ঈদ, বিয়ে বা কোনো উৎসব-অনুষ্ঠানে মাংস খাওয়ার প্রবণতা অনেকটাই বেড়ে যায়। বিশেষ করে গরু বা খাসির মাংস বেশি পরিমাণে খাওয়া হলে অনেকেই হজমজনিত সমস্যা, বমি বমি ভাব, অ্যাসিডিটি বা পেট ফাঁপার মতো সমস্যায় পড়েন। এটি একেবারেই স্বাভাবিক, কারণ অতিরিক্ত প্রোটিন, বিশেষ করে লাল মাংস, হজম করতে শরীরের ওপর বাড়তি চাপ পড়ে। তবে কিছু সহজ উপায়ে এই অস্বস্তি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। আসুন জেনে নিই কী করবেন এই অবস্থায়-
Advertisement
মাংস হজমের জন্য শরীরের বেশি পানি প্রয়োজন হয়। তাই মাংস বেশি খাওয়ার পর পর্যাপ্ত পানি পান করা অত্যন্ত জরুরি। পানি হজম প্রক্রিয়াকে সচল রাখে এবং শরীর থেকে টক্সিন বের করে দিতে সাহায্য করে। চাইলে হালকা গরম পানি পান করতে পারেন, যা পেটের গ্যাস বা অস্বস্তি কমাতে কার্যকর।
২. হালকা হাঁটাহাঁটি করুনমাংস খাওয়ার পর পরই বিছানায় শুয়ে পড়া ঠিক নয়। এতে অ্যাসিড রিফ্লাক্স বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। বরং ১০-১৫ মিনিট হালকা হাঁটাহাঁটি করলে তা হজমে সহায়ক হয় এবং শরীরও কিছুটা চাঙা বোধ করে।
৩. হজম সহায়ক খাবার খানযদি পেট খুব ভারী মনে হয়, তবে পরবর্তী খাবারে হালকা কিছু রাখুন। ভাত বা রুটি, সঙ্গে পাতলা ডাল, টক দই কিংবা সিদ্ধ সবজি খেতে পারেন। ফলের মধ্যে পেঁপে, কলা বা কমলালেবু হজমে সাহায্য করে। তেল-মসলা বা চর্বিযুক্ত খাবার একেবারে এড়িয়ে চলুন।
Advertisement
রান্নার কিছু মসলা আছে, যেগুলো হজমে চমৎকার সাহায্য করে। যেমন, মৌরি চিবানো, এক গ্লাস গরম পানিতে লেবুর রস ও সামান্য লবণ মিশিয়ে খাওয়া কিংবা সামান্য জিরা ভেজে গুঁড়ো করে গরম পানিতে মিশিয়ে পান করা। এগুলো গ্যাস্ট্রিক ও অ্যাসিডিটি কমাতে কার্যকর।
৫. বিশ্রাম নিন, তবে শুয়ে পড়বেন নাখাবারের পর পরই ঘুমানো বা একেবারে শুয়ে পড়া উচিত নয়। চাইলে হেলান দিয়ে বসতে পারেন যাতে মাথা ও বুকের অংশ কিছুটা উঁচু থাকে। এতে খাবার পাকস্থলীতে সঠিকভাবে নামতে সাহায্য করে এবং অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সম্ভাবনাও কমে।
৬. প্রয়োজনে ওষুধ নিতে পারেনযদি পেটে বেশি গ্যাস বা অ্যাসিড হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টাসিড খাওয়া যেতে পারে। তবে নিয়মিত ওষুধের ওপর নির্ভর না করে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনাই ভালো।
৭. ভবিষ্যতের জন্য সচেতন থাকুনমাংস খাওয়া শরীরের জন্য দরকারি হলেও অতিরিক্ত খেলে বিপদ ডেকে আনতে পারে। বিশেষ করে যাদের হজমশক্তি দুর্বল, তাদের জন্য বেশি পরিমাণ চর্বিযুক্ত মাংস একেবারেই পরামর্শযোগ্য নয়। ভবিষ্যতে মাংস খাওয়ার সময় ছোট ছোট টুকরো করে ধীরে ধীরে চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। প্রয়োজনে সঙ্গে কিছু শাকসবজি, সালাদ বা লেবু রাখুন, এগুলো যা হজমে সাহায্য করে।
Advertisement
মাংস আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিনের একটি বড় উৎস। কিন্তু সব ভালো জিনিসই সীমার মধ্যে রাখলে তবেই উপকার পাওয়া যায়। অতিরিক্ত খাওয়া, বিশেষ করে একসঙ্গে অনেকটা খেলে, শরীরের হজম ক্ষমতার বাইরে চলে যায় এবং অসুস্থতা ডেকে আনে। তাই উৎসবে আনন্দ করুন ঠিকই, কিন্তু নিজের শরীরের কথাও ভাবুন। আর যদি কখনও একটু বেশি খেয়েই ফেলেন, তাহলে ওপরের নিয়মগুলো অনুসরণ করলেই দ্রুত সুস্থ বোধ করবেন।
তথ্যসূত্র: মায়ো ক্লিনিক, ওয়েব এমডি, হেলথ লাইন, ওএসএফ হেল্থ কেয়ার
সানজানা/এএমপি/এমএস