৫৪ ধারায় গ্রেফতার ও রিমান্ডের আপিল খারিজের পর এখন বিনা পরোয়ানায় কাউকে গ্রেফতার করতে হলে পুলিশকে পরিচয়পত্র দেখাতে হবে। এ বিষয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল খারিজের পর এক প্রতিক্রিয়ায় বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার এম. আমীর উল ইসলাম এ মন্তব্য করেন।তিনি বলেন, আপিল ডিসমিস হওয়ার পরে আমি মনে করি এই নির্দেশনাগুলো প্রতিপালন করা একটি রাষ্ট্রীয় কর্তব্য। রাষ্ট্র এসব নির্দেশনা মেনে চলবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।৫৪ ধারায় গ্রেফতারে পুলিশকে পরিচয়পত্র দেখাতে হবে উল্লেখ এই সিনিয়র আইনজীবী বলেন, আশাকরি আইনের শাসন রক্ষায় পুলিশ সর্বোচ্চ দায়িত্ব পালন করবে। উল্লেখ্য, ফৌজদারী কার্যবিধির ৫৪ ও ১৬৭ ধারা অনুযায়ী গ্রেফতার ও রিমান্ডের ক্ষেত্রে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন আজ মঙ্গলবার খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। মানবাধিকার সংগঠন সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন, আইন ও সালিশ কেন্দ্র এবং ব্লাস্ট এই তিনটি সংগঠন মামলাটি করেছিল। রাষ্ট্রপক্ষের আপিল খারিজ হওয়ায় এখন বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করা যাবে কিনা জানতে চাইলে আমীর-উল-ইসলাম বলেন, হাইকোর্ট বলেছিল এটা করতে হলে যৌক্তিক কারণে সন্দেহ ও অবস্থা দেখে করতে হবে। সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় যেটা প্রয়োজন হয় সেটা রিজনেবল হতে হবে, অবজেকটিভ হতে হবে। তিনি বলেন, অ্যারেস্ট করার পরই তাকে বলতে হবে কি কারণে তাকে অ্যারেস্ট করা হল। এছাড়া তাকে লইয়ার নিয়োগের সুযোগ প্রদান এবং তার সাথে যোগাযোগ করার ব্যবস্থা করাসহ আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগের ব্যবস্থা করতে হবে। গ্রেফতারের সময় পুলিশকে অবশ্যই তাদের পরিচয়পত্র দেখাতে হবে।একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর পর ১৯৯৮ সালে রিটটি করা হয়েছিল। সেই মামলার রায়ে ২০০৩ সালে ফৌজদারী কার্যবিধির ৫৪ ধারা সংশোধনের নির্দেশনা দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। আইন সংশোধনীর পূর্ব পর্যন্ত ১৫ দফা নির্দেশনা মেনে চলারও নির্দেশও দিয়েছিল আদালত। হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে একই বছর আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। দীর্ঘ ১৩ বছর পর আপিল বিভাগ রাষ্ট্রপক্ষের সেই আপিল আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। তবে গাইডলাইন আকারে হাইকোর্টের রায়ের কিছু মডিফিকেশন থাকবে বলেও জানিয়েছেন আদালত। রায়ের পর রিট আবেদনকারীর পক্ষের অন্যতম আইনজীবী সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘১৩ বছর আগে রায়ে ৫৪ ধারাকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হয়েছিল। সে সময় যে আদেশগুলো দেওয়া হয়েছিল, সেগুলোর ব্যাপারে আজ চূড়ান্ত রায় হল। তখন সরকার যে ফাইল করেছিল সেটা আজকে তারা ডিসমিস করেছে।এই রায়ের ফলে হাইকোর্টের দেওয়া গাইডলাইনগুলো বহাল থাকছে উল্লেখ করে সিনিয়র এই আইনজীবী বলেন, আমরা ধরে নেব সেগুলোকে বহালই রাখা হয়েছে। নীতিগতভাবে আমরা বলতে পারব সবগুলোই বহাল আছে। এর ওপর কিছু মন্তব্য যদি তারা করেন, সেটা আমরা পূর্ণাঙ্গ রায় দেখে বলতে পারব। হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী সরকার প্রতিবেদন না দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি বলে জানিয়েছেন ব্লাস্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন। তিনি বলেন, অ্যাপিলেট ডিভিশন শুনানিতে বারবার সরকার পক্ষের কাছে জানতে চেয়েছেন ১৫টি নির্দেশনার তারা কতোটুকু পালন করেছেন? কিন্তু সেই প্রতিবেদন এখনো রাষ্ট্রপক্ষ দেয়নি। তিনি আরো বলেন, তবে মিডিয়া ও মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিবেদনের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি পুলিশ হেফাজতে এবং বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হেফাজতে নির্যাতন চলছে। আপিল বিভাগের রায়ের পর আমরা আশা করছি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও ম্যাজিস্ট্রেট তা মেনে চলবেন।এফএইচ/এমএমজেড/আরআইপি
Advertisement