চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপকূলের বেড়িবাঁধের বিভিন্ন অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। কোনো কোনো অংশে বাঁধ রক্ষা ব্লক সরে গিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এতে আতঙ্কে রয়েছেন উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের দুই কিলোমিটার এলাকার মানুষ।
Advertisement
এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধের বিভিন্ন অংশ সংস্কারের জন্য প্রকল্প দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পাউবোর কর্মকর্তারা। তবে প্রায় আড়াই কিলোমিটার এলাকার উপকূলীয় ভূমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় সেখানে কোনোরকম বেড়িবাঁধ নির্মাণের উপায় নেই।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপকূলীয় উপজেলা সীতাকুণ্ডের সাগর পাড়ের মানুষ খুবই ঝুঁকি নিয়ে যুগ যুগ ধরে বসবাস করে আসছে। উপকূল রক্ষায় নির্মিত বেড়িবাঁধে ভাঙন, ব্লক সরে যাবার পাশাপাশি অনেক স্থানে উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী উজাড়ের ফলে এ ঝুঁকি ক্রমশ বাড়ছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা জানান, সমগ্র উপজেলাটি উপকূলে হলেও এ উপজেলার ফৌজদারহাট থেকে বার আউলিয়া পর্যন্ত উপকূল জুড়ে জাহাজ ভাঙা শিল্প গড়ে ওঠায় সেসব অংশে কোনো বেড়িবাঁধের প্রয়োজনীয়তা নেই। কিন্তু বারআউলিয়ার পর ঘোড়ামরা থেকে শুরু করে সৈয়দপুর পর্যন্ত ১৯ কিলোমিটার এলাকায় বাঁধ জরুরি। এর মধ্যেও কুমিরা, বাঁশবাড়িয়ায় কয়েকটি শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড, সন্দ্বীপ যাবার ঘাটসহ নানান স্থাপনার কারণে সেসব অংশেও বেড়িবাঁধ ছাড়াই উপকূল রক্ষা পাচ্ছে। কিন্তু যেসব অংশে কোন স্থাপনা নেই সেখানে প্রতি বর্ষা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে লোকালয়।
Advertisement
সরেজমিনে উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের ঘোড়ামরা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, এখানে পাশাপাশি দুটি ইউনিয়নে অন্তত চার কিলোমিটার এলাকায় কোনো বেড়িবাঁধ নেই। ফলে জোয়ারের সময়ও সাগরের পানি দ্রুত প্রবেশ করছে লোকালয়ে।
সোনাইছড়ির ঘোড়ামরার এলাকার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, বারবার কর্তৃপক্ষের কাছে ধর্না দিয়েও এখানে কোনোরকম বেড়িবাঁধ নির্মাণ করানো সম্ভব হয়নি। ফলে বর্ষাকালে তাদের দুর্ভোগের শেষ থাকে না।
আশপাশে বাঁধ থাকলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড কিংবা জনপ্রতিনিধিরা এখানে বাঁধ নির্মাণে কোনো পদক্ষেপ নেননি। এখানে শত শত পরিবার বর্ষা এলে আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটান। এভাবে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় বেড়িবাঁধ নেই কুমিরা ইউনিয়নেও।
কুমিরা এলাকার বাসিন্দা ফজলুল রহমান জাগো নিউজকে জানান, উপকূলে নতুন করে বাঁধ নির্মাণ করে তা রক্ষায় কোটি কোটি টাকার ব্লক বসানো হলেও অনেক স্থানে ব্লক সরে গিয়ে বাঁধে গর্ত সৃষ্টি হতে দেখা গেছে। আসন্ন বর্ষায় সাগরের উত্তাল ঢেউয়ে এসব গর্ত বড় হয়ে বাঁধকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলবে বলে স্থানীয়দের আশঙ্কা। একইভাবে বাড়বকুণ্ড, মুরাদপুর, সৈয়দপুর বিভিন্ন ইউনিয়নের উপকূলেও বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে জনজীবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
Advertisement
এদিকে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী প্রশান্ত তালুকদার জাগো নিউজকে বলেন, ঘোড়ামরার আড়াই কিলোমিটার এলাকা অধিগ্রহণ না হওয়ায় তা ব্যক্তি মালিকানাধীন রয়ে গেছে। এ কারণে বাঁধ নির্মাণ করা যায়নি। এখানে কিছুই করার নেই। এছাড়া অন্যত্র ভাঙা বাঁধ প্রয়োজন মতো সংস্কার হয়। মিরসরাই সীমান্ত থেকে সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া-কুমিরা পর্যন্ত বাঁধ এলাকাকে দুটি ভাগে ভাগ করে প্রায় ১৮ কিলোমিটার এলাকার জন্য দুটি প্রজেক্ট দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সেগুলোর কাজ শুরু হলে সমস্যা সমাধান হবে আশা করছি।
এম মাঈন উদ্দিন/আরএইচ/এমএস