কষ্ট ছাড়া কেষ্ট মেলে না। প্রতিটি সফল মানুষের জন্য এই কথাটা নির্মম সত্য। পরিশ্রম ছাড়া জগতে বড় হওয়া যায় না, নিজেকে ফুটিয়ে তোলা যায় না। মনীষীরা তাই বলেন। প্রতিটি সফল মানুষের সফলতার পেছনে থাকে অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা আর কঠিন সংগ্রামের গল্প। তাদেরতে উতরাতে হয় শতশত পাহাড়, সমূদ্র আর গিরিপথ।
Advertisement
বৈভব সূর্যবংশীর ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। যেই ১৪ বছরের বালক গতকাল সোমবার মাত্র ৩৫ বলে সেঞ্চুরি করে পুরো বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। স্বীকৃত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বিশ্বের সর্বকনিষ্ট সেঞ্চুরিয়ান বনে গেছেন।
অনেকেই কাছে অবিশ্বাস্য মনে হয়েছে। যে ছেলের গালের রেখায় এখনো শিশুসুলভ মেদ রয়ে গেছে, মেরুদণ্ড এখনো স্থিতিশীল হয়নি, এখনো দেহ গঠনের প্রক্রিয়া চলমান, সেই ছেলে কি না আইপিএলের মতো বড় আসরে নামি দামি বোলারদের পিছিয়ে ভূত বানিয়ে দিয়েছেন!
এসবই সম্ভব হয়েছে পরিশ্রম আর ত্যাগের কারণে। মাত্র ১০ বছর বয়স থেকেই যে সূর্যবংশী কঠোর পরিশ্রম করতে শিখে গেছেন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা মাঠে পড়েছিলেন, দৈনিক ৬০০ বল খেলেছেন, যে ছেলের দেখা স্বপ্নে বাবাও বিভোর হয়েছেন এবং ছেলের ক্রিকেটীয় স্বপ্নপূরণে জমি বিক্রি করে দিতেও দুইবার ভাবেননি, সফলতা তো তার পায়ের নিচেই লুটিয়ে পড়বে। পৃথিবীর নিয়ম তাই বলে।
Advertisement
ছেলে সূর্যবংশী পাটনায় যখন ১৬-১৭ বছর বয়সী নেট বোলারদের মুখোমুখি হয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দিচ্ছেন, বাবা সঞ্জীব সুর্যবংশী তখন বাড়তি ১০টি টিফিন বক্স নিয়ে যেতেন। এভাবেই কেটেছে চার বছর। তারপরই তো পূরণ হলো আইপিএলে খেলার স্বপ্ন। মাত্র তিন ম্যাচের মাথায় সেই স্বপ্ন পরিপূর্ণতাও পেল।
আইপিএলে সূর্যবংশীর ক্যারিয়ারের অভিষেকটা হয়েছে দুর্দান্ত। প্রথম বলেই শার্দুল ঠাকুরকে বিশাল ছক্কা হাঁকিয়ে চমক সৃষ্টি করেন তিনি। আর গতকাল সোমবার ৩৮ বলে করেছেন অপরাজিত ১০১ রান (১১ ছক্কা ৭ চার)। এখন পর্যন্ত তিন ম্যাচে ১৫১ রান করেছেন সূর্যবংশী। গড় ৭৫.৫০ এবং স্ট্রাইক রেট ২২২.০৫।
গত বছরের আইপিএল মেগা নিলামে বড় চমক ছিল সুর্যবংশীকে ১ কোটি ১০ লাখ রুপিতে রাজস্থানে অন্তর্ভুক্ত করা। ২০১১ সালের ২৭ মার্চ বিহারে জন্ম নেওয়া ব্যাটার ছিলেন আইপিএলে দল পাওয়া সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড়। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে মাত্র ১২ বছর ২৮৪ দিন বয়সে বিহারের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক করেন তিনি।
গত বছর চেন্নাইয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভারত অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে ম্যাচে ৫৮ বলে সেঞ্চুরি করেছিলেন সূর্যবংশী। ২০২৪ সালে সৈয়দ মুস্তাক আলি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে বিহারের হয়ে টি-টোয়েন্টি অভিষেকও করেন। যদিও প্রথম ম্যাচে খুব বেশি রান করতে পারেননি। এছাড়া ২০২৪-২৫ এশিয়া কাপ অনূর্ধ্ব-১৯ টুর্নামেন্টের সপ্তম সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন। টুর্নামেন্টে ৫ ম্যাচে ১৭৬ রান করেছিলেন।
Advertisement
এমএইচ/জিকেএস