গার্মেন্টসে অসুস্থ হয়ে নারী শ্রমিকের মৃত্যুর একদিন পর আবারো আন্দোলনে নেমেছেন নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী ইপিজেডের অনন্ত অ্যাপারেলসে কর্মরত শ্রমিকরা। এবার নিহত লিজা আক্তারের (২৪) মৃত্যুকে কেন্দ্র করে নয় দফা দাবি জানিয়ে গার্মেন্টস প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করছেন তারা।
বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আন্দোলন চলমান রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যদের ঘটনাস্থলে অবস্থান করতে দেখা গেছে।
দেখা গেছে, আজ সকাল থেকেই প্রায় তিনশোর বেশি শ্রমিক ফ্যাক্টরির প্রবেশদ্বারে নয় দফা দাবি আদায়ের জন্য বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন। শ্রমিকদের জীবনের চেয়ে কর্মকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ বিক্ষোভকারীদের।
আন্দোলনরত শ্রমিকদের ৯টি দাবির মধ্যে রয়েছে-
যেকোনো মুহূর্তে শ্রমিকরা অসুস্থ ও পারিবারিক সমস্যার সম্মুখীন হলে দ্রুত ছুটি নিশ্চিত করা, শুক্রবার ফ্যাক্টরি বন্ধ, প্রতিমাসের ৬ তারিখ বৃহস্পতিবার পড়লে সেদিন বেতন দেওয়া, সন্ধ্যা ৭টার পর ১ ঘণ্টা বেশি কাজ করালে টিফিন বাড়তি দেওয়া, শ্রমিকদের ছাঁটাই করা যাবে না, ঈদের ছুটি ১১ দিন নির্ধারণ করা, অফিসের সিনিয়ররা শ্রমিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার থেকে বিরত থাকা, লিজার মৃত্যুতে আজ অর্থাৎ একদিন শোক পালনের উদ্দেশ্যে ফ্যাক্টরি বন্ধ রাখা, নিয়মিত যাতায়াত ভাড়া ও খাবারের খরচ বাড়ানো।
তামান্না ও মাহমুদা নামের আন্দোলনরত দুই শ্রমিক বলেন, আমাদের দাবি মানতেই হবে। মালিক না আসা পর্যন্ত আমরা কাজে যুক্ত হবো না।
এ বিষয়ের অনন্ত অ্যাপারেলসের অ্যাডমিন ম্যানেজার নামজুল হককে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহিনূর আলম জাগো নিউজকে বলেন, শ্রমিকরা এখন যে আন্দোলন করছে সেটা বিভিন্ন দাবি নিয়ে। এটা মালিকপক্ষ আসলেই সমাধান হয়ে যাবে। পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বেপজার লোকজন ঘটনাস্থলে আছে।
আদমজী ইপিজেডের (বেপজার) জিএম মাহবুব আহমেদ সিদ্দিক জাগো নিউজকে জানান, শ্রমিকদের সকল দাবি মালিকপক্ষ মেনে নিয়েছে। শ্রমিকরা কাজও শুরু করেছিল। হঠাৎ আবার কেন যেন আন্দোলন শুরু করেছে। তাদের দাবি মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলবে। গার্মেন্টস মালিকও আসতেছে, তিনি পথেই আছেন।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি অনন্ত অ্যাপারেলস নামক গার্মেন্টসে কর্মরত শ্রমিক লিজা আক্তার হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষের কাছে চিকিৎসার জন্য ছুটির আবেদন করেন ভিকটিম। তবে কর্তৃপক্ষ তার ছুটির আবেদনে অসম্মতি জানায়। একপর্যায়ে চিকিৎসার অভাবে শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে সেদিন রাতে বাধ্য হয়ে খানপুর হাসপাতালে নিয়ে যায় কর্তৃপক্ষ। তবে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক লিজাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সহকর্মীর এমন মর্মান্তিক মৃত্যুর ক্ষোভে পরদিন গতকাল ১৯ ফেব্রুয়ারি বিক্ষোভে নামেন সহকর্মীরা। তখন মালিকপক্ষ তাদের সঙ্গে সমঝোতার আশ্বাস দিয়ে একদিনের জন্য কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে।
মো. আকাশ/এফএ/এএসএম