্মকর্তারা ইউক্রেনের স্বার্থ উপেক্ষা করার শামিল বলে মনে করছেন।
Advertisement
গত ১২ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। তবে এই আলাপের আগে ইউক্রেনের সঙ্গে কোনো ধরনের সমন্বয় করা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। ফোনালাপের পরপরই ট্রাম্প ঘোষণা দেন, যুদ্ধবিরতির জন্য আলোচনা ‘তাৎক্ষণিকভাবে’ শুরু হবে এবং তিনি হয়তো সৌদি আরবে গিয়ে পুতিনের সঙ্গে সরাসরি বৈঠক করবেন।
ট্রাম্প-পুতিন আলোচনার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সতর্ক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ লেখেন, ইউক্রেনের চেয়ে শান্তি কেউ বেশি চায় না। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমরা রুশ আগ্রাসন থামানো ও স্থায়ী শান্তি নিশ্চিত করতে পরবর্তী পদক্ষেপগুলো নির্ধারণ করছি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, চলুন, এটি সম্পন্ন করি।
আরও পড়ুন>>
Advertisement
তবে ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, ট্রাম্পের এই উদ্যোগের ফলে যুদ্ধবিরতির নামে রাশিয়ার স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া হতে পারে এবং ইউক্রেনকে বাদ দিয়েই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের অনেক বিশ্লেষক এবং কর্মকর্তারাও মনে করছেন, ট্রাম্প একতরফাভাবে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পথে হাঁটছেন। অথচ তিনি রাশিয়ার কাছ থেকে কোনো প্রতিদান আদায় করতে পারেননি। এর প্রভাব বিশ্ববাজারেও পড়েছে—ট্রাম্প-পুতিন আলাপের পর রাশিয়ার শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে, অপরিশোধিত তেলের দাম তিন শতাংশ কমে গেছে।
সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইকেল ম্যাকফল এক্স-এ লিখেছেন, কূটনীতির মূলনীতি হলো—কিছু পাবে না তো কিছু দেবে না। ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনার আগে ইউক্রেনের সঙ্গে সমন্বয় করা উচিত ছিল।
মার্কিন নীতির পরিবর্তন, অনিশ্চয়তায় ইউক্রেনের ভবিষ্যৎমার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ বলেছেন, ইউক্রেনের ২০১৪ ও ২০২২ সালের আগের সীমান্ত ফিরে পাওয়া ‘অবাস্তব’। তিনি আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কোনো সরাসরি পদক্ষেপ নেবে না। ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্যপদ পাবে না, মার্কিন সেনারা সেখানে অবস্থান নেবে না এবং কোনো ইউরোপীয় সেনা ইউক্রেনে মোতায়েন হলে তাদের জন্য ন্যাটোর প্রতিরক্ষা সুবিধাও দেওয়া হবে না।
Advertisement
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প ইউক্রেনের দুর্লভ খনিজ সম্পদের প্রবেশাধিকারকে যুক্তরাষ্ট্রের অতীত সহায়তার বিনিময়ে ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেখতে পারেন। জেলেনস্কি এ ধরনের চুক্তির সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি, তবে ট্রাম্পও এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত অবস্থান জানাননি।
ট্রাম্পের এমন অবস্থান ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের মধ্যে হতাশা বাড়িয়েছে। এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, আমি মনে করি, সবকিছু ইউক্রেনকে বাদ দিয়েই নির্ধারিত হবে। ইউক্রেন শেষ। আর ইউরোপও, এই পথেই এগোচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে ইউক্রেন ও ইউরোপীয় দেশগুলো যুদ্ধের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করেছে। তবে ট্রাম্প প্রশাসন যদি ইউক্রেনকে পাশ কাটিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি আলোচনা চালিয়ে যায়, তাহলে যুদ্ধের ফলাফল ইউক্রেনের জন্য কতটা সহায়ক হবে, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।
কেএএ/