অনেক দিন পর ভাই ও ভাতিজাদের সঙ্গে দেখা হতো। ইচ্ছে ছিল এক সঙ্গে ঈদের নামাজ শেষে গরু কুরবানি করার। সবাই মিলে হইহুল্লোড়ে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু মুহূর্তেই আমাদের ঈদ আনন্দ চোখের জলে ভেসে গেলো।
Advertisement
এভাবে কথাগুলো বলছিলেন মো. আজিজুর রহমান। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনায় বড় ভাই ও দুই ভাতিজাকে হারিয়ে তার কণ্ঠে এই আক্ষেপের সুর।
মঙ্গলবার (৩ জুন) সকালে টাঙ্গাইলের বাসাইলের করাতিপাড়া এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় আজিজুর রহমানের বড় ভাই আমজাদ মণ্ডল (৬৫), ভাতিজা অতুল মণ্ডল (১৩) ও রাহাত মণ্ডল (২৬) নিহত হন।
এ ঘটনায় আমজাদ মণ্ডলের স্ত্রী মাকসুদা মণ্ডল, রাহাত মণ্ডলের স্ত্রী মরিয়ম বেগম ও বরিশালের হজরত আলীর ছেলে নাজমুল হোসেন আহত হন। তাদের ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা উদ্ধার করে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে মঙ্গলবার বিকেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা পাঠানো হয়।
Advertisement
হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, স্বজনেরা খবর পেয়ে ছুটে এসেছেন। অর্থোপেডিক ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন নিহত আমজাদের স্ত্রী মাকসুদার মাথায় ব্যান্ডেজ রয়েছে, তাকে ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। পাশের শয্যায় বসা মরিয়মের আঘাত ততটা গুরুতর নয়। তার পাশে রয়েছে তিন বছরের ছেলে মাহফুজ ও দেড় বছরের মেয়ে রজমনি। সন্তানদের জড়িয়ে ধরে তিনি ফুঁপিয়ে কাঁদছিলেন। স্বজনদের কাছে স্বামীর খোঁজ জানতে চাইছিলেন।
পাশে থাকা অন্যরা মরিয়মকে তার স্বামী, শ্বশুর ও দেবর নিচতলায় ভর্তি আছেন বলে সান্ত্বনা দেন।
আজিজুর রহমান বলেন, চালকের অবসাবধানতার কারণে আমাদের পরিবার ধ্বংস হলো। আমরা তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের শাস্তি দাবি করছি।
নিহত আমজাদের ভাতিজি জামাই আশরাফুল ইসলাম বলেন, ঈদে কুরবানি দিবেন সেটা গতকালই বলেছিলেন। বাড়িতে আসছিলেন কুরবানি ও স্বজনদের সাথে ঈদ আনন্দ উদযাপন করতে।
Advertisement
পুলিশ ও আমজাদের পরিবার জানায়, শেরপুর সদরের কামারচর গ্রামের মৃত মোনছের মণ্ডলের ছেলে ঠিকাদার আমজাদ মণ্ডল ঈদের ছুটিতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঢাকা থেকে শেরপুর যাচ্ছিলেন। তাদের বহনকৃত মাইক্রোবাসটি ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের করাতিপাড়া এলাকায় আসলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের পেছনে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে মাইক্রোবাসের সামনের অংশ দুমড়েমুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই আমজাদ মন্ডল ও তার দুই ছেলে মারা যান।
এ বিষয়ে বাসাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জালাল উদ্দিন বলেন, মরদেহ উদ্ধারের পর গোড়াই হাইওয়ে থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
গোড়াই হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির এসআই আনিসুর রহমান বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে চালকের অসাবধানতার কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। বিকেলে স্বজনদের কাছে তিনটি মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। মাইক্রোবাস ও ট্রাকটি আটক করে থানায় আনা হয়েছে।
আব্দুল্লাহ আল নোমান/এমএন/এএসএম