ন্যায্য নগর গঠনে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ভূমিকা রাখবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ।
Advertisement
সোমবার (২৮ এপ্রিল) ডিএনসিসির নগর ভবনে ‘ন্যায্য নগর গঠনে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ভূমিকা’ শীর্ষক পলিসি ডায়ালগে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।
ডিএনসিসি এবং বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এ ডায়ালগের আয়োজন করে। ডায়ালগে ঢাকার প্রধান সমস্যা উল্লেখ করে বাসযোগ্য নগরী গড়তে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানোর ওপর জোর দেন বক্তারা।
স্টেট ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী নকীর সভাপতিত্বে পলিসি ডায়ালগে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ক্যাপসের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার।
Advertisement
এ সময় ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ঢাকা শহরের বেশকিছু পরিকল্পিত এলাকা আছে যেখানে ভবনগুলোর উচ্চতা কাছাকাছি, ফলে সেসব ভবনের সোলার ক্লিয়ারেন্স অনেক বেশি। সেই এলাকাগুলোতে পরিকল্পিতভাবে সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে নিজস্ব বিদ্যুতের চাহিদা মিটিয়ে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা সম্ভব। পাশাপাশি ঢাকার আশপাশের উদ্ধারকৃত নদীর পাড়কে কাজে লাগিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন সম্ভব। এতে করে জাস্ট ট্রানজিশন এবং ন্যায্য নগরের যে চিন্তাভাবনা আমরা ধারণ করছি তা অর্জন করা সম্ভব। এক্ষেত্রে গবেষণা কাজের ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি আরও বলেন, রুফটপ সোলার প্যানেল ব্যবহারকারীদের হোল্ডিং ট্যাক্সের ওপর ৫ শতাংশ কর রেয়াত দেওয়ার কথা ভাবছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। বায়ুদূষণ মোকাবিলায় প্রযুক্তির ব্যবহারের উদ্যোগ নিয়েছে ডিএনসিসি। শুধু সরকার বা সিটি করপোরেশন নয়, নাগরিকদের সঙ্গে নিয়ে ন্যায্য নগর প্রতিষ্ঠার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, আমাদের প্রাণের নগরী ঢাকা জীবনের মান সূচকে শেষদিক থেকে চতুর্থ, বিশ্বের সবচেয়ে ধীর গতির শহর, বায়ুদূষণের তালিকায় শীর্ষে, দূষিত শহরের তালিকায় ষষ্ঠ, বসবাসের অযোগ্য শহরের তালিকার প্রথম সারিতে, বিশ্বে যানজটের সূচকে পাঁচ নম্বরে, পৃথিবীর চতুর্থ ঘনবসতিপূর্ণ শহর, শব্দদূষণেও শীর্ষে ঢাকা এবং স্বাস্থ্যসেবার সূচকে শেষের দিকে।
আরও পড়ুন অটোরিকশা তৈরির ওয়ার্কশপে শিগগির অভিযান: ডিএনসিসি প্রশাসকতিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল পারফরমেন্স ইনডেক্স (ইপিআই) এর ২০২৪ সালের বৈশ্বিক প্রতিবেদনে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৫তম। এক কথায় ঢাকা শহর আজ ভয়াবহ পরিবেশ দূষণের সম্মুখীন। শিল্পায়ন, নগরায়ণ এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে শহরের পরিবেশের প্রতিটি দিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর এই দূষণগুলো থেকে পরিত্রাণের অন্যতম উপায় হতে পারে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি।
Advertisement
ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো. কামরুজ্জামান বলেন, ঢাকা শহর একটি অপরিকল্পিত শহর। এ অপরিকল্পিত নগরে এত সহজেই ন্যায্যতা পাওয়া সম্ভব নয়। সর্বপ্রথম শহরকে সঠিক পরিকল্পনারায় এনে এবং সেই পরিকল্পনাকে বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে পারবো।
বিআইপির প্রেসিডেন্ট পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য শক্তির প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি, পরিবহন ও শিল্পখাতে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির প্রয়োগ এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করে আমরা একটি সুস্থ ও সবুজ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারি। এটি শুধু বর্তমান প্রজন্মের জন্য নয়, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও একটি নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক এবং চেয়ারম্যান ড. এম. শহীদুল ইসলাম বলেন, দূষণমুক্ত ন্যায্য নগর গঠনে শতাধিক উপায় রয়েছে। আমাদের চাহিদাটাকে কমিয়ে আনতে হবে। আমরা যদি গণপরিবহন ব্যবহার করি তাহলে দূষণ কমবে পাশাপাশি দূষণকারী যারা আছেন তাদের সমাধানের দায়িত্ব নিতে হবে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)-এর উপদেষ্টা বোর্ডের আহ্বায়ক মোহাম্মদ ফজলে রেজা সুমন বলেন, ঢাকার দূষণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে রুফটপ ম্যানেজমেন্ট হতে পারে নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদনের অন্যতম উৎস। শুধু দূষণ নিয়ে কথা বলে, সরকারের ওপর এর নিয়ন্ত্রণের দায়ভার চাপিয়ে দিলে চলবে না। আমরা যদি নিজ নিজ জায়গা থেকে পদক্ষেপ গ্রহণ করি তাহলে কোনো ধরনের আইনি পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়াই আমরা একটি সুষ্ঠু ও দূষণমুক্ত শহর গড়ে তুলতে পারবো।
বুয়েটের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির প্রাক্তন ডিন ড. ইজাজ হোসেন বলেন, দূষণ রোধ করতে সর্বপ্রথম দূষণকারীকে চিহ্নিত করে দূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। যানজট নিরসনে বৈদ্যুতিক যানবাহনের প্রচলন করলে সে ক্ষেত্রে সৌরশক্তির মাধ্যমে চার্জিংয়ের ব্যবস্থা করলে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমবে।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট (ডব্লিউবিবিটি)-এর পরিচালক গাউস পিয়ারী বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার বৃদ্ধি, মানসম্মত গণপরিবহন, শিল্পখাত, কৃষিখাত, অফিস আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়িতে এর ব্যবহার করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
পলিসি ডায়ালগে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রাশেদুজ্জামান মজুমদার, ব্যারিস্টার নেওয়াজ মোরশেদ, ইয়ুথনেট গ্লোবালের সমন্বয়ক সোহানুর রহমান, ক্যাপসের রিসার্চ লিড ইঞ্জিনিয়ার মারজিয়াত রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন।
এমএমএ/ইএ/এএসএম