দেশজুড়ে

টুং-টাং শব্দে মুখর কামারপাড়া

ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে মাদারীপুরের কামারপাড়ার কারিগররা ব্যস্ত সময় পার করছেন। কোরবানির কাজে ব্যবহৃত লোহার সরঞ্জাম বানানো ও শান দেওয়ার কাজে তারা ব্যস্ত। এতে করে কামারপাড়ায় দোকানগুলোতে লোহার টুং-টাং শব্দে মুখর হয়ে উঠেছে। মাদারীপুরের প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র পুরান বাজারসহ বিভিন্ন এলাকার কামার শিল্পীরা অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন।

জানা গেছে, পুরানবাজার, চরমুগরিয়া, কালীরবাজার, ছিলারচর, রাজৈর, টেকেরহাট, ডাসারের গোপালপুরহাট, ফাসিয়াতলা হাট, কালকিনি পৌর বাজার, কালিগঞ্জ বাজার, শশিকর হাট, ঘোষেরহাট ও ভুরঘাটা বাজারসহ জেলার বিভিন্ন এলাকার হাট-বাজারের কামারের দোকানগুলোতে ব্যস্ততার মাঝে চলছে কোরবানির পশু জবাইয়ের কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরির কাজ। কামাররা ভারি হাতুড়ি দিয়ে আগুনে পোড়া লোহার খণ্ড পিটিয়ে প্রয়োজনীয় দাঁ-বঁটি, চাকু, ছুরি ও চাপাতিসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরি করছেন। এছাড়াও চলছে বিভিন্ন সরঞ্জামে শান দেওয়ার কাজও।

কামার দোকান মালিকরা জানান, বছরের ১১ মাস কোনোরকম টিকে থাকলেও কোরবানির সময় ব্যস্ত হয়ে পড়েন কামার শিল্পীরা। বিক্রি ও শান দিয়ে প্রতিদিন তারা পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকার মতো আয় করছেন। মূলত কোরবানির সময়ে উপার্জন করা টাকা দিয়েই সারা বছর ব্যবসা টিকিয়ে রাখেন। কোরবানির আগে আকার ও ওজন ভেদে দাম নির্ধারণ করা হয়। এসময় অন্য সময়ের চেয়ে প্রতিটি সামগ্রীতে ২০০ টাকা পর্যন্ত দাম বেশি রাখা হয়। শান দিতেও দাম দ্বিগুণ রাখা হয়।

আরও পড়ুন ঈদুল আজহার সম্ভাব্য তারিখ জানালো আরব আমিরাত সড়কে ইজিবাইক-রিকশার জটলা, যানজটে দুর্ভোগ নির্মাণ কাজ কমায় ভাটা পড়েছে বালু ব্যবসায়

মাদারীপুর পুরানবাজারের কামার পট্টির কামার দোকানের মালিক সুনীল বেপারী বলেন, বর্তমানে আমাদের কাজের চাপ অনেক বেশি। সারা বছর তেমন একটা কাজ হয় না। মূলত ঈদের এই সময়টায় প্রচুর পরিমাণে কাজ থাকে। লাভও ভালো হয়। প্রতিদিন পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকার মতো বিক্রি হয়। তবে বাকি সময়টা খুব একটা কাজ হয় না। তখন আমাদের সংসার চালাতেই কষ্টকর হয়ে পড়ে।

পুরানবাজারের কামার কারিগর কিরণ মন্ডল বলেন, বছরের এই সময়টা আমাদের দম নেওয়ার যেন সময় হয় না। সারাদিন ও গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করতে হয়।

কালকিনির কামার শিল্পী গৌরাঙ্গ, কানাই, বলাই, সিদাম, নিখিল ও পদাই জানান, প্রতিবছর কোরবানির ঈদে তারা দাঁ, ছুরি, চাপাতিসহ বিভিন্ন উপকরণ তৈরি করেন। বর্তমানে লোহা ও কয়লার দাম অনেক বেড়েছে। সে তুলনায় কামার শিল্পের উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়েনি। তাদের আশা, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ শিল্প আবারও ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।

পুরানবাজারের কামার দোকানে আসা কাজী দেলোয়ার হোসেন বলেন, পারিবারিকভাবে সবাই মিলে কোরবানি করি। সবাই মিলে সেই গরুর মাংস নিজেরাই কাটাকাটি করি। তাই কোরবানির জন্য কিছু প্রয়োজনীয় চাপাতি, দাঁ, চাকু শান দিতে ও কয়েকটি কিনতে এসেছি। কারণ এখনই কামারদের এখানে অনেক ভিড়। পরে আরও ভিড় বেশি হবে, তাই আজই এই কাজগুলো সেরে ফেললাম। তবে বছরের এই সময়টায় এসব সামগ্রীর চাহিদা বেশি হওয়ায়, দামও একটু বেশি।

জেলার ইতিহাস গবেষক সুবল বিশ্বাস বলেন, একসময় কামারদের অবস্থা খুব ভালো ছিল। বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় কামারদের দুর্দশায় জীবনযাপন করতে হচ্ছে। তবে বছরের এই সময়টায় কামারদের ব্যস্ততা বাড়ে। কোরবানির জন্য ক্রেতারা বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরি করে ও শান দেন। বছরের বাকি সময়গুলোতে কামাররা অনেকটাই অলস সময় পার করে। ফলে তাদের জীবিকা নির্বাহ করতে সমস্যায় পরতে হয়। তাই অনেকেই এই পেশা ছেড়ে ভিন্ন পেশায় চলে যাচ্ছেন।

এমএন/জিকেএস