ধর্ম

জিলহজের শুরু থেকে ঈদ পর্যন্ত মাংস খাওয়া কি নিষিদ্ধ?

জিলহজের শুরু থেকে ঈদ পর্যন্ত মাংস খাওয়া কি নিষিদ্ধ?

আমাদের দেশে অনেকের মধ্যে প্রচলিত একটি ধারণা হলো, জিলহজের চাঁদ দেখা যাওয়া অর্থাৎ জিলহজ মাস শুরু হওয়ার পর থেকে ঈদুল আজহার দিন পর্যন্ত গরু, মুরগিসহ সব প্রকার পশু-পাখি জবাই করা নিষিদ্ধ ও সব প্রকার মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ। এটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ধারণা। কোরআন-হাদিসে জিলহজ মাসের প্রথম নয় দিন মাংস খেতে নিষেধ করা হয়নি বা অনুৎসাহিতও করা হয়নি।

Advertisement

তাই জিলহজের শুরু থেকে ঈদুল আজহা পর্যন্ত গরু, ছাগল, হাস, মুরগিসহ যে কোনো হালাল পশু-পাখির মাংস খাওয়া যেতে পারে এবং এ সময়ে যে কোনো হালাল পশু-পাখি খাওয়ার প্রয়োজনে জবাই করাও যেতে পারে। এটা অন্যান্য সময়ের মতোই জায়েজ, নিষিদ্ধ তো নয়ই, মাকরুহ বা অপছন্দনীয়ও নয়।

কেউ যদি ব্যক্তিগত রুচি ও ইচ্ছায় এ কয়দিন মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে চায়, তাতে সমস্যা নেই। কিন্তু এটাকে শরিয়তের বিধান মনে করে পালন করা যাবে না।

ইসলামে জিলহজের প্রথম দশক ফজিলতপূর্ণ

জিলহজের প্রথম দশক ইসলামে বিশেষভাবে সম্মানিত। এ সময়ে ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের একটি হজ ও গুরুত্বপূর্ণ আমল কোরবানি পালিত হয়। শাওয়াল ও জিলকদ মাসেও হজের জন্য ইহরাম বাধা যায়। কিন্তু হজের মূল কার্যক্রম; আরাফায় অবস্থান, মুজদালিফায় অবস্থান, কোরবানি ইত্যাদি এ সময়ই পালিত হয়। কোরবানির প্রধান দিন জিলহজের ১০ তারিখ। যদিও এর পরবর্তী দুদিন অর্থাৎ জিলহজের ১১ ও ১২ তারিখও কোরবানি করা যায়।

Advertisement

কোরআনে আল্লাহ জিলহজের প্রথম দশ রাতের শপথ করেছেন। আল্লাহ বলেন, শপথ ভোরবেলার, শপথ দশ রাতের, শপথ জোড় ও বেজোড়ের। (সুরা ফাজর: ১-৩)

জাবের (রা.) বৰ্ণনা করেন যে, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, এ আয়াতে দশ হচ্ছে জিলহজ মাসের দশ দিন, বেজোড় হচ্ছে আরাফার দিন আর জোড় হচ্ছে কোরবানির দিন। (মুসনাদে আহমদ: ৩/৩২৭)

কোরআনের আরেক জায়গায় আল্লাহ তাআলা বলেছেন, মানুষের মধ্যে হজের ঘোষণা দাও; তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং কৃশকায় উটে চড়ে দূর পথ পাড়ি দিয়ে। যেন তারা নিজেদের কল্যাণের স্থানসমূহে হাজির হতে পারে এবং তিনি তাদেরকে চতুষ্পদ জন্তু থেকে যে রিজিক দিয়েছেন তার ওপর নির্দিষ্ট দিনসমূহে আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে। (সুরা হজ: ২৮)

কোরআনের অধিকাংশ ব্যাখ্যাকারের মতে এ আয়াতে ‘নির্দিষ্ট দিনসমূহ’ বলে জিলহজের প্রথম দশ দিনকে বোঝানো হয়েছে।

Advertisement

জিলহজের প্রথম দশকে যে কোনো আমলের সওয়াব বেড়ে যায়

হাদিসে এসেছে, এ দশ দিন যে কোনো নফল আমলেরই সওয়াব বেড়ে যায়। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, অন্যান্য যে কোনো সময়ের তুলনায় জিলহজের প্রথম দশ দিনের নেক কাজ আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়। (সহিহ বুখারি: ৯৬৯)

এ ছাড়া একাধিক হাদিসে এ সময়ে রোজা, ও জিকিরেরও বিশেষ ফজিলত বর্ণিত হয়েছে।

জিলহজের প্রথম দশকের বিশেষ ফজিলতের কারণ কী?

সহিহ বুখারির প্রখ্যাত ব্যাখ্যাকার ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) জিলহজের প্রথম দশকের বিশেষ মর্যাদার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, জিলহজের প্রথম দশকের মর্যাদার কারণ হলো, এ দিনগুলোতে ইসলামের সবগুলো মৌলিক ইবাদত অর্থাৎ নামাজ, রোজা, সদকা, ও হজ একত্রিত হয় যা অন্য কোনো সময় হয় না। (ফাতহুল বারি: ২/৫৩৪)

অর্থাৎ এ দিনগুলোতে নামাজ আদায় করা হয় সব সময়ের মতোই, প্রথম দশকের রোজা বিশেষত আরাফার দিনের রোজা বিশেষ ফজিলতপূর্ণ, ফরজ সদকা বা জাকাত সারা বছরের মতো এ সময়ও আদায় করা যায়, নফল সদকারও বিশেষ মৌসুম এটি, আর হজ শুধু এ সময়েই পালন করা যায়। বছরের অন্য কোনো সময় ইসলামের সবগুলো মৌলিক ইবাদত একসাথে পালিত হয় না। এটাই জিলহজের প্রথম দশকের বিশেষ মর্যাদার কারণ।

ওএফএফ/জেআইএম