মাদারীপুরে বালু ব্যবসাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় আহত পলাশ সরদার (১৭) নামে আরও একজন নিহত হয়েছেন। এনিয়ে দুই ভাইসহ তিনজন মারা গেছেন।
শনিবার (৮ মার্চ) দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
পলাশ সরদার সদর উপজেলার খোয়াজপুর এলাকার মুজাম সরদারের ছেলে। এর আগে সকালে একই এলাকার আজিবর সরদারের ছেলে সাইফুল সরদার (৪০) ও আতাউর সরদার (৩৫) মারা যান।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, উপজেলার খোয়াজপুর এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে কীর্তিনাশা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছেন ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল সরদার। অপর পক্ষ একই এলাকার হোসেন সরদার ও স্থানীয় শাজাহান খা বালু উত্তোলন করে আসছিলেন। এনিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। একে অপর পক্ষকে বালু উত্তোলন করতে বাধা দেয়। এর জেরে শনিবার বেলা ১১টার দিকে খোয়াজপুর সরদার বাড়ি জামে মসজিদের সামনে একা পেয়ে সাইফুল সরদারের ওপর হামলা চালায় হোসেন সরদার ও শাজাহান খায়ের লোকজন।
খবরটি ছড়িয়ে পড়লে সাইফুলের বড়ভাই আতাউর সরদার, আরেক ভাই অলিল সরদার ও তার পরিবারের লোকজন এগিয়ে আসেন। এসময় প্রাণ রক্ষা করতে তিন ভাই দৌড়ে মসজিদের মধ্যে লুকিয়ে পড়েন। পরে সেখান থেকে তাদের টেনে হিঁচড়ে ও কোপাতে কোপাতে বাহিরে বের করেন। এসময় প্রতিপক্ষের লোকজন এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। এ ঘটনায় ঘটনাস্থলে দুই ভাই মারা যান। চাচাতো ভাই পলাশ সরদারকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান।
এছাড়াও নিহতদের ভাই অলিল সরদার (২৮) ও আজিজুল হকের ছেলে তাজেল সরদার (২৫) গুরুতর আহত হন। তাদের প্রথমে মাদারীপুর জেনারেল হাসপাতাল ও পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এছাড়াও আরও আহতরা হলেন সাইফুল সরদারের স্ত্রী সতি বেগম (২৫), আতাউর সরদারের স্ত্রী মাহমুদা বেগম (৩০), রোজিনা বেগম (৩৫) প্রমুখ।
নিহতদের বোন হাফিজা বেগম বলেন, আমাদের সব শেষ করে দিল। আমাদের বংশ শেষ করে দিল। আল্লাহর ঘরে লুকিয়েও আমরা ভাইরা রক্ষা পেলো না। তাদের আল্লাহর ঘর মসজিদের ভেতর থেকে বের করে কুপিয়ে হত্যা করেছে। হত্যাকারীদের বিচার আল্লাহই করবেন।
সাইফুল সরদারের স্ত্রী সতি বেগম বলেন, আমার সন্তানের বয়স মাত্র এক মাস। এ বয়সে আমার সন্তান এতিম হয়ে গেল। এখন এ সন্তান নিয়ে আমি কোথায় দাঁড়াবো। তাছাড়া আগুন দিয়ে আমাদের সব পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার চাতক চাকমা (সদর সার্কেল) বলেন, প্রাথমিকভাবে জেনেছি বালু উত্তোলন নিয়ে দ্বন্দ্বে এ ঘটনা ঘটেছে। সাইফুল সরদারের বিরুদ্ধে ছিনতাইসহ একাধিক মামলা আছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর সাহা বলেন, এ ঘটনায় তিনজন মারা গেছেন। পলাশ সরদার নামে আরও একজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। পুলিশ এ পর্যন্ত তিনজনকে আটক করেছে। এ ব্যাপারে অভিযান চলমান আছে।
আয়শা সিদ্দিকা আকাশী/আরএইচ/জেআইএম