এইচএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র পরিবর্তনের প্রতিবাদে যশোর বোর্ড ঘেরাও করেছেন সাতক্ষীরা শালিখা ডিগ্রি কলেজের পরীক্ষার্থীরা।
Advertisement
বুধবার (৪ জুন) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত এই কর্মসূচি পালন করেন তারা। এসময় তারা বোর্ড চত্বরে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন এবং প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নেন। একপর্যায়ে ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন তারা।
পরীক্ষার্থীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে সাতক্ষীরা শালিখা ডিগ্রি কলেজের পরীক্ষার্থীরা সাড়ে তিন কিলোমিটারের দূরে আর কে বি কে হরিশ চন্দ্র স্কুল কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে আসছেন। এবার আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষায় যশোর বোর্ড হঠাৎ কেন্দ্রটি পরিবর্তন করে ২৬ কিলোমিটার দূরে কপিলমুনি কলেজে স্থানান্তর করেছে। একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে কেন্দ্র স্থানান্তর করায় বিপাকে পড়েছেন কলেজটির ২৪১ জন পরীক্ষার্থী।
পরীক্ষার্থীদের অভিযোগ, স্থানান্তর হওয়া কেন্দ্রটিতে যেতে হলে কপোতাক্ষ নদ পার হতে হবে। নদী পারাপার হওয়ার ক্ষেত্রেও ভালো নৌকা নেই। এছাড়া কাঁচা সড়কেও যোগাযোগ অবস্থা নাজুক। এমন পরিস্থিতিতে স্থানান্তর হওয়া কেন্দ্রটি পরিবর্তন করে আগের কেন্দ্র করার দাবি জানান তারা।
Advertisement
রিয়াদ আহম্মেদ নামের একজন পরীক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের সমস্যার বিষয়টি প্রথমে কলেজের শিক্ষকদের জানাই। পরে কয়েক শিক্ষক নিয়ে গতমাসে আমরা বোর্ডে আসি। বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ কর্মকর্তারা কেন্দ্র পরিবর্তন হবে না বলে জানান। একইসঙ্গে ওইদিন আমাদের স্যারদের অপমান করেন। তাই কলেজের শিক্ষকরা আমাদের সঙ্গে আর আসেননি। তাই আমরা আজ সকাল থেকে এখানে বিক্ষোভ-ঘেরাও কর্মসূচি করছি।’
বোর্ড চত্বরে পাঁচ ঘণ্টা অবস্থান শেষে বিকেলে নিজ কক্ষে আন্দোলনকারী পাঁচ শিক্ষার্থীকে ডেকে নেন বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোসাম্মৎ আসমা বেগম। আধাঘণ্টা পরে পাঁচ পরীক্ষার্থীকে নিয়ে নিচে আসেন বোর্ডের সচিব অধ্যাপক এস এম মাহবুবুল ইসলাম ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক আবদুল মতিন। এসময় শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য সচিব বলেন, ‘পরীক্ষা গ্রহণে অনুকূল পরিবেশ না থাকাতে কেন্দ্রটি পরিবর্তন করা হয়েছে। এখন আর কেন্দ্র পরিবর্তর করা সম্ভব নয়। যেহেতু শিক্ষার্থীরা পরিবর্তনের দাবি তুলেছে, তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পরীক্ষার্থীদের সুবিধার্থে কেন্দ্রে যাতায়াতের জন্য পরিবহনের ব্যবস্থা করা হবে।’
বোর্ড সংশ্লিষ্টদের আশ্বাসে এসময় শিক্ষার্থীদের বোর্ড চত্বর ত্যাগ করতে দেখা যায়।
এ বিষয়ে বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক আবদুল মতিন বলেন, ‘আন্দোলনকারীরা যে কলেজের, তারা আর কে বি কে হরিশ চন্দ্র স্কুল কলেজে পরীক্ষা দিতো। এটি মূলত কেন্দ্র না, এটি কেন্দ্রের ভেন্যু। যে কারণে এখানে নকল হওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। নকলের মচ্ছব চলতো। যে কারণে গত বছরে কেন্দ্রটির সচিবসহ কয়েক শিক্ষককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এখন ভেন্যু বাতিল করায় তাদের একটু দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। তাই তারা বিক্ষোভ করছে।’
Advertisement
এদিকে এ ঘটনায় সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে অসৎ আচরণ করেন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী কামাল হোসেনসহ দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা। সাংবাদিকদের পেশাগত কাজে বাধাও দেন বলে অভিযোগ করেন সাংবাদিকরা। বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও নেওয়ার সময় বোর্ড থেকে চলে যাওয়ার নির্দেশনা দেন উপসহকারী প্রকৌশলী কামাল হোসেন।
প্রকৌশলী কামালের এমন কার্যক্রমে ক্ষোভ প্রকাশ করেন উপস্থিত সাংবাদিকেরা। তবে বোর্ডের সচিব অধ্যাপক এস এম মাহবুবুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। এটা ভুল বোঝাবুঝি।’ প্রসঙ্গত, আগামী ২৬ জুন থেকে এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এতে যশোর বোর্ড থেকে এক লাখ ১৬ হাজার ৩১৭ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেবেন। গত বছরের চেয়ে এবার ছয় হাজার ১৯৪ পরীক্ষার্থী কমেছে। ২৪০টি কেন্দ্রে খুলনা বিভাগের ৫৭৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে এসব পরীক্ষার্থী অংশ নেবেন। এরমধ্যে ছয়টি নতুন কেন্দ্র করা হয়েছে।
মিলন রহমান/এসআর/জিকেএস